টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে ইন্দোনেশিয়ার ‘গ্রিন সুকুক’। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অনলাইন ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটে গুরুত্ব বিশ্লেষণ করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য, অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জেমস গিল্ড
২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সরকার মোট ৯.৬ বিলিয়ন ডলারের ‘গ্রিন সুকুক’ ইস্যু করেছে। জেনে রাখা ভালো, সুকুককে অনেকে ইসলামী বন্ড বললেও এটি প্রকৃত পক্ষে বন্ড নয়। এটি এক ধরনের সনদপত্র, যা বিনিয়োগকারীকে নির্দিষ্ট সম্পত্তিতে মালিকানার অধিকার দেয়, তাই এটি ঋণ হিসেবে বিবেচিত হয় না। ইন্দোনেশিয়ার গ্রিন সুকুক টেকসই সবুজ প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার হচ্ছে এবং এটি এমন বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য করে তৈরি, যারা পরিবেশবান্ধব (ESG) ও শরিয়তসম্মত সম্পদে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
এ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া যে ৯.৬ বিলিয়ন ডলারের গ্রিন সুকুক ইস্যু করেছে, তার মধ্যে ছয় বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক গ্রিন সুকুক ইস্যু করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রায় এবং ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের (স্থানীয় রুপিয়াহ মূল্যমানের) সুকুক ইস্যু করা হয়েছে স্থানীয় বাজারে। তাদের এই পদক্ষেপকে গ্রিন ফাইন্যান্সের সক্ষমতার এক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ইন্দোনেশিয়ার সরকার পুঁজিবাজারকে কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। তবে সম্প্রতি আমি কিছু ভুল ধারণা লক্ষ্য করেছি এসব গ্রিন সুকুক ও তাদের প্রকৃত ব্যবহার নিয়ে। তাই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করাই ভালো মনে করছি।
বিশেষ করে অনেকেই ভাবেন ইন্দোনেশিয়ার গ্রিন সুকুকের মতো জলবায়ু অর্থায়নের মাধ্যমগুলো প্রধানত নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন সৌর বা বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সে বছর পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি গ্রিন ডেট (সবুজ ঋণ) ইস্যু করেছে, যার বেশির ভাগই সরকারি বন্ড বা সুকুক থেকে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সব গ্রিন ইস্যুর প্রায় ৯৮ শতাংশেই বলা হয়েছে যে প্রাপ্ত অর্থ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় করা হবে।’
সম্ভবত প্রস্তাবে এমনটাই বলা ছিল।
কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রিন সুকুক থেকে প্রাপ্ত অর্থ আসলে যেভাবে ব্যয় করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তিসাশ্রয়ী প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় শূন্য বা অত্যন্ত সামান্য।
মূলত, ইন্দোনেশিয়ার গ্রিন সুকুকের অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে পানি ব্যবস্থাপনায়; যেমন—সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সরবরাহ ও শোধন প্রকল্পে। কিছু অর্থ রেল অবকাঠামো উন্নয়নেও খরচ হয়েছে। জনশক্তি ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, যারা সাধারণত সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ করে (বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়), তারা সুকুকের ৯৮ শতাংশ অর্থের প্রাপ্য হয়েছে।
বলা যায়, গ্রিন সুকুক হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থায়নের একটি মাধ্যম।
সেচ, পানি ব্যবস্থাপনা ও রেল যোগাযোগে বিনিয়োগ টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে যদি কেউ মনে করেন ইন্দোনেশিয়ার সরকার বিলিয়ন ডলারের গ্রিন অর্থায়ন তুলে তা সৌর, বায়ু বা ভূ-তাপীয় প্রকল্পে ব্যয় করছে, তা সঠিক নয়।
আমি মনে করি (জেমস গিল্ড), যদিও এটি নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য প্রত্যাশিত অর্থায়ন নয়, তবু এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। এটি প্রমাণ করে ইন্দোনেশিয়ার পুঁজিবাজার আরো গভীর ও শক্তিশালী হচ্ছে এবং গ্রিন সুকুকের মতো নতুন ধরনের আর্থিক পণ্যের চাহিদাও রয়েছে। এ ধরনের প্রকল্পে অর্থ জোগাড়ে বেসরকারি খাত যেখানে ব্যর্থ, সেখানে রাষ্ট্রেরই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তবে এটাও পরিষ্কার করে যে টেকসই বা গ্রিন ফাইন্যান্স একটি বিস্তৃত ধারণা। ইন্দোনেশিয়া গ্রিন সুকুকের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে এবং তা এমন প্রকল্পে ব্যয় করেছে, যেগুলো টেকসই উন্নয়নের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে; কিন্তু এই সংজ্ঞায় অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত এর বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় হয়েছে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা অবকাঠামোয়, ক্লিন এনার্জি নয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন থেকে মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজার ভাবানুবাদ
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন