শাইখ সিরাজ একজন বহুমাত্রিক নির্মাতা। সেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে খেলাধুলার অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু করে শিল্প কিংবা কৃষি নিয়ে কাজ করেছে বহু বছর আগে। তারপর বিটিভির মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানটি যথেষ্ট পরিশ্রমের সঙ্গে করেছিল অনেক বছর। আমরা যখন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম বা চ্যানেল আই শুরু করি তার কিছুদিন পর থেকেই শাইখ সিরাজ স্যাটেলাইট চ্যানেলে প্রথম কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ শুরু করে। হৃদয়ে মাটি ও মানুষকে শাইখ সিরাজ বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে নিয়ে গেছে। কৃষকের নানা সাফল্য এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরেছে। কৃষকের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছে। কৃষকের বাজেট নামে অনুষ্ঠানও নির্মাণ করেছে চ্যানেল আইতে। যেখানে কৃষি বাজেট নিয়ে প্রান্তিক জনমানুষের ভাবনা তুলে ধরেছে। কৃষকের ঈদ আনন্দ নামে একটি অনুষ্ঠান খুবই জনপ্রিয়তার সঙ্গে নির্মাণ করে চলেছে বছরের পর বছর। শাইখ সিরাজ কৃষকদের খেলাধুলা নিয়েও অনুষ্ঠান করেছে কয়েকটি। এর মধ্যে ‘কৃষকের বিশ্বকাপ ফুটবল’ ও ‘কৃষকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট’ এ দুটি অনুষ্ঠানের কথা এখনো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে।
শাইখ সিরাজের আরও অনেক অনুষ্ঠান নির্মাণের অভিজ্ঞতা আছে। চ্যানেল আইয়ের জন্য চলচ্চিত্রের গান নিয়ে একটি অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছিল। নাম ছিল- ‘রুপালি ফ্রেমে সোনালি গান’ দেশের বিখ্যাত গুণী মানুষরা উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। দুই বাংলার জনপ্রিয় নায়ক উত্তম কুমারের কোনো এক জন্মদিনে চ্যানেল আইয়ের ছাদ বারান্দায় ‘উত্তম গান’ নামে একটি অনুষ্ঠান করেছিল শাইখ সিরাজ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন উত্তম কুমারের স্ত্রী সুপ্রিয়া দেবী। অনুষ্ঠানটি চ্যানেল আইতে প্রচারের পর টেলিভিশন দর্শকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এরকম অনেক নির্মাণের কথা আছে যা এ লেখায় শেষ করা যাবে না।
একটা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হচ্ছে তার সঙ্গে। সেই ‘খাবার দাবার’ থেকে চ্যানেল আই। অনেক সময়। শাইখ সিরাজ অনবদ্য এক ব্যক্তিত্ব। টেলিভিশনের মানুষ-বহুমাত্রিক নির্মাতা।
আশ্চর্য হই তাঁর চেনা গণ্ডির বাইরেও অন্য কাজ দেখে। শাইখ সিরাজ নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্যচিত্র ‘রাজাধিরাজ’ রাজ্জাক। এটি সে বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়। সম্প্রতি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়ে আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছেন, নাম দিয়েছেন ‘জুঁইফুল’-সাবিনা ইয়াসমিন। শাইখ সিরাজ যে অনুষ্ঠানই নির্মাণ করুক না কেন তা দর্শকদের আকর্ষণ করে। তারপরও কৃষিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এবং ছাদকৃষি অনুষ্ঠানটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সমান জনপ্রিয়। এখন শুরু করেছে ছোটদের কৃষি নামে নতুন অনুষ্ঠান। নতুন প্রজন্মকে কৃষি ভাবনায় সম্পৃক্ত করতেই তাঁর এ চেষ্টা। শাইখ সিরাজের একেকটি শুটিংয়ের গল্প যখন শুনি তখন মনে হয় এই তো আমার বাংলার অবয়ব। বাংলার মুখ। সে আরও বহু বছর প্রান্তিক কৃষকের গল্পগুলো বলে যাক আমাদের এটাই প্রত্যাশা। আগামীকাল ৭ সেপ্টেম্বর শাইখ সিরাজ ৭২-এ পা রাখবে। তাঁর জন্মদিনে ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা।