মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না...

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না...

বন্যায় দেশ ভাসছে, মানবতা কাঁদছে। বিপদের সময় সবাই প্রিয়জনকে কাছে পেতে চায়। মানুষের সে যে কি অবর্ণনীয় কষ্ট, ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব না। ভুক্তভোগীরাও তাদের কষ্ট তুলে ধরতে পারবে না। আমরা কষ্ট পাই, কিন্তু সেই কষ্ট অনেকেই যথাযথ প্রকাশ করতে পারি না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কষ্টের মধ্যে থেকে কষ্ট জয় করেছেন। কিন্তু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কোনো কষ্ট করেননি, আর্থিক কষ্ট তো নয়ই। তার পরও মানুষের দুঃখকষ্টের যে বয়ান তিনি দিয়েছেন পৃথিবীর আর কেউ অমনটা পারেনি। বানভাসিরা কেউ তো আর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ নন যে নিজের দুঃখকষ্ট-যন্ত্রণার কথা তার মতো করে বলতে পারবে। বানভাসি মানুষের দুঃখকষ্ট বলার ক্ষমতাও নেই। তবু বিপদের সময় সবাই প্রিয়জনকে কাছে চায়। সেই অর্থে বানভাসিরা স্বাভাবিকভাবেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্য পেতে উদগ্রীব। ঠিক বুঝতে পারছি না, নতুন নতুন নেতা তাদের নামধামও জানি না। তারা বেশ তারস্বরে বলে চলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে থাকলেও সব সময় বন্যা পরিস্থিতির খবর রাখছেন এবং নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। দেবেনই তো। এটাই তো স্বাভাবিক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘুম পাড়তে যুক্তরাজ্যে যাননি। তিনি গেছেন চোখের অপারেশন করাতে। তিনি সব সময় দেশের কথা ভাবছেন, প্রতি মুহূর্তে দেশের খবর রাখছেন এটা কাউকে বলে দিতে হবে না। তার পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সময় বানভাসি মানুষের পাশে থাকলে তাদের চোখ জুড়াত, বুকে বল-ভরসা পেত। এটা কোনো নেতার গলা ফাটানো চিৎকারে পূরণ হবে না। বন্যাকবলিত মানুষ সব সময় বন্যার হুমকিতে থাকে। সেটা তারা মোকাবিলাও করে। বন্যার সঙ্গে লড়াই করেই তাদের জীবনÑ এ থেকে তাদের মুক্তি নেই। তবু কিছু কিছু সময় নেতানেত্রীদের অবিস্মরণীয় কর্মকা- মানুষের বুকে দাগ কাটে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রিয় শাসক ছিলেন না, ছিলেন স্বৈরশাসক। তার পরও বন্যার্তদের কাছে বুকপানিতে নেমেছিলেন। এরশাদের বুকপানিতে নামার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তিনি কোনো নৌযানে বন্যাদুর্গতদের দেখছিলেন। সেখান থেকে পানিতে নামার কী প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তিনি নেমেছিলেন। তার সেই বুকপানিতে নামা মানুষের মনে ভীষণ রেখাপাত করেছিল, আনন্দে বুক ভরে গিয়েছিল। সরকারপ্রধান বুকপানিতে তাদের পাশেÑ এটা এক মহাবল। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান খেতের আইলে বসে পান্তা খেয়েছিলেন। সেটা তার সময় অনেক মানুষকে আলোড়িত করেছিল। বঙ্গবন্ধু কত সময় কতজনের বাড়িতে খেয়েছেন সেটা তেমন রেখাপাত করেনি। কারণ বঙ্গবন্ধু তো মানুষেরই মানুষ, সাধারণের প্রিয়জন। মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকে আমি যারতার বাড়িতে খাই। বাংলাদেশের কোনো মা-বোন নেই যে খেতে চাইলে ফিরিয়ে দেয়। এখন না হয় নামকাম হয়েছে। কিন্তু যখন ছোট ছিলাম অপরিচিত ছিলাম তখন আমার সহকর্মীরা, নেতারা সভা-সমিতি, মিছিল করতে গিয়ে না খেয়ে থেকেছে। কিন্তু আমি যারতার বাড়িতে খাবার খেয়েছি, ক্ষুধা মিটিয়েছি। এখনো মনে পড়ে ’৬৯-এ ঘাটাইলের দেওপাড়ায় এক সভায় গিয়েছিলাম। শামসুর রহমান খান শাজাহান, বদিউজ্জামান খান, বাছেত সিদ্দিকী আরও কে কে যেন গিয়েছিলেন। সেই সভায় দলবল নিয়ে আমিও গিয়েছিলাম। হাত-পা ছুড়ে বক্তৃতা করেছিলাম। কিন্তু খালি পেটে ৫ মাইল পায়ে হেঁটে ফিরতে একেবারে জেরবার। একে তো পেটের জ্বালা, তার ওপর পা চলে না। ৭-সাড়ে ৭টার দিকে কস্তূরীপাড়ার কাছে দেওলা খেয়াঘাটে পাটনীদের ঘরে উঁকি মেরে দেখি ভাত-ডাল-আলু ভর্তা। ভাতের ভুরকা থেকে খোরা সরাতেই ঝকঝকে ভাত দেখে চমকে গিয়েছিলাম। অনেক বউ-ই অত সুন্দর ভাত রাঁধতে পারে না। পাটনীদের চার-পাঁচ জনের ভাত আমরা ১০-১২ জনে খেয়েছিলাম। তাও অর্ধেকটা খেতে পারিনি। ডাল আর ভর্তা সবাই করে, কিন্তু অত সুস্বাদু ডাল, অত চমৎকার ভর্তা অনেকেই করতে পারে না। এখনো কত বাড়িঘরের সামনে-পেছনে গাছের নিচে এ-বাড়ি-ও-বাড়ির খাবার খাই। সে যে কি মজাদার খাবার, যে খায়নি সে বুঝবে না। আগে তবু একটা অসুবিধা ছিল, ধনী বাড়ির ভাত একরকম, গরিব বাড়ির অন্যরকম। কিন্তু এখন ভাত-ডাল-মাছ-মাংস, তরিতরকারি সব এক। রান্নার ধরন-ধারণও এক। ছয় মাসও হয়নি, কোথায় এক গাছের নিচে না-হলেও ত্রিশ বাড়ির তরিতরকারি দিয়ে খাবার খেয়েছি। আমি কখনো খুব বেশি খেতে পারি না। তাই বহু বাড়ির ছেলেমেয়ে-বউয়েরা যখন খাবার নিয়ে আসে তখন অনেক সময় বিপদে পড়ি। চাখতে গিয়েই জীবন শেষ। কর্মীরা প্রশিক্ষিত। কোনোখানে বসলে তাদের কারও বাড়ি থেকে খাবার আনতে খুব একটা কষ্ট হয় না। প্রথম প্রথম খাবার চাইলে দু-এক জন অবাক হয়। কেউ কেউ বলে, আমাদের গরিব বাড়ির খাবার কাদের সিদ্দিকী খাবেন? কিন্তু একটু পরে যখন দেখে কোনো গাছের নিচে বসে কাদের সিদ্দিকী অবলীলায় খেয়ে চলেছে তখন কত মেয়ে-বউ খাবার নিয়ে ছুটে আসে। কিন্তু আমাদের খাওয়ায় ওভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। আমাকে যারা চেনে তারা জানে কাদের সিদ্দিকীর খাওয়া নিয়ে কোনো বাহানা নেই। কিন্তু এরশাদের গলাপানিতে নামা, জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের খেতের আইলে বসে পান্তা খাওয়ার প্রচন্ড প্রভাব পড়ে। কারণ, তারা সাধারণ মানুষের আপন ছিলেন না। তারা ছিলেন সামরিক শাসক। সরকারের প্রধান, তাদের পাশে পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ অভিভূত হয়। তাই এই দুঃসময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে থাকলে নৌযানে অথবা হেলিকপ্টারে দুর্গত এলাকায় ঘুরলে মানুষ সান্ত্বনা পেত, তাদের মনোবল বৃদ্ধি পেত।

সে যাক, যা হয়নি তা নিয়ে রোদন করে লাভ কী। ডেঙ্গুতে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি। ডেঙ্গুর সে যে কি জ্বালা যার হয়েছে সে বুঝেছে, যার হয়নি শত চেষ্টা করেও সে বুঝবে না বা কাউকে বোঝানো যাবে না। হাই কোর্টকে নির্দেশ দিতে হচ্ছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। অথচ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। আরও কঠিন ব্যাপার, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ডাক্তাররাও মারা যাচ্ছেন। যারা চিকিৎসা করবেন তারাই যদি মারা যান তাহলে কেমন হয়! আওয়ামী লীগ নেত্রীও কয়েকবার বলেছেন, সাপের কামড়েই সাপের ওঝা মরে। তবে কি রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তার মরছেন? ঠিক বুঝতে পারছি না। ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। শুধু যে সরকার সবকিছু করতে পারে না এটা তার প্রমাণ। সব মানুষকেই বন্যা প্রতিরোধে যেমন ডেঙ্গু প্রতিরোধেও তেমন ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তা না হলে আমাদের আগামী দিন খুবই কষ্টের হবে।

বেশ কিছুদিন ছটফট করছি, কোনো কিছুতেই মন বসছে না। বরগুনার রিফাত হত্যা সরকারি দলের কিছু মানুষের বাড়াবাড়ির মারাত্মক ফল। এখন তো সবার কাছে স্পষ্ট, নয়ন বন্ড ক্ষমতাবানদের সৃষ্টি। এসপির ইনফরমার, খবরদাতা সে তো এটাওটা করবেই। কিছুদিন আগেও ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে নিয়ে সন্দেহ ছিল। তার ছেলে সুনাম দেবনাথ শম্ভু, তার সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিন্তু এখন দেখছি সরকারি দল আওয়ামী লীগকে ডোবানোর জন্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু আর তার যোগ্য সন্তান দুর্নাম নাথ শম্ভু দুজনই যথেষ্ট। হয়তো এখনই দুর্নাম নাথের কর্মকান্ডের সবকিছু চোখে পড়বে না। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই দেখা যাবে। এ জগতে যা কিছুই হোক সৃষ্টিতে স্রষ্টা আছেন, তাঁর বিচার আছে। তা থেকে কারও মুক্তি নেই। ষড়যন্ত্র করে মিন্নিকে জড়াতে অথবা রিফাত হত্যার মোড় ঘোরাতে অসত্যকে সত্য বানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু তাতে সব ক্ষেত্রে পার পাওয়া যাবে না। একসময় ঠেকতেই হবে, দশ দিন চোরের এক দিন সাউদের- এ প্রবাদের হাত থেকে কারও মুক্তি নেই। আমার এসব নিয়ে কোনো ভাবনা বা দুর্ভাবনা নেই। আমার দুর্ভাবনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে। তাকে নিঃস্ব-রিক্ত অপ্রিয় করতে চারদিক থেকে যে সবাই উঠেপড়ে লেগেছে তা তিনি বুঝতে পারছেন কিনা। আর বুঝতে পারলেও তিনি এখন যেখানে পৌঁছেছেন সেখান থেকে বেশি কিছু করার আছে কিনা বুঝতে পারছি না।

এক মন্ত্রী বেশ কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের বেশুমার হাততালি পাচ্ছেন। তিনি গলা ফুলিয়ে বার বার বলছেন, খালেদা জিয়া জিয়া হত্যার বেনিফিশিয়ারি। হ্যাঁ, এটা সত্য, জিয়াউর রহমান বীরউত্তম নিহত হওয়ায় বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসেছিলেন। বার বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সর্বেসর্বা। কিন্তু জিয়া হত্যার সঙ্গে খালেদা জিয়া জড়িত ছিলেন না। আজ খালেদা জিয়াকে দেখে মনে হতে পারে তিনি লাভবান হয়েছেন, অনেক বড় নেতা হয়েছেন। কিন্তু যেদিন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে জিয়া হত্যার খবর এসেছিল সেদিনের কষ্ট সেদিনের যন্ত্রণা সেটাও তো বুঝতে হবে। কি নিদারুণ কষ্ট করে তারা এ পর্যন্ত এসেছেন। তারেক রহমানের দুর্বিনীত হওয়া, কোকোর আকস্মিক মৃত্যু এসবই তো জিয়াউর রহমানের হঠাৎ নিহত হওয়ার ফল। অন্যকে আঘাত দেওয়ার জন্যই শুধু বলতে হবে- এমনটা ভালো নয়। মানুষকে নাহক ব্যথা দিলে একদিন না একদিন সে ব্যথা নিজেকেও পেতে হয়। খালেদা জিয়া জিয়া হত্যার সুবিধাভোগী- এ কথা বললে আওয়ামী লীগাররা খুশি হলেও বিএনপিরা তো খুশি হবে না। তারা তো আমার বোনের সম্পর্কে একই কথা বলতে পারে। কিন্তু আমি তো দেখেছি, আমার বোনের সেদিনের সে কি নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণা, জয়-পুতুলের কান্না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা হেসেখেলে তো আজকের অবস্থায় আসেননি। তাকে বরং নিদারুণ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এ জগতে এমন বহু মা-বাবা আছেন যারা সন্তানের জন্য জীবন দিতে পারেন, আবার এমন সন্তানও আছে যারা মা-বাবার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়। আমি আমার দেশমাতা দেশপিতার জন্য জীবন দিতে পারিনি। কিন্তু রক্ত দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিকার প্রতিবাদে যৌবন খুইয়েছি। তাই মাননীয় মন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে ওভাবে না বললেও পারতেন। আমি দিল্লিতে আমার বোনের নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণা দেখেছি। আর কেউ না হোক শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা সারা পৃথিবী পেয়েও বাবাকে হারাতে চাইতেন না। তাহলে কেন এমন নোংরা কথা? মনে রাখবেন, চিত হয়ে থুথু ছুড়লে তা বুকেই পড়ে। সরকার এবং আওয়ামী লীগই পারে রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে। আর এসব ফিরিয়ে আনতে পারলে আওয়ামী লীগের চাইতে লাভ আর কারও হবে না। কিন্তু জাতীয় সুস্থিতি ও ভারসাম্য ফিরে না এলে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের চাইতে লক্ষ গুণ বেশি আওয়ামী লীগের ক্ষতি হবে এবং হচ্ছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, এসব লাগামহীনের লাগাম টেনে ধরুন।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেছেন। তার সব কথা যেমন সত্য নয়, তেমন সব কথা মিথ্যাও নয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ ভারতে গিয়ে না থাকুক ২ কোটি ৭০ লাখ গেছে। ২ কোটি ৭০ লাখ না হোক ১ কোটি ৭০ লাখ তো গেছে। কিন্তু এটা সত্য, নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করে বহু হিন্দু ভারতে গেছে। পাকিস্তান আমলে দেশত্যাগের দায় আমরা না হয় নাই নিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টির পর এখন তো এটা হিন্দু-মুসলমানের দেশ নয়, বৌদ্ধ-খ্রিস্টানেরও নয়। এটা এখন মানবের দেশ, মানবতার দেশ, স্বাধীনতা আর ভালোবাসার দেশ। আজ কেন যাবে? রাষ্ট্রীয়ভাবে সব মানুষ সমান। তাহলে কেন গেল? একজন দুজন চাকরি-বাকরি বা ধর্মীয় কারণে যেত সেটা নিয়ে কথা ছিল না। কিন্তু অনেক মানুষ কেন যাবে? নির্যাতনের শিকার হয়ে কেন যাবে? এটা তো সত্য, প্রিয়া সাহার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রদায় নিয়ে নির্যাতন হোক আর একার ওপর হোক নির্যাতন তো পাপ, অন্যায়। তা কেন হবে? কি অবাক কান্ড! কারও কোনো মর্যাদাবোধ নেই। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহা অভিযোগ করার পরপর সবাই কেমন যেন জ্বলে ওঠে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হবে, জেল হবে, ফাঁসি হবে, প্রিয়া সাহাকে টুকরো টুকরো করা হবে। নানা জায়গায় মামলা-মোকদ্দমা শুরু হয়ে গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেই বললেন, প্রিয়া সাহার ব্যাপারে অতি উৎসাহ ভালো নয়। সবাই চুপ। মামলা খারিজ। মন্ত্রীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এক দাঁতের বুদ্ধি যদি রাখতেন তাহলে তারা অমন নাজেহাল হতেন না। যারা ফালাফালি করছিলেন তাদের মানসম্মান কোথায় গেল একবার কি কেউ ভেবে দেখেছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এখন বিরোধী দলের নেতা থাকতেন আর আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দেখা হতো তাহলে কী করতেন- সরকার সম্পর্কে তো একই কথা বলতেন। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যদি ট্রাম্পের দেখা হতো তাহলে বেগম খালেদা জিয়া কী বলতেন- প্রিয়া সাহা যা বলেছেন সে ধরনেরই বলতেন। তাই প্রধানমন্ত্রী যথার্থ বলেছেন, অতিরিক্ত উৎসাহী হওয়ার কোনো কারণ নেই। ধৈর্য ধরা শিখতে হবে। তিনি যথার্থই বলেছেন। একেই বলে নেতা, একেই বলে নেতৃত্ব।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর