একাত্তরের আগস্ট মাসের শেষের দিকে ক্যাম্পে খবর এলো আমাদের গ্রামের ছালাম মোল্লা (ছদ্মনাম) রাজাকার হয়েছে। শুনলাম সে লুঙ্গির ওপর একটা খাকি শার্ট এবং হাতে একটি লাঠি নিয়ে শহর থেকে প্রায় দিনই গ্রামে আসে। বাড়ি বাড়ি ঘোরাফেরা করে। পাকিস্তানি মিলিটারির উচ্চ প্রশংসাসহ নানা কথা বলে মানুষকে ভয়ভীতি দেখায়। গৃহস্থের পোষা মোরগ-মুরগি, কখনো ডিম এবং গাছের লাউ, কুমড়াটা নিয়ে যায়। বলে, এগুলো মিলিটারি ক্যাম্পে দিতে হবে, না হলে যে কোনো সময় মিলিটারি চলে এলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। যুবতী মেয়ে-বধূদের ইঙ্গিত করে কুরুচিপূর্ণ কথা বলত। পাকিস্তানি সেনারা আশপাশের গ্রাম থেকে নারীদের ক্যাম্পে ধরে এনে কী ধরনের নির্যাতন চালায় তার ভয়ার্ত বর্ণনা সবাইকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শোনাত, যাতে সবার মনে ভয় ও ত্রাসের সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ যে যা পারে ছালাম রাজাকারকে দিয়ে দিত। এক দিন শুনি, এক গৃহস্থের একটি গরু এবং আরেকজনের একটি ছাগল মিলিটারি ক্যাম্পে লাগবে বলে ভয় দেখিয়ে নিয়ে যায়। এরকম অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে ক্যাম্পে খবর আসতে থাকে। গ্রামের মানুষ ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। এক দিন বিকালে ক্যাম্পে খবর এলো আজ রাতে ছালাম রাজাকার বাড়িতে থাকবে। কমান্ডার ছয়জনের ছোট একটা টিম গঠন করলেন। আজ রাতেই ছালাম মোল্লার বাড়িতে অপারেশন হবে। কিন্তু সন্ধ্যার পর তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল সে বিকালেই শহরে চলে গেছে। কিন্তু তার পরিবারের লোকজন আছে। কমান্ডার বললেন, আজকে ছালাম মোল্লাকে পেলে একটা বিহিত করতাম। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা কোনো অপরাধ করেনি। সুতরাং তাদের কোনো ক্ষতি করা যাবে না। ছালাম রাজাকারের বাবা ও ভাইকে কমান্ডার স্পষ্ট করে বলে দিলেন, ছালাম গ্রামের মানুষের ওপর যে অত্যাচার করছে সেটি যদি বন্ধ না হয় তাহলে আমরা কিন্তু তোমাদের কাউকেই ছেড়ে দেব না। এ খবর পরিবারের সদস্যরা ছালামকে কীভাবে দিয়েছে তা জানা না গেলেও পরবর্তীতে ১৬ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত ছালামকে আর গ্রামে আসতে দেখা যায়নি। এ ঘটনার কিছুদিন পর জানতে পারলাম রোকন (ছদ্মনাম) নামের এক রাজাকার কমান্ডার শহর থেকে প্রায় পাঁচ-ছয় মাইল দূরে তার নিজ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা এসেছেন বলে পাকিস্তানি মিলিটারিদের নিয়ে যায়। কিন্তু সেটা ছিল মিথ্যা তথ্য। ওই গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা কখনোই যাননি। এক দিন ভোর রাতে মিলিটারিরা গিয়ে ওই গ্রাম ঘেরাও করে। রোকন রাজাকার দুই-তিনটি বাড়ি দেখিয়ে বলে এরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয় এবং খাবার দেয়। সুতরাং যা হওয়ার সেটাই হলো। পাকিস্তানি সেনারা ওই তিনটি বাড়িতেই আগুন দেয় এবং নির্বিচারে গুলি চালায়। তাতে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
মানুষ ঘুম থেকে উঠে যে যেদিক পারে দৌড়াতে থাকে। তিনটি বাড়িই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। চারজন মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে একজন নারী এবং একটি ছোট শিশুও ছিল। যাবার সময় দুজন যুবতীকে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে যায়, যাদের আর কোনো দিন ফিরতে দেখা যায়নি। কিছুদিন পর রোকন কমান্ডার অস্ত্রশস্ত্রসহ কয়েকজন রাজাকারকে নিয়ে গ্রামে আসে। মানুষকে জোড়া করে পান চিবাতে চিবাতে বত্রিশ দাঁত বের করে বিকৃত হাসি দিয়ে বলে, ও! মিয়ারা আমি তোমাদের বলি নাই, এসব বাংলাদেশ ফাংলাদেশ কিছুই হবে না। পাকিস্তান আর্মি হলো গিয়ে দুনিয়ার সেরা আর্মি। হিন্দু ভারতের লেলিয়ে দেওয়া কয়েকজন সন্ত্রাসী আল্লাহর ঘর পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। ভালো করে শুনে রাখ মিয়ারা, কারও মুখে যদি বাংলাদেশ, জয় বাংলা শোনা যায়, তাহলে তাদের বংশের বাতি বলতে কিছু থাকবে না। আর সেদিন দেখলেই তো পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি যুবতী নারীদের খুব পছন্দ করে। তবে ওই ঘটনার পর রোকন রাজাকারকে গ্রামে আসতে খুব কমই দেখা গেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে মুক্তিযোদ্ধাদের এক অপারেশনে কমান্ডার রোকনসহ আরও ১০ জন রাজাকার নিহত হয়। উল্লিখিত দুটি ঘটনা তখন সংঘটিত সামগ্রিক ঘটনার প্রতীকী বর্ণনা মাত্র। দেশব্যাপী এরকম এবং এর চেয়েও বীভৎস ভয়াবহ হাজার হাজার ঘটনা ঘটিয়েছে। আজকের বাংলাদেশের মতো একাত্তরে প্রতিটি গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যন্ত রাস্তাঘাট ছিল না। জামায়াত, রাজাকার, মুসলিম লীগের লোকজন যদি গাইড করে না নিয়ে যেত, তাহলে পাকিস্তান আর্মি ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা, সীমাহীন ধ্বংসযজ্ঞ ও ৪ লাখ নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতে পারত না। সুতরাং একাত্তরের সব অপকর্মের জন্য পাকিস্তানি সেনাদের চেয়ে ওইসব রাজাকার অনেক বেশি দায়ী। রাজাকারদের মডেল ছিল তখন ইয়াহিয়া খান। সুযোগ পেলেই তারা বলত, ইয়াহিয়া খান আল্লাহর ঘর পাকিস্তান এবং ইসলাম রক্ষা করছেন। এই ইয়াহিয়া খান একাত্তরের মার্চ মাসে ঢাকার বঙ্গভবনে রাজনৈতিক সংলাপ শুরুর প্রাক্কালে বিকৃত হাসিতে মদের গ্লাস হাতে নিয়ে বলেছিলেন, আসুন শেখ মুজিব আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলাম রক্ষা করি। (সূত্র : হুসেন হাক্কানী, পাকিস্তান বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি, পৃ-৭৫)। এ কারণেই একাত্তরে শিল্পী কামরুল হাসান ইয়াহিয়া খানের বিকৃত হাসির সেই হিংস্র ছবিটি এঁকেছিলেন, যার নিচে লেখা ছিল, ‘এই জানোয়ারদের নির্মূল করুন।’ ইয়াহিয়া খান ও রোকন রাজাকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। তারপর এলো একাত্তরের ডিসেম্বর, যার জন্য রাজাকাররা ও তাদের প্রভু পাকিস্তান আর্মি মোটেই প্রস্তুত ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের ধাওয়া খেয়ে পাকিস্তানি সেনারা নিজেদের ক্যাম্প ছেড়ে কেউ ঢাকার দিকে, আবার কেউ খুলনার দিকে পালাতে থাকে। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের মানুষ তখন দেখেছে, পাকিস্তানিদের ট্রাকে-গাড়িতে রাজাকাররা একসঙ্গে পালাতে চাইলে পাকিস্তানি সেনারা তাদের লাথি মেরে ট্রাক থেকে ফেলে দিয়েছে। সঙ্গে গালি দিয়েছে এই বলে, এরা গাদ্দার, নিজেদের জাতির সঙ্গে যারা বেইমানি করতে পারে তারা পাকিস্তানে গেলে এর চেয়েও বড় ধরনের বেইমানি করবে। ১৬ ডিসেম্বরের পর মুক্তিযোদ্ধারা ইচ্ছা করলে এদের শেকড়সহ সব শেষ করে দিতে পারতেন। কিন্তু প্রকৃত বিজয়ী বীরেরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ নয়, বীরের মহত্ত্ব দেখায়। মুক্তিযোদ্ধারা সেটাই করেছেন। ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও সরাসরি হত্যায় জড়িত এই চার প্রকারের পাকিস্তানি সহযোগীদের বাদ দিয়ে বাকি সবার জন্য বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর উদারতা ও মানবতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। ওই চার অভিযোগে অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার রাজাকার, জামায়াত, মুসলিম লীগসহ অন্যান্য পাকিস্তান সহযোগীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দালাল আইনে শুরু হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সবাইকে মুক্ত করেন এবং দালাল আইন বাতিল করে দেন। সব রাজাকার গর্ত থেকে বেরিয়ে আবার সেই পুরনো একাত্তরের মতো হুমকি দেওয়া শুরু করে। বিচার থেকে রক্ষা শুধু নয়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দুই সামরিক শাসক এদের রাজনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনসহ সব শ্রেণি-পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং সব সুযোগ করে দেন। রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হন। এভাবেই মন্ত্রী, এমপি, স্পিকার, রাষ্ট্রপতি হয়ে যান পাকিস্তানের সহযোগী ও রাজাকাররা। শাহ আজিজ, আবদুল আলিম, মাওলানা মান্নান গং মন্ত্রী হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কী করেছে তা আজ আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় না। একাত্তরের গণহত্যা ও নারী ধর্ষণের বড় পরিকল্পনাকারীদের একজন জামায়াতপ্রধান গোলাম আযম জিয়াউর রহমানের হাত ধরে পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার আশীর্বাদে নতুন করে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যান। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ২১ বছর একটানা রাষ্ট্রক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনসহ বিশাল বিশাল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, করপোরেট হাউস, শিল্প-কারখানা, হাসপাতালসহ বড় বড় ব্যাংকের মালিক হয়ে যায় রাজাকাররা। দুই সামরিক শাসক বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তানি স্টাইলের রাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তির বিস্তৃতির জন্য প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করেন। যার মাধ্যমে গ্রামগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যান হয় এই রাজাকার গোষ্ঠী। এই লেখার শুরুতে উল্লিখিত সেই ছালাম রাজাকার আশির দশকের শুরুতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়ে যায়। শুনেছি চেয়ারম্যান হওয়ার পর গ্রামের মানুষ কোনো কাজে তার কাছে গেলে বিকৃত হাসি দিয়ে বলত, ও! মিয়ারা তোমাদের বলি নাই। ওসব জয় বাংলা টয় বাংলা দিয়ে কিছু হবে না। এখন আমরাই সবকিছু করব, আর তোমরা পেছনে পেছনে ঘুরবা। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা কথাগুলো উচ্চারণ করার সাহস মানুষ হারিয়ে ফেলে। সবচেয়ে বড় সংকট ছিল, জিয়াউর রহমান বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তার সঙ্গে আরও স্বল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা যুক্ত হন। ফলে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা দিশাহারা হয়ে পড়েন।
জিয়াউর রহমানের সাড়ে পাঁচ বছরের শাসনামলে প্রায় দুই ডজনের মতো সামরিক অভ্যুত্থানের নাটক মঞ্চস্থ হয় এবং তার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী থেকে কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিচ্যুত এবং ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। দ্বিতীয় সামরিক শাসক এরশাদও তাঁর পূর্বসূরির পথ অনুসরণ করেন। জিয়া হত্যাকান্ডের অজুহাতে প্রহসনের সামরিক আদালতের মাধ্যমে চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৮১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দন্ড কার্যকর করা হয়। যার মধ্যে কয়েকজন ৩০ মে জিয়া হত্যাকান্ডের সময় চট্টগ্রামে উপস্থিতই ছিলেন না। এ ঘটনার পরপরই এক আদেশে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বলা হয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে এদের বিশ্বাস করা যায় না। হায়রে আমার দেশ! যারা জীবনবাজি রেখে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করল, মাত্র কয়েক বছরের মাথায় বদনাম দিয়ে তাদের মুখে কালিমা লেপন করা হলো এই বলে যে, দেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে এদের বিশ্বাস করা যায় না। বিশ্বাস করা হলো ওই সব রাজাকারকে, যারা একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্ম ঠেকাতে এমন কিছু নেই যা করেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সর্বত্যাগী সংগ্রামের মহিমা ও ৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতির বিশাল ও সহজাত শক্তির বলে দেখা যায়, পৃথিবীতে যে উদাহরণ নেই সেটাই বাংলাদেশে ঘটেছে। সামরিক অভ্যুত্থান ও সামরিকতন্ত্রের রাজনীতির মধ্যে থাকা সব পেশিশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আবার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, দর্শন ও মূল্যবোধ ফিরে এসেছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক বিস্ময়কর অর্জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার নীতি অনুসরণ করেছেন। সুবিশাল জনম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জাতির কপাল থেকে খুনি রাষ্ট্রর কালিমা দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের রাষ্ট্রীয় আইনের সব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতীকী হিসেবে শুধু মশহুর কয়েকজন চিহ্নিত ও আত্মস্বীকৃত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজে সমর্থন জুগিয়েছেন, বিচার করেছেন আদালত। সাধারণ রাজাকার ও পাকিস্তানি সহযোগী এবং তাদের নতুন প্রজন্মের জন্য কখনো কোনো বিরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তারপরও একাত্তরের ওই পাকিস্তানি সহযোগী রাজাকার সম্প্রদায় তাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা করেছে, যার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে যা ঘটেছে তা একেবারেই অনভিপ্রেত। যেটাই ঘটে তার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের মৌলিক কথা। কিন্তু কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সারা দেশে একযোগে যখন স্লোগান দেয়, আমি কে, তুমি কে /রাজাকার / রাজাকার এবং তার মধ্য দিয়ে রাজাকারকে গৌরবান্বিত এবং নিজেদের রাজাকার পরিচয়ে গর্ববোধ করে, তখন মন অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে যায়। বুকভরা বেদনার মধ্যে একাত্তরের সেই রাজাকারের মুখটাই কেবল বারবার সামনে আসতে থাকে।
লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক