বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান এখন

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান এখন

নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের দিকপাল মোহাম্মদ হাসেম

বাংলাদেশের আঞ্চলিক গানের জগতে নোয়াখালীর গান একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে রেখেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই এই অঞ্চলের গান শুধু আঞ্চলিকতায়ই সীমাবদ্ধ থাকেনি, দেশের নানা অঞ্চলের মানুষের মন জয় করেছে। এই অঞ্চলের আঞ্চলিক গানের শিল্পী আছেন প্রচুর। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের সম্রাট হয়ে আছেন মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তার  অন্যতম জনপ্রিয় দুটি গান হলো- ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী, রয়েল ডিস্টিক ভাই’, ‘রিকশাওয়ালা কুচকাই চালা, ইস্টিশন যাইয়ুম’। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতে শিল্পী হাসেম লিখেছেন, ‘আবারও দিন আইব বাঙালি গান গাইব, চান্নির হর কিয়ের ডর? চোখগা মেলি চান’। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় অসংখ্য গান লিখেছেন শিল্পী আবুল হাসেম। নোয়াখালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর কাছে। শুধু আঞ্চলিক ভাষায় নয়; তিনি অনেক পল্লীগীতি ও আধুনিক গানের রচয়িতাও । নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানকে আলোকিত করে যাচ্ছেন অধ্যাপক আবুল হাসেম। তার কথায় নোয়াখালীর গান এখনো জনপ্রিয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো বর্তমান প্রজন্ম ভিনদেশি সংস্কৃতির অনুকরণ করতে গিয়ে নিজের অঞ্চলের গানকে ভুলতে বসেছে। এই প্রবণতা রোধ করতে না পারলে এক দিন এই অঞ্চলের বিশেষ গান বলে আর কিছু থাকবে না। অধ্যাপক মোহাম্মদ হাসেম একই সঙ্গে একজন গীতিকার, সুরকার এবং সংগীতশিল্পী। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। নোয়াখালীর এই কৃতী সন্তান একান্তই নিভৃতচারী, অন্য সবার চেয়ে একটু আলাদা। নামে নয়, তিনি পরিচিত তার কর্মে। ইদানীং ফেসবুকে একজন বয়স্ক মানুষের কণ্ঠে ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী, রয়েল ডিস্টিক ভাই’ এই শিরোনামে একটি গান খুব শোনা যায়। এই গানটির রচয়িতা, সুরকার এবং প্রথম শিল্পী মোহাম্মদ হাসেম। শুধু এই একটি গানই নয়, নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় এক হাজার গান লিখেছেন তিনি। শুধু নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রায় পাঁচ শতাধিক আধুনিক ও পল্লীগীতি রচনা করেন এবং বৃদ্ধ বয়সে এখনো লিখে যাচ্ছেন। মোহাম্মদ হাসেম ১৯৪৭ সালে রয়েল ডিস্টিক নোয়াখালীর শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার পুরানা পল্টন লাইন হাই স্কুল, জগন্নাথ কলেজ এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তার সংগীত প্রতিভার উন্মেষ ঘটতে শুরু করে। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে তিনি নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় গান লিখতে শুরু করেন। ওই সময়ই তিনি লিখেন তার সেই বিখ্যাত গান ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী, রয়েল ডিস্টিক ভাই’। লেখাপড়া শেষ করে তিনি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনার পর ২০০৫ সালে নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে প্রথমে যোগ দেন ঢাকা সংগীত মহাবিদ্যালয়ে। সেখানেই তিনি সংগীতের প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তার সংগীতের প্রথম গুরু বাংলা লোকজ সংগীতের দিকপাল শিল্পী আবদুল আলীম। তার কাছেই প্রথম তালিম নেন। এরপর ওস্তাদ বারীন মজুমদারের কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত, ওস্তাদ আবিদ হোসেন খানের কাছে তত্ত্বীয় সংগীত, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে তবলায় দীক্ষা নেন। এরপর তিনি আঞ্চলিক গান, আধুনিক ও পল্লীগীতি চর্চা শুরু করেন। ২০০৫ সালে বইমেলায় বের হয় তার ১০১টি গানের সংকলন নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান বলতে মোহাম্মদ হাসেমের গানকেই বুঝায়। মোহাম্মদ হাসেম ও নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান যেন সমার্থক। তিনিই নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের সম্রাট। তার বিশ্বাস বর্তমান প্রজন্ম এই গানের জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। হারিয়ে যাবে না নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান।

সর্বশেষ খবর