ঢালিউডের 'শীর্ষ নায়ক' খেতাব অক্ষুণ্ন রাখলেন শাকিব খান। আট বছরেরও বেশি সময় ধরে ঈদে তার অভিনীত ছবি মুক্তি পাচ্ছে সর্বাধিক। তাছাড়া স্বল্পসময়ে একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তি, চলচ্চিত্র প্রযোজনাতেও সফলতা, ঢাকার ছবির সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকের নায়ক, সর্বোচ্চ টেবিল কালেকশন, সবচেয়ে বেশি ব্যবসা সফল ছবি উপহার দেওয়া, ঢাকাই ছবির নায়ক সংকটে একাই দীর্ঘদিন হাল ধরে রাখা, পর পর দুবার বিপুল ভোটে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হওয়া ইত্যাদি কারণে নায়ক হিসেবে শীর্ষেই আছেন শাকিব খান। তার অভিনয় জীবনের সাত সতেরো নিয়ে কারও মনে কোনো প্রশ্ন বা বিতর্ক তৈরি হয়নি কখনো, এখনো নেই।
প্রদর্শকদের কথায় 'শাকিব হচ্ছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ভাগ্য দেবতা। কারণ নানা কারণে ঢালিউডের অবস্থা যখন নাজুক তখন একমাত্র এই নায়কের ওপর ভর করে টিকে থাকে চলচ্চিত্র শিল্প। পর্বত উঁচু দর্শকপ্রিয়তার কারণে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক, টেবিল কালেকশন ও রেন্টাল দিয়ে ঢাকাই ছবিতে ইতিহাস গড়েন তিনি। তার ছবির জন্য সিনেমা হল মালিক ও দর্শক এখনো মুখিয়ে থাকে।'
এবারের ঈদে মুক্তি প্রতীক্ষিত ৪টি ছবির মধ্যে দুটির নায়ক শাকিব খান। ছবিগুলো হচ্ছে- এস এ হক অলিক পরিচালিত 'আরও ভালো বাসবো তোমায়' এবং শাহিন সুমনের 'লাভ ম্যারেজ'। শাকিব বলেন, চেষ্টা করি দর্শকদের সবসময় নতুন কিছু উপহার দিতে। এবারের ঈদে আমার দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। দুটি ছবিতেই আমার চরিত্র ভিন্ন ধরনের। তাই একজন দর্শক দুটি ছবি দেখেই তৃপ্ত হবেন। সবসময় চাই দর্শক যেন আমার কাজে বিরক্ত না হন। একারণেই বারে বারে নিজেকে ভেঙেচুরে পর্দায় নতুনভাবে উপস্থাপনের প্রত্যয় থাকে। একসময় নির্মাতাদের চাপে গল্প বাছাইয়ের সুযোগ পেতাম না। পরে ভাবলাম যাচাই-বাছাই না করে কাজ করলে দর্শক হতাশ হবেন। তাই এখন কাজ কমিয়ে দিয়েছি। গল্প পছন্দ না হলে ছবি হাতে নেই না। তাছাড়া এখন বিশ্বায়ন ও প্রতিযোগিতার যুগ। তাই মানসম্মত কাজ চাই। আমাদের ছবিকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের বিকল্প নেই। নিজের কাজকে ঘরে বন্দী করে রাখলে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। আমি চাই আমাদের ছবি নিয়ে বিশ্ব দরবারে প্রতিনিধিত্ব করতে। এজন্য এফডিসি ও সিনেমা হলসহ পুরো চলচ্চিত্র শিল্পকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতার বিকল্প নেই। শুধু একটি দিনকে চলচ্চিত্র দিবস ও চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করলেই চলবে না। শিল্পের পূর্ণ মর্যাদাও দিতে হবে। আমি এখন থেকে বছরে কমপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক মানের ছবি নির্মাণ করব। এসব ছবি বিদেশেও মুক্তি দেওয়া হবে। মোট কথায় দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রচার ও প্রসারে সর্বাত্দক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।
১৯৯৪ সালে আফতাব খান টুলুর ছবি দিয়ে সোহেল রানা নামের ছিপছিপে গড়নের একটি ছেলে শাকিব খান নামে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটান। সেই ছবিটি মুক্তি না পেলেও ১৯৯৬ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত 'অনন্ত ভালোবাসা' শাকিবের মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি। প্রথম ছবিতেই দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যান তিনি। তারপর দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়া। ২০০৬ সালে বড় পর্দায় আসা এফ আই মানিকের 'কোটি টাকার কাবিন' ছবিটি এই সুদর্শন ও বলিষ্ট অভিনেতার চলার পথকে আরও মসৃণ করে দেয়। সেই থেকে শাকিব খান ঢালিউডের সর্ব গ্রহণযোগ্য শীর্ষ নায়ক হয়ে আছেন।
এবারের ঈদে শাকিবের মুক্তি পেতে যাওয়া দুটো ছবি নিয়েই দর্শক ও প্রদর্শকদের মধ্যে রয়েছে আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা। কারণ গল্প, আর নির্মাণের কারণে দুটি ছবিই ব্যতিক্রমী মান নিয়ে আসছে। শাকিবের অভিনয় জাদু তো আছেই। তার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে সিনিয়র শিল্পীরাও একবাক্যে স্বীকার করে বলেন, ছেলেটা অভিনয়ের 'অ' 'আ' শিখেই এসেছে। এক কথায় সে অল রাউন্ডার। তাকে নিয়ে নিশ্চিন্তে কোটি কোটি টাকা লগি্ন করা যায়। শাকিব মানেই ঝুঁকি নেই।
ঈদের ছবি দুটোর মধ্যে এস এ হক অলিকের 'আরও ভালো বাসবো তোমায়' ছবিতে দেখা যাবে শাকিব একজন জনপ্রিয় চিত্র নায়ক। এক অজানা মেয়ের প্রেমে পড়েন তিনি। একদিন ইউনিটের লোকজন নিয়ে শাকিব মেয়েটির বাসায় যান। মেয়ের বাবা ফিল্মের মানুষদের দেখে খুশি হন। কিন্তু যখনই শাকিব বিয়ের প্রস্তাব দেন তখনই মেয়ের বাবা না করেন। শুরু হয় নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত। অন্যদিকে শাহিন সুমনের 'লাভ ম্যারেজ' ছবিতে দেখা যাবে শাকিব কিছুতেই তার বাপ দাদার পুরনো ঐতিহ্য, পুরান ঢাকার সাজ পোশাক বদলাতে চান না। এ নিয়ে শুরু হয় অপু বিশ্বাসের সঙ্গে তার প্রেমের যুদ্ধ। প্রথম ছবিতে সম্পর্কের টানাপড়েন আর শেষ ছবিতে কমেডি নিয়ে ঈদে দর্শক মন আরও আনন্দে ভরিয়ে দেবেন এবং শীর্ষ নায়কের তকমা অক্ষুণ্ন রাখবেন শাকিব খান; এ প্রত্যাশা এখন সিনেমাপ্রেমী মানুষ আর এই নায়কের প্রিয় দর্শক-ভক্তের।