দেখতে দেখতে ২০২৪ সালের আগস্টও পেরিয়ে গেল। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে এই মাস আমার জন্য, বাঙালি জাতির জন্য মারাত্মক দুর্ভাগ্যের মাস, বেদনার মাস, অবক্ষয়ের মাস। কিন্তু ২০২৪-এর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে এই মাসকেই আবার অনেকে এক মহাবিজয়ের মাস বলে অভিহিত করছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন একেবারে যে সে কথা নয়, ফেলে দেওয়ার কথা নয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা যদি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ আরও কিছু স্থাপনা রক্ষা করতে পারত তাহলে তারা সত্যিই ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের দাবিদার হতে পারত। প্রশ্ন আসতেই পারে, শেখ হাসিনার পতনে আমি খুশি, না বেজার। এটা খুবই সত্য যে, আমি শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা পছন্দ করিনি। সেজন্য আমি একটা রাজনৈতিক দল করে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা যতবার বলেছেন, আমি ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার কায়েম করেছি। তার হয় বোধ বিবেচনার অভাব ছিল অথবা জেনেশুনে অসত্য বলেছেন কিংবা গণতন্ত্র কাকে বলে তাই তিনি জানেন না বা জানতেন না। ’৭১-এ দেশ স্বাধীন হলে ’৭৩-এ জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। সেখানে শুধু কেন্দ্র থেকে জেলার পরামর্শে এমপিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কখনো পুরনো গণভবন সুগন্ধায় বসে কোনো দলীয় কাজ চালাননি এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি দুই পদে একসঙ্গে কখনো ছিলেন না। কিন্তু নেত্রী শেখ হাসিনা একেবারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পর্যন্ত মনোনয়ন দিতেন গণভবন থেকে। গণভবন কারও দলীয় সম্পত্তি নয়। গণভবন দলের জন্য ব্যবহারও হতে পারে না। গণভবন যেমন আওয়ামী লীগের জন্য, তেমনি বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য দলের জন্যও। তা তিনি মানেননি। যার পরিণতি এক দিন আগে হোক আর পরে হোক ভুগতে হয়েছে। আগে বুঝতে পারিনি এত বছর আমি শেখ হাসিনার রাজনীতি করি না, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পড়ে আছি। কিন্তু মনে হয় সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারিনি অথবা সাধারণ মানুষ আমাকে বুঝতে পারেনি। জীবন শুরু করেছিলাম বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে। এখন যতটা বয়স নতুন কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুকে আবর্তন করেই বাকি জীবন কেটে যাবে। আমি কখনো বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনাকে এক করে দেখিনি, আর দেখার সামান্যতম ইচ্ছেও নেই। বঙ্গবন্ধুর যেসব গুণ ছিল তার কানাকড়িও নেত্রী হাসিনার ছিল না। বঙ্গবন্ধু বিরোধী দলের লোকদেরও যতটা সম্মান করতে পারতেন, করতেন তার কিছুই শেখ হাসিনার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি। শতবার বলার চেষ্টা করেছি, একাকী রাজনীতি নয়, সবাইকে নিয়ে রাজনীতি। বিরোধী দলকে শত্রু নয়, প্রতিযোগী প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে হবে। কিন্তু তার কথায় কাউকে প্রতিযোগী মনে হয়নি, মনে হয়েছে শত্রু। তার শাসনামলে কোনো সমস্যা নিয়ে তিনি কখনো তার বাইরে বা তার দলের বাইরে কাউকে নিয়ে আলোচনা করেননি। এ এক বিশ্ব রেকর্ড। জাতীয় সমস্যা নিয়ে দেশের নেতাকে, দেশের সরকারকে দেশের মানুষ নিয়ে আলোচনা করতে হয়, সমাধানের পথ বের করতে হয়। কিন্তু তিনি তা কখনো করেননি। দু-একবার পাতানো নির্বাচনের আগে আলোচনার নাটক করেছেন। কিন্তু জাতীয় সমস্যা নিয়ে কখনো ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা করেননি। রোহিঙ্গা সমস্যার সময় তিনি সবাইকে ডাকতে পারতেন, সবাইকে অনুরোধ করতে পারতেন দেশের জন্য কার পরামর্শ কী? তা করেননি। কত সমস্যা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সন্তানেরা কতভাবে নাজেহাল হয়েছে, লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতন, মিসরের হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন। কোনো কিছুতে কাউকে কখনো পরামর্শের জন্য ডাকা হয়নি। এটা কোনো দেশ চালাবার পদ্ধতি হতে পারে না। কোটাবিরোধী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যখন সূচনা তখন শতবার বলেছি, আনিসুল হকের মতো একজন হালকা পাতলা মানুষকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়ে লাভ নেই। তাদের সরিয়ে দিয়ে নিজে দায়িত্ব নিন। সবাইকে মায়ের মতো ডেকে আনুন, মাথায় হাত বুলিয়ে যতটা সম্ভব তাদের দাবিদাওয়া মেনে নিয়ে দেশকে শান্ত করুন। কে শোনে কার কথা? শেখ হাসিনা তো জেদ ধরেই ছিলেন আমি কিছু বললে তিনি শুনবেন না। কতবার যে বলেছি, ওবায়দুল কাদেরের মতো নেতা এখন জাতিকে আন্দোলিত করতে পারে না। তাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করুন। একদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক, অন্যদিকে সেতুমন্ত্রী এত তেল হলে যে কারও পক্ষে চলা মুশকিল। শোনেননি। এটাই স্বাভাবিক। আমার কথা তিনি শুনবেন কেন? যাদের কথা শোনার তারা সবাই তার আশপাশে। শুনলেও যে খুব ভালো হতো তা কিন্তু নয়। তবে চিন্তা করে দেখতে পারতেন। একজন খুব ভালো মানুষ নেত্রকোনার আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এমপি, তার ছেলে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান যেদিন কোটাবিরোধী রায় দিলেন সেদিন ২১ জুলাই কোর্টে গিয়েছিলাম। লতিফ ভাইর পাশে বসেছিলাম। কোর্ট থেকে বেরোলে ইলেকট্র্রনিক মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের পীড়াপীড়িতে বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী অনতিবিলম্বে জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করুন। তিনি শোনেননি। তিনি যাদের ডেকেছিলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটাই স্বাভাবিক এরকম পরিস্থিতিতে কাউকে পাওয়া যায় না।
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধু নিহত হন তখন রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনা ছিলেন দেশের বাইরে স্বামীর সঙ্গে। জয়-পুতুলও সঙ্গে ছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যা ছিল আমাদের কাছে অচিন্তনীয়। তখন বয়স ছিল কম। তাই বিশ্ব রাজনীতিতে কায়েমি স্বার্থের দ্বন্দ্ব অতটা বুঝতে পারিনি। আমাদের কাছে ওভাবে বিশ্ব পরাশক্তির মোড়লদের পরাজয় তারা যে মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না- অতদূর ভাবার জ্ঞান-বুদ্ধি তখন ছিল না। তাই অনেক কিছুই বুঝতে পারতাম না। পিতার মৃত্যুসংবাদ শুনে এক কাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলাম। দুই-আড়াই বছর প্রতিরোধের পর একসময় নেত্রীর মতো আমিও ভারতে ছিলাম। সেবার নেত্রীর ভারত বাস আর এবার ভারত বাস এক নয়। মাস পার হয়নি অনেকে আলোচনা করছে ভারত নেত্রীকে আবার বাংলাদেশের মাথায় বসিয়ে দেবে। হতে পারে। ভারত মনি ঋষির দেশ, আসামের কামাক্ষা তাদের দেশে, তারা হয়তো ছেলেকে মেয়ে, মেয়েকে ছেলে বানাতে পারে। কিন্তু এটা জোর গলায় বলতে পারি, হাসিনাকে আবার বাংলাদেশের নেতা বানাতে হলে যে সময়ের প্রয়োজন সে সময় এবং শারীরিক অবস্থা থাকবে না। তিনি দেশে থাকলে তার পতনের পর কারাগারে ২-৪-১০ বছর নির্যাতন সহ্য করলে কথা ছিল এক রকম, পালিয়ে গিয়ে তিনি আরেক রকম কথার জন্ম দিয়েছেন। তবে তিনি পালিয়ে না গেলে কোনো অঘটন ঘটতেও পারত। এমনিতেই এখন দেশের মানুষ পাকিস্তান আমলের চেয়ে বেশি ভারতবিদ্বেষী হয়ে উঠেছে। তাই ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় তো দূরের কথা, বাংলাদেশে শুধু তার নিরাপদে বসবাস করার ব্যবস্থাও করতে পারবে না। আর ভাগিনা জয় যেভাবে কথাবার্তা বলছে তাতে আওয়ামী লীগের লোকেরাও দুর্বল হয়ে পড়ছে। দালালরা তো উলুর গর্তে আগেই লুকিয়েছে। গরিব নিবেদিত বঙ্গবন্ধুর ট্যাবলেট খাওয়া কর্মীরাও আবোলতাবোল কথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিক্ষুব্ধ হচ্ছে, সাধারণ মানুষের কাছে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। শরীরের কোথাও ঘা লাগলে আঘাত লাগলে সে আঘাত সারবার একটা সময়ের দরকার হয়। এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে না। কাউকে কিছু না বলে নেত্রী চলে গিয়ে সাধারণ আওয়ামী লীগের কথা ছেড়েই দিলাম তার দালালদের যে বিপদে ফেলেছেন সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া অত সহজ নয়। সেজন্য শেখ হাসিনার দিক থেকে যত কম লাফালাফি করা হবে ততই মঙ্গল। শান্ত থাকা চুপচাপ থাকা এটাও একটা সংগ্রামের অংশ। যাক ওসব কথা নাই-বা বললাম। বুদ্ধিমানেরা তাদের বুদ্ধি-বিবেচনা খাটিয়ে চলবেন এটাই স্বাভাবিক। সেখানে আমাদের বেশি বলার দরকার কী? আমরা রাজনীতির সন্তান, রাজনীতি ওলটপালট হয়ে গেছে বলেই আমরা সবাই ওলটপালট হয়ে যাব এটা ঠিক না। সব সময় মানুষের পক্ষে থাকা আমাদের কাজ। তাই আছি।
৩০ আগস্ট শুক্রবার টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম। যেতে চেয়েছিলাম ১৬ আগস্ট শুক্রবার। হয়তো আল্লাহ মঞ্জুর করেননি, তাই ১৬ তারিখ যেতে পারিনি। ৩০ তারিখ টুঙ্গিপাড়া গিয়ে দেখলাম কেউ নেই, কিছু নেই। আমি অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি, ভারতে এত বছর থেকে কত রাজা-বাদশাহদের কবর দেখেছি, ইমারত যত ভালোই হোক স্থাপনা যত ভালোই হোক দেখাশোনা করার তেমন জাঁকজমক নেই। অথচ খাজা বাবার আজমির, নিজামউদ্দিন চিশতির দিল্লি, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি, তাদের মাজারে হাজার হাজার মানুষ। কথাগুলো আমার মনে পড়ে সেজন্য চেপে না রেখে প্রকাশের চেষ্টা করি। ৫ তারিখ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ঘণ্টাও পার হতে পারেনি, ৩২ নাকি ৩৪ জন পুলিশ সবাই বঙ্গবন্ধুর কবর থেকে চলে যায়। এমনকি দেখাশোনা করার যারা ছিল তারাও চলে গেছে। আলভী বলে একটি ছেলে কবরে থাকে, দেখাশোনা করে। সেই ছেলেটাসহ আরও কয়েকজনকে দেখলাম। সাত-আট বছর আগে থেকে বলছিলাম সরকারে থাকতেই এমন, সরকারে না থাকলে কিছু থাকবে না। তাই হয়েছে। পিডব্লিউডি থেকে অস্থায়ীভাবে বার্ষিক চুক্তির মাধ্যমে দেখাশোনার কাজের কিছু লোক কিছু টাকা পেত। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকতেই জুলাই মাসের বেতন পায়নি, জুন মাসের বেতন পেয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় দু-একবার নেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মোটামুটি ভালো ব্যবহার পেয়েছি। বেশি সময় শেখ পরিবারের কাছ থেকে অসম্ভব অসহযোগিতা এবং দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয়েছে। এখন তো বঙ্গবন্ধু এবং তার মা-বাবার কবরের ওপর স্থাপনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু যখন এসব স্থাপনা ছিল না, তখন আমি যখন রাজনৈতিক পিতার পায়ের কাছে বিছানা পেতে ঘুমাতাম বেশ কয়েকবার আমার বিছানার ওপর দিয়ে শেখ হেলালের মা গাড়ি চালিয়ে বারান্দায় নেমেছে। ৮-১০ ফুট দূরে গাড়ি রেখে নেমে গেলে আমার বিছানার ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে হতো না। কিন্তু চালিয়েছেন। কিছু করার ছিল না, কিছুই বলার ছিল না।
কবি বেগম সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমান, বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, বিচারপতি কে এম সোবহান, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ আহমদ হোসেন, সৈয়দ হাসান ইমাম, গোলাম মোস্তফা, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হক, ড. আনোয়ারা সৈয়দ হক, সন্তোষ গুপ্ত, মামুনুর রশীদ এসব দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা টুঙ্গিপাড়া গিমাডাঙ্গা স্কুল মাঠে যখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা করতেন তখন টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগের লোকজন অতিথিদের গাড়ি ভেঙেছে। বুঝতে পারি নাই, কেন ওসব করে। প্রথম টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯০, দ্বিতীয়বার কারামুক্ত হয়ে ১৮ আগস্ট ১৯৯১। সেবার নেত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় ছিলেন। আমাদের ব্যাপক সহযোগিতা করেছিলেন। এরপর আর কখনো তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। শুধু বিরোধিতা আর বিরোধিতা। একসময় প্রশ্ন উঠেছিল, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিনে কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়। আমার কাছে কাঙালি ভোজটা অসম্মানজনক মনে হয়েছিল। আমি নাম দিয়েছিলাম গণভোজ। হায় হায় সে নিয়ে কত বিরোধিতা, কত গালাগাল। এখন কিন্তু সেই কাঙালিভোজ গণভোজ হয়েছে। আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় ছেলেবেলায় শুনেছিলাম, ‘চাড়ালের কথা বাসি হলে ফলে’। এক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। তবে এ যাত্রায় টুঙ্গিপাড়ায় খুব ভালো লেগেছে। টুঙ্গিপাড়ায় সাধারণ মানুষ আগের চাইতে অনেক বেশি কবরের প্রতি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিবেদিত হয়েছেন। তারা তাদের সন্তানকে, আপনজনকে বুকে আগলে রাখতে শিখেছেন। কবরে গেলে মাঝে সাজে বঙ্গবন্ধুর বৈঠকখানায় বসেছি। এবারও বসেছিলাম। ঢাকা থেকে বলে দিলে মাঝেসাজে বৈঠকখানায় তালা দেওয়া হতো আবার দু-একবার বসতে দেওয়া হতো। এবার বলা কওয়ার কোনো কারবার ছিল না। তাই যারা দেখাশোনা করে তাদের কাছে ভীষণ যত্ন পেয়েছি। বৈঠকখানায় বসে নানান ছবি দেখে মন ভারী হয়ে আসছিল।
কোথাও কোনো কিছু হলেই কয়েকজন মিলে আক্রমণ, গাড়ি ভাঙচুর, ইটপাটকেল ছোড়া, কারও অফিসে, কারও বাড়িতে কয়েকজন মিলে আক্রমণ কেন যেন এক অশনিসংকেত বলে মনে হয়। সেদিন মেডিকেলে এক রোগীর মৃত্যুজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের ওপর আক্রমণ, প্রতিনিয়ত কোর্ট-কাচারিতে অভিযুক্তদের বিচারকের সামনে নাজেহাল, শারীরিক নির্যাতন এসব কি কোটা এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করার কোনো ষড়যন্ত্র কি না বুঝে উঠতে পারছি না। কোর্ট-কাচারিতে প্রায় সবাই তো আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। এখন আওয়ামী লীগ গা-ঢাকা দিয়েছে। সবাই বিএনপি। তারা যদি এখনই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে তাদের হাতে রাষ্ট্রশাসন কী করে সম্ভব? ঘটনাগুলো আমাকে ভাবায় চিন্তিত করে তাই বললাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশের মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে ততই মঙ্গল।
লেখক : রাজনীতিক
www.ksjleague.com