দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও কাছাকাছি সময় ধরে অযত্ন-অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে যেন আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা হারাতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। যা গত ২ মার্চ নাম পরিবর্তন হয়ে শহীদ রিয়া গোপ ক্রিকেট স্টেডিয়াম হয়েছে। বর্তমানে স্টেডিয়ামটি একেবারেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
কোনো রকমের খেলাধুলা মাঠে গড়াচ্ছে না। দুই বছর আগে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটা স্টেডিয়ামের আউটডোরে খুবই ধীরগতিতে চলমান রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অতি শিগগিরই পুরোদমে কাজ শুরু হবে। সেই সঙ্গে আবারও খেলার উপযোগী হয়ে উঠবে এই আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদাপ্রাপ্ত স্টেডিয়াম।
ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ বনাম কেনিয়ার এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি যাত্রা শুরু করে। একই বছরের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম ভারতের একটি এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে শেষ হয় এক দিনের ম্যাচের ইতিহাস। ২০০৬ সালের ৯-১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় স্টেডিয়ামটির টেস্টের ইতিহাস। এরপর ২০১৫ সালের ১০-১৪ জুন বাংলাদেশ বনাম ভারতের টেস্ট ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে শেষ হয় এই স্টেডিয়ামের টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কখনো মাঠে গড়ায়নি। তারপর মাঠটিতে দু-একটি ক্লাবের খেলা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হলেও বর্তমানে খেলাধুলার কোনো উপায় নেই। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেডিয়ামটির ভয়াবহ চিত্র। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডঘেঁষা ভিআইপি প্রবেশ গেটেই দেখা মিলবে ময়লার স্তূূপের। স্টেডিয়ামের কমেন্ট্রি বক্স ও অন্যান্য স্থাপনার গ্লাসগুলো ভাঙাচোরা। গ্যালারিতে দর্শকদের রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচার ছাউনিটিও ভেঙে গেছে। বাইরে থেকে ভিতরে প্রবেশ করার সময় যে কারও কাছে মনে হবে, এটি একটি পরিত্যক্ত জায়গা। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে স্টেডিয়ামে যেতে হাঁটার ৩ মিনিটের পথ ও অনুশীলনের জায়গাজুড়েই ছিল কোমর পানি। শুকনো কিংবা বর্ষা সব মৌসুমেই বছরের পর বছর এভাবেই পানি জমে থাকত। জমে থাকা পানিতে ছিল চরম দুর্গন্ধ আর নানা জলজ উদ্ভিদ। এরই মধ্যে জলাভূমিতে পরিণত হওয়া স্টেডিয়ামের সংস্কারে নজর পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির। ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর তৎকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির পরিচালক মো. আকরাম ও তানভীর আহমেদ টিটু পরিদর্শনে এসে জানান, তাদের নিজস্ব অর্থায়নেই আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদাপ্রাপ্ত স্টেডিয়ামকে খেলার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক খেলা না হলেও আপাতত ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন এবং প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলার আয়োজন করা হবে। বাকি কাজগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এনএসপি সম্পন্ন করবে বলে জানিয়েছিলেন।
আকরাম খান বলেছিলেন, মাঠটা আমাদের অনেক উঁচু করতে হবে। যেহেতু বাহিরের ড্রেনিংটা সিস্টেমটা অনেক খারাপ। যতটুকু পারি মাঠটা উঁচু করে খেলার উপযোগী করব। এই সিজনে পারব না নেক্সট সিজনে পারব। আপাতত মাঠটা খেলার উপযোগী করা হবে। পরে এনএসপি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে। এখন কাজ শুরু হয়েছে বছর খানেক লাগতে পারে। তারপর ইন্টারন্যাশনাল খেলা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মর্যাদাপ্রাপ্ত এ মাঠটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য গর্বের বিষয় ছিল। কিন্তু সেই মর্যাদার বিষয়টি হাতছাড়া হতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে। আমাদের দাবি, দ্রুত এই স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য উপযুক্ত করা হোক।’
বিসিবির গ্র্যাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আবদুল বাতেন বলেন, ইতোমধ্যে স্টেডিয়ামের আউটডোরে কাজ চলমান রয়েছে। আর স্টেডিয়ামের ভিতরে মাটি ফেলা হয়েছে। মাটি শক্ত না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে কাজ শুরুর ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ছিল। সেটা সমাধান হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই স্টেডিয়ামের ভিতরে কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পর বড় করে শহীদ রিয়া গোপ ক্রিকেট স্টেডিয়াম স্থাপন করা হবে।