শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন

উৎকণ্ঠা উড়িয়ে উৎসব

আলাউদ্দীন মাজিদ ও পান্থ আফজাল

উৎকণ্ঠা উড়িয়ে উৎসব

বাঁ থেকে জায়েদ খান-মিশা সওদাগর, নির্বাচন চলাকালে এফডিসির মূল ফটক, নিপুণ-ইলিয়াস কাঞ্চন, মৌসুমী-ডিপজল-মিশা সওদাগর

স্বস্তির ভোট

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম দ্বিবার্ষিক নির্বাচনকে ঘিরে উৎকণ্ঠার অন্ত ছিল না। এই উদ্বেগ ছিল নানা কারণে। এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুই প্যানেলের মধ্যে বাগ্যুদ্ধ ছিল প্রথম থেকেই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এফডিসিতে বেশ কদিন ধরে বহিরাগতদের অবৈধ আনাগোনায় ভোট গ্রহণে শৃঙ্খলা ধরে রাখা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা ছিল। বহিরাগত ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত এফডিসিতে নির্বাচনের আগে ও ভোট গ্রহণের দিন কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এফডিসি কর্তৃপক্ষ  ঘোষণা দেয় নির্বাচনের দিন পাস ছাড়া সাংবাদিক এবং শিল্পী সমিতির সদস্য ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এমন কি চলচ্চিত্রের অন্য ১৭ সমিতির কেউই ওইদিন এফডিসিতে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন ও নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুন জানিয়েছিলেন, ওপর মহলের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ১৭ সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা। ভোটের দিন এফডিসির সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এফডিসি কর্তৃপক্ষ সব সংগঠনের সদস্যদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। এরপরই উৎকণ্ঠা উড়িয়ে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে এফডিসি। সকাল ৯টা ১৬ মিনিটে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। দু-একটি কথা কাটাকাটির মতো ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আনন্দঘন আমেজেই ভোট গ্রহণ চলতে থাকে। কিছুক্ষণ পরপর আসতে থাকে ভোটার শিল্পীরা। চলতে থাকে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ। শুরুতে সকালবেলা ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তারকাবহুল হয়ে ওঠে এফডিসি। বেলা ১টায় জুমার নামাজের জন্য বিরতির পূর্ব পর্যন্ত ভোট পড়ে ৯৯টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৪২৮।

 

কঠোর নিরাপত্তার চাদরে এফডিসি

গতকাল ভোর থেকেই এফডিসির সামনের রাস্তা পরিণত হয় প্রায় জনসমুদ্রে। শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন ভোট দিতে সব দর্শক, পছন্দের সব তারকাই আসবেন। এ কথা মাথায় রেখে দূর-দূরান্ত থেকে উৎসুক মানুষ প্রিয় তারকাদের এক নজর দেখতে এখানে ছুটে আসে। বাড়তি জনসমাগমের কথা মাথায় রেখেই যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে প্রশাসন এফডিসিকে ঢেকে দেয় কঠোর নিরাপত্তার চাদরে। সরেজমিন এফডিসি ঘুরে দেখা গেছে, এফডিসির প্রবেশ পথে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। প্রত্যেককে কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করানো হচ্ছে। নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, ভোট উপলক্ষে এফডিসিতে ৩০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

 

কেন ১৬ মিনিট দেরিতে ভোট শুরু

নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয় নির্ধারিত সময় সকাল ৯টার পরিবর্তে সকাল ৯টা ১৬ মিনিটে। ভোট গ্রহণে কেন এই ১৬ মিনিট দেরি। নির্বাচন কমিশন জানায়, ২৩৪ নম্বর ব্যালটে একটু ভুল ছিল। সে জন্য দুই প্যানেলের দুই সভাপতি প্রার্থীকে নিয়ে কমিশন বৈঠক করে সবার সম্মতিক্রমে তা বাতিল করা হয়েছে। আর এ কারণেই ভোট গ্রহণে ১৬ মিনিট বিলম্ব ঘটে।

 

প্রথম ভোট দিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন

৯টা ১৬ মিনিটে ভোট গ্রহণ শুরু হলে প্রথম ভোট দেন কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি ভোট দিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সব চলছে। আমি সুন্দর পরিবেশে চমৎকার নির্বাচন আশা করছি। তবে এফডিসিতে নির্বাচনকে ঘিরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েনে তিনি বিরক্ত হন।

