২৩ অক্টোবর ছিল আপনার জন্মদিন, মানে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার দিন, কীভাবে কাটল?
না তেমন ঘটা করা কোনো আয়োজন ছিল না। ঘরেই ছিলাম। পরিবার-পরিজন, আত্দীয়স্বজন আর শুভার্থীরা শুভেচ্ছা জানাল। আসলে শরীরটা খুব ভালো যাচ্ছে না তো, তাই মনটাও ভালো নেই। ফলে জন্মদিন নিয়ে এবার তেমন কোনো আয়োজন ছিল না।
পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র জগতে আছেন। এ জগৎ থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির যোগ-বিয়োগটি কেমন?
হিসাবের খাতায় শুধুই যোগ আছে। চলচ্চিত্র জগৎ আমাকে সব কিছুই দিয়েছে। চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নেই। এখানে সবাই আমার আপনজন। তা না হলে চারবার চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হতে পারতাম না। তা ছাড়া সবার সমর্থনে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেক সংগঠনেরও নেতৃত্ব দিয়েছি।
মুক্তিযুদ্ধ এবং সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণে আপনার অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। এখন কোন বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা আছে?
হ্যাঁ, স্বাধীন দেশে প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'ওরা ১১ জন'সহ ছয়টি যুদ্ধের ছবি নির্মাণ করি। তা ছাড়া ১২টি সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছি। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা দীর্ঘদিনের। অনেক ভাষাসৈনিকের সঙ্গে এ নিয়ে বহুবার আলাপও করেছি। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে পারিনি।
এক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় কী?
আর্থিক সহায়তাই প্রধান অন্তরায়। এ ধরনের ছবি নির্মাণে কোনো প্রযোজক অর্থলগ্নি করতে চান না।
চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করার অবদানের জন্য সরকার আপনাকে কতটা মূল্যায়ন করেছে?
সরকারি মূল্যায়নে আমি সন্তুষ্ট। ২০০৪ সালে আমাকে একুশে পদক দেওয়া হয়। শ্রেষ্ঠ নির্মাতা হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। এ ছাড়া আমার নির্মিত 'শুভদা' চলচ্চিত্রটিকে ১২ ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। যা এখন পর্যন্ত কোনো ছবির জন্য সর্বোচ্চ জাতীয় অর্জন। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় আমার ছবি নানা শাখায় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। পাশাপাশি বহু সংগঠন এ পর্যন্ত আমাকে দেড় শতাধিক পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
চলচ্চিত্র জগতের বর্তমান অবস্থা আপনার দৃষ্টিতে কেমন?
আমাদের চলচ্চিত্র এখন কোনোভাবে বেঁচে আছে। ডিজিটালের নামে যা নির্মাণ হচ্ছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তাই ৩৫ মিলিমিটারের শুটে ফিরে যাওয়ার বিকল্প নেই। বিশ্বে এ নিয়মই চলছে। সিনেমা হলের পরিবেশও উন্নত করতে হবে। এসব বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
আগামীতে দর্শক আপনার কাছ থেকে কী উপহার পাচ্ছে?
শীঘ্রই দর্শক আমার নির্মিত 'ভুল যদি হয়' ও 'অন্তরঙ্গ' ছবি দুটো দেখতে পাবে। তবে চলচ্চিত্রশিল্পের বর্তমান অস্থিতিশীল অবস্থার অবসান না হলে ভবিষ্যতে হয়তো আর ছবি নির্মাণ করা যাবে না। দর্শকের ভালোবাসা নিয়ে এখনো বেঁচে আছি। তাদের জন্য রইল আমার শুভ কামনা ও কৃতজ্ঞতা। দর্শকের ভালোবাসা না পেলে আজ আমি চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল হয়ে উঠতে পারতাম না। সবার ভালোবাসা আর দোয়া নিয়ে বাকি পথটা এগিয়ে যেতে চাই। যেন শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠে সুন্দর পরিবেশে আরও ভালো ছবি সবাইকে উপহার দিতে পারি।