কক্সবাজার থেকে অন্তত ১৮টি রুট দিয়ে ঢুকছে মরণ নেশা ইয়াবা এবং আইস। সড়ক-নৌ-আকাশ এবং রেলপথ ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। মাদকের আগ্রাসন রোধে করণীয় নির্ধারণ করতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল পর্যটননগরী কক্সবাজারে বসছে মাদক প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণীর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে মাদক পাচারকারী এবং কিছু রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। পাচারকারী এবং চিহ্নিত রুটগুলো নিয়ে আগামী সোমবার (কাল) কক্সবাজারের বৈঠকে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকেই মাদক প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে সব সংস্থার আলোচনা করার কথা রয়েছে।’
বৈঠকে একাধিক উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংগতি উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, একাধিক সচিব ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে মাদক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ে গবেষণাকারী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল (উত্তর ও দক্ষিণ) উপপরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার বলেন, ‘কক্সবাজার সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ১৮টি রুট দিয়ে পাচার হয় মাদক ও আইস। এ রুটগুলোর মধ্যে নৌ, আকাশ, রেল এবং সড়ক পথ রয়েছে।’
জানা যায়, বাংলাদেশে আসা ইয়াবা-আইসের চালান বেশির ভাগই প্রবেশ করে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার পাহাড়, নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে। মাদক চালানের বাংলাদেশে পাচারে সবচেয়ে ভূমিকা রাখেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ে গড়ে ওঠা ট্রান্সন্যাশনাল চক্রগুলো। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে- মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া মাছ, কাঠ, মরিচ, চাল, শুঁটকি, বাঁশ, পিঁয়াজ, ডালসহ বিভিন্ন রপ্তানি চালানের সঙ্গেও আসে ইয়াবা ও আইসের বড় বড় চালান। অনেক সময় কাঠ, চাল, পিঁয়াজ, লবণ, পান, সুপারি, নারকেলসহ নানান পণ্যের ভিতর দিয়ে পাচার করা হয় মাদকের চালান। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলে করেও দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয় মাদকের চালান। ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মাদক পাচারকারী ও মাদক ব্যবসায়ী, গাড়িচালক, হেলপার, সুপারভাইজার, রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, দরিদ্র ঝুঁকিপূর্ণ ভাসমান নারী-পুরুষ, ওষধ কোম্পানির লোক, মাঝি, ইমাম, ভান্তে, সাপুড়ে, শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি, বিমান ও রেলের কর্মচারী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, এনজিওকর্মী, ব্যবসায়ী, অর্থের বিনিময়ে নারী-পুরুষ, পরিবহন শ্রমিকসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ। কক্সবাজার থেকে মাদক পাচারে নৌ, সড়ক, বিমান এবং রেলের অন্তত ১৮টি অভ্যন্তরীণ রুট ব্যবহার করে পাচারকারীরা। কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন সংস্থার বিমান করে আকাশপথে এবং কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাওয়া ট্রেনে করে পাচার হয় ইয়াবা ও আইসের চালান। এ দুই রুট ছাড়াও মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ১৬টি রুট ব্যবহার করা হয় ইয়াবা ও আইস পাচারে।