তাপপ্রবাহে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম। গত শুক্রবার মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ডের পরদিনই ভেঙ্গে গেছে সেই রেকর্ড। শনিবার চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৭ ডিগ্রি। এরসাথে বাতাসে ছিলো অত্যাধিক আদ্রতা। ফলে অনূভূত তাপমাত্রা আরো বেশি। তাপপ্রবাহের কারণে ঘরে বাহিরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। তীব্র গরমে শরীর ঘামছে বিরতিহীন। হাঁসফাঁস অবস্থা শ্রমজীবিদের। এরমধ্যে দিনভর বিদ্যুতের আসা যাওয়ায় ত্রাহি অবস্থা জনজীবনের।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রামে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ ডিগ্রী আর সর্বনিম্ন ছিলো ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আদ্রতার পরিমাণ ছিলো ৫০ শতাংশের বেশি। যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ। এর আগের দিন শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৫.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, সারাদেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলের গরম বাতাস বয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের উপর দিয়ে। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি হওয়ায় গরম অনূভূত হচ্ছে বেশি। আগামী কয়েকদিন এই তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টির সম্ভাবনাও খুব সীমিত।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে কোনো লোডশেডিং না থাকলেও, চট্টগ্রামজুড়ে দিনভর বিদ্যুতের আসা যাওয়া অব্যহত আছে। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে সকালে ও বিকেলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের অনুপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে কিছু ক্ষেত্রে সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জাতীয় গ্রীডে সঞ্চালন ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিদ্যুৎ সরবরাহ মাঝে মাঝে বন্ধ রাখতে হয়। এটাকে লোডশেডিং বলা যাবে না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রামের বিতরণ বিভাগের (দক্ষিণাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির মজুমদার জানান, শুক্রবার ভোর ৫টার পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ ছিলো। এছাড়াও নগরে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ঠিকাদারদের অনুরোধেও দিনের বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়। এর বাইরে অনেক সময় বৈদ্যুতিক লাইনে নানা জটিলতার কারণে সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়। এগুলোকে লোডশেডিং হিসেবে ধরা হয় না।
তবে যে কারণেই হোক, বিদ্যুতের এই ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ নাগরিকরা। বিশেষ করে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে বাসাবাড়ি অফিসে বৈদ্যুতিক পাখা কিংবা শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াও এক মুহূর্তও স্বস্তিতে থাকা যাচ্ছে না। নগরীর বাগমনিরাম সড়কের বাসিন্দা রাহাত আলী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কারণ যদি জানানো না হয় তাহলে কী কারণে বিদ্যুৎ যায় আসে সেটা তো গ্রাহকদের জানার কথা না। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন ভোরবেলা বিদ্যুৎ চলে যায়। ২/৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসে না। গরমের কারণে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে হয়।’
অন্যদিকে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজির সাথে অধিক তাপপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে দুর্বিষহ সময় পার করছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যান চালকসহ শ্রমজীবিরা। নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় আলাপকালে রিকশা চালক রশিদ মিয়া বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রামের উঁচুনিচু রাস্তায় রিকশা চালাতে ঘাম বের হয়ে যায়। আর এখন তো রোদের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। বাতাস গরম। কিন্তু বের না হয়ে উপায় কী। আমাদের তো আয়ের আর কোনো পথ নেই।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল