পরিবেশ ফিরছে সিনেমা হলে। আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, ভগ্নদশা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশের কারণে বেশির ভাগ সিনেমা হলেই দীর্ঘদিন দর্শক যেতে পারছে না। এতে চলচ্চিত্রের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। এ দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী ও সিনেমা হল-মালিকরা দীর্ঘদিন সরকারের কাছে অনুদানের আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে সরকার তাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছে। সিনেমা হল সংস্কারে অনুদান দিতে যাচ্ছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে ১৫টি প্রেক্ষাগৃহ পাচ্ছে এই অনুদান। এতে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এদিকে বসুন্ধরা শপিং মলের স্টার সিনেপ্লেক্সে গতকাল থেকে চালু হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দুটি সিনেমা হল। সব মিলিয়ে নতুন করে আলো জ্বলতে শুরু করেছে চলচ্চিত্রের উঠোনে।
গত বছরের ১১ অক্টোবর তথ্য, সংস্কৃতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চলচ্চিত্রকারদের বৈঠক হয়। এতে সরকারের কাছে চলচ্চিত্র শিল্পের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। এসব সমস্যার মধ্যে প্রেক্ষাগৃহের নাজুক পরিবেশসহ পাইরেসি ও নকল চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়টিও উঠে আসে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চলচ্চিত্রকারদের আশ্বস্ত করে বলেন, দর্শক যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রেক্ষাগৃহে যেতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে সরকার। যেসব প্রেক্ষাগৃহ মালিকের সংস্কার কাজের আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের অনুদান দেওয়া হবে। তা ছাড়া নতুন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণেও অনুদান প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করবে সরকার। এর আগে গত বছরের ১২ আগস্ট তথ্য মন্ত্রণালয়ে চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকার আধুনিক প্রযুক্তির সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। রিপোর্ট পাওয়ার পর অনুদান ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়। বৈঠকের এজেন্ডা ছিল, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন ব্যবস্থা চালুর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি অনুদান নীতিমালা প্রণয়ন। এতে সভাপতিত্ব করেন তথ্যসচিব মরতুজা আহমেদ। বৈঠকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। একটি হলো সিনেমা হল নির্মাণ ও আধুনিকায়ন করার কারিগরি প্যাকেজ প্রণয়নে সাব-কমিটি এবং অন্যটি হলো সিনেমা হল নির্মাণে অনুদান নীতিমালা গঠনের প্রস্তাব সংবলিত টেকনিক্যাল কমিটি। প্রথম কমিটির সভাপতি হলেন ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। কমিটিতে আরও ছিলেন সাইফুল ইসলাম, মো. হোসেন জেমী, সুদীপ্ত কুমার দাশ, ক্যাথরিন মাসুদ, সোহানুর রহমান সোহান। অন্যটির সভাপতি ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব [উন্নয়ন] হারুনুর রশীদ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, খোরশেদ আলম খসরু, গুলজার, মিয়া আলাউদ্দীন ও উপসচিব তথ্য মন্ত্রণালয়।
১২ আগস্টের বৈঠকে তথ্যসচিব বলেন, সার্বিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতি জেলায় তথ্য অফিসের নিজস্ব ভবন স্থাপন করা হবে এবং চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে এসব ভবনে একটি করে সিনেমা হল থাকবে। সভায় সিনেমা হলের আধুনিকায়নে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য চিত্রপরিচালক সোহানুর রহমান সোহান জানান, প্রায় তিন-চার মাস আগে টেকনিক্যাল কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। এতে প্রথম দফায় ৫০টি সিনেমা হলকে তিন ক্যাটাগরিতে অনুদান দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চলতি বছরই তিন ক্যাটাগরিতে ১৫টি সিনেমা হলকে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হলের জন্য ৫০ লাখ, ব্লোয়ারযুক্ত হলের জন্য ৪০ লাখ এবং বৈদ্যুতিক পাখা যুক্ত হলের জন্য ৩০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তিনি আরও জানান, প্রথম দফায় অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু পুরনো সিনেমা হলগুলোকেই নির্বাচন করা হচ্ছে। পরবর্তীতে নতুন সিনেমা হল নির্মাণের জন্যও অনুদান পাওয়া যাবে।
টেকনিক্যাল কমিটির অপর সদস্য চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, এই অনুদানের ফলে চলচ্চিত্র ব্যবসা অনেকটাই প্রাণ ফিরে পাবে। কারণ সিনেমা হলের পরিবেশ উন্নত হলে দর্শক ছবি দেখতে সেখানে যেতে আগ্রহী হবে। তবে বাকি হলগুলোও আগামী বছরের মধ্যে সংস্কার এবং নতুন সিনেমা হল নির্মাণে সরকার দ্রুত অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করলে চলচ্চিত্র ব্যবসায় শতভাগ প্রাণসঞ্চার হবে। কারণ সিনেমা হলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় দেশীয় চলচ্চিত্র ব্যবসা মন্দার কবলে পড়েছে। একই সঙ্গে নির্মাতাদেরও যথেষ্ট পরিমাণে এবং মানসম্মত ছবি নির্মাণ করতে হবে। না হলে শুধু সিনেমা হল নির্মাণ বা সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। ছবির অভাবে দর্শক সিনেমা হলে যাবে না। এদিকে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ভিআইপি সিটিং ডলবি অটমোস সাউন্ড সিস্টেম সিনেমা হল। গতকাল বসুন্ধরা শপিং মলে উদ্বোধন করা হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ দুটি সিনেমা হল। যা এ দেশে এই প্রথম। ফলে সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে দেশীয় ছবি দেখার আগ্রহ পুরোমাত্রায় ফিরবে বলে বিশ্বাস চলচ্চিত্রকারদের।