ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপিসহ ১৪৪টি দলের নিবন্ধন আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। এর মধ্যে অনেক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নাম-পদবি নেই।
নির্বাচন কমিশনের যাচাইবাছাই কমিটি অধিকাংশ দলের কেন্দ্রীয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অফিস ভাড়ার চুক্তির তথ্য পায়নি। আবার অনেক দল কেন্দ্রীয় কমিটির নাম দিলেও তাদের এনআইডি নেই। দলের নামে যে ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তার নাম-ঠিকানা নেই। নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলগুলোকে এসব ত্রুটি সংশোধনে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল ইসির উপসচিব (নির্বাচনি সহায়তা ও সমন্বয়) মো. মাহবুব আলম শাহ্ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ইসির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় দলিলাদিসহ অন্যান্য ত্রুটি সংশোধনের জন্য দলগুলোকে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ধাপে ধাপে নিবন্ধন আবেদন যারা করেছে তাদের কাছে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
ইসির তৈরি প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দলগুলোর যত ত্রুটি পাওয়া গেছে : বাংলাদেশ রক্ষণশীল দল (বিসিপি)। এ দলের চারটি ত্রুটি। আবেদন অনুযায়ী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) চারটি ধারা প্রতিপালন হয়নি। এ ছাড়া দলটি আবেদন করলেও অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছে ইসিকে। যথাযথ কাগজপত্র সংযুক্ত করেনি আবেদনের সঙ্গে।
জনতা কংগ্রেস পার্টি। এ দলের তিনটি প্রধান সমস্যা। আরপিওর তিনটি ধারা প্রতিপালন হয়নি। আরপিও ৯০খ(১)(ক)(আ) অথবা ৯০খ (১)(ক)(ই) অনুচ্ছেদের কোনোটির শর্ত প্রতিপালন করেনি দলটি।
বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পার্টি। এ দল কেন্দ্রীয় কমিটি, সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর ও জেলা-উপজেলা দপ্তরের বিষয়ে কোনো দলিল সংযুক্ত করেনি আবেদনের সঙ্গে। দলের প্রধান দুটি সমস্যা রয়েছে। আরপিও ৯০খ(১)(ক)(আ) অথবা ৯০খ (১)(ক)(ই) অনুচ্ছেদের কোনোটির শর্ত প্রতিপালন করেনি।
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি (বাজাপা)। এ দলের প্রধান ছয়টি সমস্যা। আরপিওর ৯০খ(১)(ক)(অ) অথবা ৯০খ (১)(ক)(আ) অনুচ্ছেদের কোনোটির শর্ত প্রতিপালন করেনি।
বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি। এ দলের কেন্দ্রীয়, মহনগর ও জেলা কার্যালয়ের একই ঠিকানা। সমস্যা ছয়টি। আরপিওর পাঁচটি নির্দেশনা প্রতিপালন হয়নি।
বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল। এ দলের সমস্যা ১২টি। আরপিওর ১০টি বিষয় প্রতিপালিত হয়নি। বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি। এ দলের আটটি সমস্যা। আরপিওর ছয়টি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন পার্টি। এ দলের সমস্যা ১১টি। আরপিওর নয়টি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
বাংলাদেশ জেনারেল পার্টি (বিজিপি)। এ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা, দলের ইমেইল, ফোন, ফ্যাক্স নম্বর নেই। সমস্যা তিনটি। আরপিওর আটটি বিষয় প্রতিপালিত হয়নি।
বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি)। এ দলের সমস্যা পাঁচটি। আরপিওর দুটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাজাহান সিরাজ)। এ দলের সমস্যা নয়টি। আরপিওর পাঁচটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। এ দলের প্রধান সমস্যা পাঁচটি। আরপিওর দুটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি)। এ দলের প্রধান সমস্যা ১০টি। আরপিওর তিনটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
জনতার কথা বলে। এ দলের সমস্যা ১৪টি। আরপিওর তিনটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
ভাসানী জনশক্তি পার্টি। এ দলের ১৫টি সমস্যা। আরপিওর তিনটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন। এ দলের ১০টি সমস্যা। আরপিওর তিনটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
ফরওয়ার্ড পার্টি। এ দলের প্রধান সমস্যা দুটি।
বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সমস্যা পাঁচটি। স্বাধীন জনতা পার্টির প্রধান সমস্যা পাঁচটি। আমজনতার দলের সমস্যা পাঁচটি।
বাংলাদেশ শান্তির দলের প্রধান সমস্যা সাতটি। আরপিওর দুটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি দলটির।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। এ দলের প্রধান সমস্যা পাঁচটি। এর মধ্যে নিবন্ধন ফি নির্ধারিত কোডে জমা দেয়নি। আরপিওর একটি বিষয় প্রতিপালিত হয়নি।
ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল)। এ দলের প্রধান সমস্যা আটটি। আরপিওর একটি ধারা প্রতিপালিত হয়নি।
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির প্রধান সমস্যা আটটি। আরপিওর চারটি বিষয় প্রতিপালিত হয়নি।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ)। এ দলের ১৬টি সমস্যা। আরপিওর পাঁচটি বিষয় প্রতিপালিত হয়নি।
বাংলাদেশ জনতার ঐক্য। এ দলের সমস্যা ১৩টি। আরপিওর পাঁচটি বিষয় প্রতিপালিত হয়নি।
আগ্রহী দলগুলোর জন্য নিবন্ধনের শর্তপূরণে প্রয়োজনীয় কাগজসহ আবেদন করার শেষ সময় ছিল ২২ জুন। নিবন্ধনবিধিতে বলা হয়েছে, আবেদনের সঙ্গে দলিলাদি যুক্ত করে না থাকলে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া যাবে। আবেদন যাচাইবাছাইয়ে ইসি সচিবালয়ের ২০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন। এ-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে নিবন্ধন বিধি অনুযায়ী ত্রুটি সংশোধনের সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরই মঙ্গলবার দলের ঠিকানায় চিঠি পাঠাল। আবেদনপত্র যাচাইবাছাই শেষে টিকে থাকা দলগুলো নিবন্ধন শর্ত পূরণ করছে কি না তা যাচাই করতে মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন নেবে কমিশন। কোনো দলের নিবন্ধন নিয়ে কারও আপত্তি রয়েছে কি না দেখা হবে। বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর আপত্তি পেলে দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করবে কমিশন। বাছাইয়ে টিকে গেলে এবং দাবি-আপত্তির নিষ্পত্তি হয়ে গেলে শেষ ধাপে নিবন্ধন সনদ পাবে দলটি।