বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকের ইতিহাস হলো আলো আর ছায়ার এক অনন্য মিশেল। প্রতি বছরই ছোটপর্দায় আসে নতুন নতুন মুখ-কেউ সম্ভাবনার ছাপ রেখে যান, কেউ সময়ের আগেই হারিয়ে যান। কেউ পাড়ি জমান বিদেশে, কেউ সংসারে, কেউ নীরবে অন্তর্ধান করেন শিল্পজগৎ থেকে। আজকের আয়োজনে রয়েছেন এমনই কিছু তারকা, যারা একসময় ছিলেন আলোয়, কিন্তু আজ নেই কোনো খবরে। লিখেছেন- পান্থ আফজাল
সুরাইয়া হুদা রাত্রী
‘ধূসর বসন্ত’ নাটকের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে পর্দায় আসেন রাত্রী। ‘আত্মাহুতির পালা’ নাটক তাকে আলোচনায় আনে। তবে বিয়ের পর প্রবাস জীবনে স্থিত হন, আর ফেরেননি পর্দায়।
মাহবুবা ইসলাম সুমী
লাক্স ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে আসেন আলোচনায়। ‘সাত রঙের স্বপ্ন’, ‘তখন ছিলাম আমি’, ‘সাত নম্বর বাড়ি’- এসব নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি রচনাও করতেন। পবিত্র হজ পালন শেষে বিনোদন জগৎ থেকে বিদায় নেন।
নুসরাত ইয়াসমিন টিসা
বাংলাদেশের প্রথম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা আনন্দবিচিত্রা ফটোসুন্দরীর প্রথম বিজয়ী তিনি। আতিকুল হক চৌধুরীর নাটক ‘অন্বেষণ’ দিয়ে অভিনয়ে আসেন। ‘ঘরের ছায়া’, ‘নীলিমায় নীল’, ‘ফানুস’, ‘সুখনীলয়’, ‘জলাশয় কতদূর’- এসব নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। বিয়ের পর বিরতি নিয়ে ‘লাল নীল বেগুনি’ নাটকে ফিরলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যান অভিনয় থেকে।
টনি ডায়েস
নব্বই দশকে ছিলেন বিটিভির এক প্রতীকী মুখ। ৪০০-এরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে স্ত্রী প্রিয়া ডায়েস ও মেয়ে অহনাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যান্ডে বসবাস করছেন। মাঝে মাঝে অভিনয় করেন।
শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি
‘বাংলালিংক, দেশে’ বিজ্ঞাপন দিয়ে রাতারাতি পরিচিত হন। নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন সব জায়গায় ছিলেন আলোচনায়। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের ঝড় তাকে সরিয়ে দেয় আলো থেকে। এখন কানাডার মন্ট্রিলে মেয়ে ওয়ারিশাকে নিয়ে আছেন।
নোবেল
মডেলিং জগতের কিংবদন্তি নাম। অসংখ্য বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন, অভিনয় করেছেন ‘একদা ভালোবাসা ছিল’, ‘বৃষ্টি ভেজা বিকেল’-এর মতো নাটকে। বর্তমানে করপোরেট জগতে যুক্ত, এয়ারটেল ও কোটস বাংলাদেশ লিমিটেডে উচ্চপদে কর্মরত।
প্রিয়াংকা অগ্নিলা ইকবাল
‘কথাবন্ধু মিথিলা’, ‘বিপ্রতীপ’ নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। বর্তমানে তিনি কানাডা ও ঢাকায় সময় ভাগ করে কাটান, তবে অভিনয়ে আর ফেরেননি।
সাদিয়া ইসলাম মৌ
ফটোসুন্দরী ও বাংলাদেশের টপ মডেল সাদিয়া ইসলাম মৌ। তিনি অভিনেতা জাহিদ হাসানের স্ত্রী। বর্তমানে নাচের শো, সংসার নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে অভিনয় করেন।
তনিমা হামিদ
শিশুশিল্পী হিসেবে শুরু করে পরবর্তীতে নাটকে নিয়মিত ছিলেন। এখন সংসার ও সন্তান নিয়ে ব্যস্ত, আর পর্দায় ফেরেননি। তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে রয়েছেন শিক্ষক হিসেবে।
আফসান আরা বিন্দু
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৬-এর বিজয়ী। নাটক, মডেলিং ও চলচ্চিত্রে সমান সফল। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীকে বিয়ে করে অভিনয় থেকে সরে যান। বর্তমানে দেশে আছেন, মাঝে মাঝে অভিনয় ও উপস্থাপনা করছেন। ফ্যাশন হাউস নিয়ে ব্যস্ত তিনি।
পল্লব চক্রবর্তী
নব্বই দশকের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা। ‘হঠাৎ দেখা’ দিয়ে ২০১৪ সালে সংক্ষিপ্ত প্রত্যাবর্তন করেন, কিন্তু নিয়মিত হননি।
সাবরিনা সাকা মীম
‘নতুন কুঁড়ি’ চ্যাম্পিয়ন মীম একসময় ছিলেন টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের নিয়মিত মুখ। তিনি সংবাদপাঠিকা হিসেবে ব্যস্ত।।
ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী
‘রং নাম্বার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পরই খ্যাতি পান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মাঝে মাঝে ফেসবুকে রিলস করেন।
আরও যাঁরা হারিয়ে গেছেন আলো থেকে...
একসময়ের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী মিলা হোসেন এখন যুক্তরাষ্ট্রে।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেই অভিনয় ছেড়েছেন শান্তা ইসলাম, লুৎফুন নাহার লতা, হোসনে আরা পুতুল, কুমকুম হাসান, শামস সুমন, রোমানা এলিন খান, নাফিজা জাহান, রাখি, হাসিন রওশন জাহান, সাবরিনা সাফি নিসা, তমালিকা কর্মকার।
তাদের কেউ প্রবাসে, কেউ জীবনের অন্য পথে-কেউ আর নেই কোনো খবরে, তবু টেলিভিশনের ইতিহাসে তারা রয়ে গেছেন উজ্জ্বল এক স্মৃতিচিহ্ন হয়ে। বাংলা নাটকের এই মুখগুলোই এক দিন আমাদের ঘরে ঘরে আলো জ্বেলে ছিলেন। আজ তারা ছায়ায়, কিন্তু সময়ের পাতায়, পর্দার মায়ায়, দর্শকের স্মৃতিতে এখনো অমলিন।