 

ক্ষুব্ধ ইলিয়াস কাঞ্চন

সভাপতি প্রার্থী ইলিয়াস কাঞ্চন ভোটের দিন সকালে এফডিসিতে প্রবেশ করতে গিয়েই হতভম্ব হয়ে যান। ক্ষুব্ধ কাঞ্চন বলেন, এফডিসিতে যখন ঢুকলাম, মনে হচ্ছে এখানে যুদ্ধ হবে। এত নিরাপত্তা তো এখানে আসলে দরকার নেই। এখানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হয় না, নিরাপত্তা একটু কম হলে ভালো হতো।

খ্যাপলেন নিপুণ

ভোট চলছিল শান্তিপূর্ণভাবেই। তখন ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টার ঘর পেরিয়েছে। এফডিসির মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জায়েদ খান। হঠাৎ করেই সেখানে এসে হাজির অন্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ। এসেই তিনি জায়েদ খানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তিনি [জায়েদ] এখানে দাঁড়িয়ে ভোটারদের টাকা দিচ্ছেন। নিয়ম ভঙ্গ করেই তিনি এখানে দাঁড়িয়েছেন। তাই আমিও এখানে দাঁড়িয়ে থাকব। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে দুবার অভিযোগ করেছি। তাতে কোনো সাড়া পাইনি। এতক্ষণ কিছু বলিনি। তিনি [জায়েদ] যতক্ষণ এখানে থাকবেন আমিও যাব না। কোনো আইনি পদক্ষেপও নেব না। এ সময় একটু দূরে দাঁড়ানো জায়েদ খান কিছু না বলেই হাসছিলেন। সাংবাদিকরা এ অভিযোগের ব্যাপারে জায়েদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপা এখানে থাকুক আমি চলে যাই। এ কথা বলেই তিনি হাসতে হাসতে স্থান ত্যাগ করেন।

 

জাহিদের ভালোবাসা চাইলেন ফেরদৌস

ভোট নয়, জাহিদ ভাই আমাকে ভালোবাসা দেবেন। এটুকু ছোট ভাই হিসেবে আপনার কাছে আমার চাওয়া।  বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জাহিদ হাসান এফডিসিতে  ভোট দিতে আসেন। গেট দিয়ে প্রবেশের পরই জাহিদ হাসানের গাড়ি দেখে চিনে ফেলেন ফেরদৌস। দৌড়ে গিয়ে সালাম দেন। এরপর জাহিদ হাসান গাড়ির গ্লাস খুলে হাসিমুখে ফেরদৌসের সালামের উত্তর দেন। তখন  ফেরদৌস বলেন, জাহিদ ভাই আমার ভালোবাসার মানুষ। জানি ভাইয়ের কাছে আমিও ভালোবাসার মানুষ। তাই ভোট নয়, ভাইয়ের কাছে ভালোবাসা চাই। আপনাদের ভালোবাসায় নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমরা পরিবর্তন চাই। ফেরদৌসকে জাহিদ হাসান বলেন,  ছোট ভাই তোমাদের জন্য আমার ভালোবাসা কোনো দিন ফুরাবে না।

 

ভোট দিলেন ৮০ বছরের মিরানা জামান

ভোট দিয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মিরানা জামান। শেষ কবে এফডিসিতে গিয়েছিলেন মনে নেই। এমন দিনে নিজের ভোট দিতে অসুস্থ শরীর নিয়ে এফডিসিতে  গেলেন ৮০ বছর বয়স্ক অভিনেত্রী মিরানা জামান। একদিকে বয়সের ভার, অন্যদিকে অসুস্থতা। তবু  সেসবকে দমিয়ে দুজনের সহায়তায় শিল্পী সমিতির নির্বাচনে উপস্থিত ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বর্ণালি দিনের সাক্ষী মিরানা জামান।  এই প্রবীণ অভিনেত্রী বলেন, ‘শেষ কবে এফডিসিতে এসেছি মনে নেই। আমি খুব অসুস্থ। তবুও আজ ভোট দিতে এলাম।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর