প্রিয়জনের বিয়োগে শোক পালন করা দোষের কিছু নেই, তবে ইসলামে তার নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে। যেমন—কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের জন্য তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করার অনুমতি আছে। তবে স্ত্রীর জন্য স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস ১০ দিন শোক পালন করতে হবে। এর চেয়ে বেশিদিন শোক পালন করা ইসলামসম্মত নয়। (বুখারি, হাদিস : ১২৮০; মুসলিম, হাদিস : ৩৫৯১)
এমনকি প্রিয়জনের শোকে নীরবে চোখ থেকে অশ্রু বের হয়ে এলে তাও জায়েজ। নবীজি (সা.) তাঁর শিশুপুত্র আব্দুল্লাহর ইন্তেকালে নিঃশব্দে কান্না করেছেন। তখন আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আর আপনিও (কাঁদছেন?) তখন তিনি বলেন, ইবনে আওফ! এ হচ্ছে মায়া-মমতা...। (বুখারি, হাদিস : ১২২৫)
শোক পালনকালে নিষিদ্ধ কাজ
তবে শোক পালনের নামে অতিরঞ্জিত কাজকে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে শোক পালনের যেসব ধরন জাহেলি যুগের কুপ্রথা থেকে এসেছে। যেগুলো অন্য ধর্মের প্রথার সাদৃশ ধারণ করে এবং যেগুলো মূলত শোক নয়, বরং বিভিন্ন কুসংস্কারের চিহ্ন বহন করে। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো করতে ইসলামে অনুৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
চিৎকার, মাতম ও বুক চাপড়ানো নিষিদ্ধ : নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যারা শোকে গালে চাপড়ায়, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহেলি যুগের মতো চিৎকার দেয়, তারা আমাদের তরিকাভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১২১৯)
ইদ্দতের সময় সাজসজ্জা করা নিষিদ্ধ : উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে একজন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারের লোকেরা তার আঁখিযুগল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করল। তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে তার সুরমা ব্যবহারের অনুমতি প্রার্থনা করল। তিনি বললেন, সুরমা ব্যবহার করতে পারবে না। তোমাদের অনেকেই (জাহেলি যুগে) তার নিকৃষ্ট কাপড় বা নিকৃষ্ট ঘরে অবস্থান করত। যখন এক বছর অতিক্রান্ত হতো আর কোনো কুকুর সেদিকে যেত, তখন সে বিষ্ঠা নিক্ষেপ করত।
কাজেই চার মাস ১০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত সুরমা ব্যবহার করতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৩৮)
মুর্দা খাবারের আয়োজন করা : প্রচলিত নিয়মে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াতের আয়োজন করা। সাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকেই এটিকে নিষিদ্ধ ও মন্দ কাজ গণ্য করা হতো। জাবির (রা.) বলেন, আমরা মৃতের দাফন কার্য শেষ হওয়ার পর তার বাড়িতে একত্র হওয়া এবং (আগতদের জন্য) খাবারের আয়োজন করাকে নিয়াহা (নিষিদ্ধ পন্থায় শোক পালন)-এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৯০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬১২)
তাই মুমিনের উচিত, মৃত প্রিয়জনদের জন্য শোক পালন কোরআন-হাদিসের সীমারেখা স্মরণ রাখা। মৃত ব্যক্তির উপকার হয়, এমন আমল করা।