বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

হুমায়ূনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ভক্তরা

নিষাদ ও নিনিতের সঙ্গে মেহের আফরোজ শাওন

সাইফ ইমন

হুমায়ূনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ভক্তরা

এমন সময় হুমায়ূন আহমেদের ওপর আমার খুব অভিমান হয়, রাগ হয় এবং বকা দিতে ইচ্ছে করে। তবে অনেক ভালোলাগা মুহূর্তও তৈরি হয়। সারা দিন কাজ শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন বাচ্চারা এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আমাকে আদর করে দেয়। তখন মনে  হয় পৃথিবীটা খুব সুন্দর। আর পৃথিবীটা আসলেই খুব সুন্দর।

হুমায়ূন আহমেদের দর্শন নিয়ে শুদ্ধতম চর্চা হোক এমনটা প্রত্যাশা করেন লেখকের পরিবার। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় আজীবন লেখককে স্মরণ করে যাবেন বলে জানান ভক্তরা। চিত্রপরিচালক, অভিনেত্রী ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ আমরা ভক্তরা বছরের প্রতিদিনই করি। তবে জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। অনেক ভক্ত আছেন যারা নিজের মতো করে নিজের বাসায়ই জন্মদিন পালন করেন। এ ছাড়াও দেশে এবং দেশের বাইরে বহু সংগঠন আছে, যারা জন্মদিন পালন করে থাকেন। আমাকে ছবি পাঠায় আমার খুবই ভালো লাগে। আমার মনে হয় তাদের মাঝেই হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে আছেন। কোনো সৃষ্টিশীল মানুষকে আসলে সরকার, একাডেমি কিংবা প্রতিষ্ঠান কিন্তু বাঁচিয়ে রাখে না। বাঁচিয়ে রাখেন তাঁর ভক্তরাই। হুমায়ূন আহমেদকেও বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁর ভক্তরা।

নানা আয়োজনে পালিত হলো নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। ১৩ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডিতে দখিন হাওয়ায় রাত ১২টা ১ মিনিটে কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় জন্মদিনের আয়োজন। এর পাশাপাশি নুহাশ পল্লীতে মোমবাতি প্রজ্বালন, সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে লেখককে স্মরণ করেন তাঁর পরিবার, স্বজন, নুহাশ পল্লীর স্টাফ ও ভক্ত-পাঠকরা। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তাঁর দুই ছেলে নিষাদ-নিনিত এবং ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।

মেহের আফরোজ শাওনের কণ্ঠে গান হুমায়ূন আহমেদ অসম্ভব পছন্দ করতেন। শাওন পরিচালিত কৃষ্ণপক্ষ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘যদি মন কাঁদে’ গানটি দিয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন শাওন। যদি কখনো হুমায়ূন আহমেদ তাঁর কোনো জন্মদিনে গান শুনতে চাইতেন, তবে কোন গানটি গাইতে হবে শাওন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি নতুন করে কোনো গান গাইতে হয় তাহলে হুমায়ূনকে বলব আগে নতুন করে দুটি গান লিখে দাও। তাহলে আরও দুটি নতুন গানের সৃষ্টি হতো। সেই সৃষ্টিকে পাওয়ার একটা লোভ তো আছেই। এমনটা হলে খুব ভালো হতো নতুন দুটি গান স্রোতারা উপভোগ করতে পারতেন। আমি সেই দুটি গান গাইতাম।

এখনো প্রতি বছর বইমেলা থাকে হুমায়ূন আলোয় মুখরিত। পাঠকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করার তাগিদে। এ প্রসঙ্গে শাওন বলেন, হুমায়ূন পরিবারের অংশ হিসেবে আমার খুবই ভালো লাগে। তবে আমি মনে করি নবীন লেখকদের লেখাও পড়তে হবে। আমরা যদি আগেই ভেবে রাখি হুমায়ূন আহমেদের লেখা ছাড়া আর কোনো লেখা পড়ব না তাহলে হবে না। হুমায়ূন আহমেদও একসময় নবীন ছিলেন। পাঠক-ভক্তদের ভালোবাসায় হুমায়ূন আহমেদ নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের জায়গাটা কেউ নিতে পারেনি, কেউ পারবেও না। কিন্তু নবীন লেখকরাও প্রত্যেকে নিজেদের জায়গা তৈরি করছেন। আমরা যারা পাঠক আমাদেরও উচিত তাদের স্বাগত জানানো। যিনি নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন আর যারা নিজেদের তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন আমি সবাইকেই সম্মান করি।

হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিকে সঙ্গী করে নিজের দুই ছেলে নিষাদ-নিনিতকে নিয়ে মেহের আফরোজ শাওনের পথচলা। সদা হাসিমুখে থাকা মেহের আফরোজ শাওন বলেন, আমার হাসির পেছনে রয়েছে অনেক কথা। একসময় সিঙ্গেল পেরেন্টিং কথাটার মধ্যেই একরকম রহস্য ছিল। এখন আশপাশে আমরা অনেক সিঙ্গেল পেরেন্ট দেখি। একা বাবা যেমন দেখি আবার তেমনি একা মা-ও দেখি। এই পথচলাটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। এটা একেক সময় অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়, আবার অনেক সময় ভীষণ আনন্দেরও। আমি খুবই কঠিন সময় পার করছি। নিষাদের বয়স ১৫-১৬ আর নিনিতের ১২-১৩ চলছে। এই সময়টা খুবই সেনসেটিভ। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন হয়। সবমিলিয়ে আসলে যখন এমন চ্যালেঞ্জের সময় পার করতে হয় তখন খারাপ লাগে। এমন সময় হুমায়ূন আহমেদের ওপর আমার খুব অভিমান হয়, রাগ হয় এবং বকা দিতে ইচ্ছা করে। তবে অনেক ভালোলাগা মুহূর্তও তৈরি হয়। সারা দিন কাজ শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন বাচ্চারা এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,  আমাকে আদর করে দেয়। তখন মনে হয় পৃথিবীটা খুব সুন্দর। আর পৃথিবীটা আসলেই খুব সুন্দর। 

সর্বশেষ খবর