বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভরসা করে শহীদ পরিবারকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী সুখে-দুঃখে সব সময় তাদের পাশে থাকবে বলেও তিনি জানান। গতকাল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জুলাই ২০২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’র সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় আমিরে জামায়াত শহীদ পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন। তিনি শহীদ পরিবারের নানা সমস্যা অত্যন্ত ধৈর্য ও মনোযোগের সঙ্গে শুনেন। এ সময় তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন। তিনি তাদের মহান রবের প্রতি ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দেন। তাদের সমস্যাগুলো কীভাবে দূর করা যায় সে ব্যাপারে তিনি তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা।
সভায় ‘জুলাই ২০২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন গোলাম রহমান (শহিদ নাফিসের বাবা), আবুল হাসান (শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভির বাবা), মো. মহিউদ্দিন (শহীদ ইয়ামিনের বাবা), রবিউল আউয়াল ভূঁইয়া (শহীদ ইমাম হাসান তায়িমের ভাই), শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, (শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা), নাসির উদ্দিন (শহীদ আহনাফের আব্বা), মো. কবির হোসেন (শহীদ যাবির ইব্রাহীমের বাবা), কামাল হাওলাদার (শহীদ সিফাতের বাবা), সেলিম মাহমুদ (শহীদ সজলের ভাই), রাহাত হোসাইন (শহীদ রোহানের ভাই), আবদুল্লাহ আল রইস (শহীদ মিরাজের ভাই), হোসেন আলী হাসান (শহীদ আরাফাতের ভাই), সোলাইমান (শহীদ মো. আতিকুর রহমানের ভাই), মো. অনিক (শহীদ মো. স্বজনের ভাই) প্রমুখ।
মাওলানা নিজামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করুন : জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বাংলাদেশকে একটি ইসলামি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াতের আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। ২০১৬ সালের ১০ মে রাত ১২টা ১০ মিনিটে নিজামীর মৃত্যুদ কার্যকর হয়। প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদে দি ত করা হয়।
বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে সাবেক আমিরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করছি তিনি যেন তাঁর শাহাদাত কবুল করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম, একজন আলেমে দীন ও ইসলামি চিন্তাবিদ। সততা, যোগ্যতা, উদারতা, বিনয় ও নম্রতা তাঁকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। মহান আল্লাহপ্রদত্ত যোগ্যতাবলে বাল্যকাল থেকেই প্রতিটি স্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রজীবনের শুরু থেকে ইসলামি আদর্শ প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। মতিউর রহমান নিজামী অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন যা মানুষের আত্মগঠন, পরিবার ও সমাজ গঠনে আলোর দিশা দেবে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের কল্যাণে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ইসলামি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আরও বলেন, মতিউর রহমান নিজামী নিজ এলাকা থেকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদে তাঁর গঠনমূলক ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় সংসদে তাঁর বক্তব্য ছিল দিকনির্দেশনামূলক। ইসলামি শিক্ষার প্রসারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কওমি মাদরাসার শিক্ষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল স্মরণীয়। তিনি সততা, যোগ্যতা, দক্ষতার সঙ্গে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিল্প একটি লাভজনক খাতে পরিণত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল। ২০০৬ সালে এক বৈশ্বিক জরিপে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ ব্যক্তির মধ্যে মাওলানা নিজামীকে তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০০৯ সালে অন্য এক বৈশ্বিক জরিপে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ মুসলিম ব্যক্তির মধ্যে তিনি অন্যতম বলে বিবেচিত হন।