২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেসলি মুনভিস আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের একজন। তিনি সিবিএস করপোরেশনের চেয়ারম্যান যে চ্যানেলের 'সিক্সটি মিনিটস' থেকে 'দ্য বিগ বিং থিওরি'র মতো শোগুলো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে। সিবিএসের ক্যাবল নেটওয়ার্ক শোটাইম থেকে শুরু করে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সিমন ও স্কাসটার, স্ট্রিমিং সার্ভিস, সিবিএসের সবজায়গায় মুনভিসের বেশ প্রভাব। দক্ষ জনবল নিয়োগ ও প্রজেক্ট নির্বাচনে সিবিএস করপোরেশনের চেয়ারম্যান ৬৮ বছর বয়সী মুনভিসের বেশ খ্যাতি রয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সম্প্রতি মুনভিসকে 'টিভি প্রোগ্রামিং উইজার্ড' এবং দ্য হলিউড রিপোর্টার তাকে 'ওয়াল স্ট্রিট' হিরো হিসেবে আখ্যা দেয়। বিশ্ব মিডিয়ায় যে কয়জন হাতে গোণা মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আছেন তাদের একজন এই মুনভিস। গত বছর তার আয়ের পরিমাণ ছিল ৭০ মিলিয়ন ডলার যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে পারিশ্রমিক পাওয়া কর্পোরেট নির্বাহীদের তালিকায় জায়গা করে দেয়।
গত কয়েক মাসে মুনভিস হলিউডে যৌন নিপীড়নবিরোধী #মি টু আন্দোলনেও ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। গত ডিসেম্বরে তিনি যৌন হয়রানি বন্ধ ও কর্মক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠায় কমিশন গঠনেও সাহায্য করে ছিলেন। হলিউডে যৌন নিপীড়ন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে গত নভেম্বরে মুনভিস বলেছিলেন, 'এটি অনেক বড় মাইলফলক। আমি মনে করি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে একটি কোম্পানি কখনই বৈষম্য করবে না। আমরা অনেক কিছু শিখছি। অনেক কিছুই আমরা জানতাম না।'
মুনভিসের ব্যক্তিগত জীবন তার বাইরের পরিচ্ছন্ন জীবনের পুরোটাই বিপরীত। ছয় নারী যাদের সঙ্গে পেশাগত কারণে মুনভিসের যোগাযোগ হয়েছিল তারা বলেছেন, ১৯৮০ এর দশকে মুনভিস তাদের যৌন হয়রানি করেছেন। চার জন বলেছেন, পেশাগত বৈঠকের সময়েই মুনভিস তাদের জোর করে স্পর্শ করেছেন এবং চুমু খেয়েছেন। যেটা রীতিমতো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
দুইজন নারী বলেছেন, মুনভিস তাদের আঘাত করেছেন এবং তাদের ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তারা সবাই এও বলেছেন, মুনভিস তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করেছেন এবং তার অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় শত্রুর মতো আচরণ করেছেন। তারা মনে করেন, এর ফলে তাদের ক্যারিয়ারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অভিনেত্রী ও লেখিকা ইলিয়েনা ডগলাস বলেছেন, আমার সঙ্গে মুনভিস যা করেছেন তা যৌন হয়রানি। আমি তাতে সাড়া না দেয়ায় আমাকে বহিষ্কার করা হয়।
সব নারীই বলেছেন এখনো তারা মুনভিসের এসব নিপীড়ন নিয়ে কথা বলতে ভয় পান। কারণ মুনভিস চাইলে কারও ক্যারিয়ার গড়ে দিতে পারেন কিংবা নষ্ট করেও দিতে পারেন।
লেখিকা জেনেট জোন্স বলেছেন, মুনভিস দশকের বেশি সময় ধরে এসব করে গেছেন। সে আমাকে কাজ নিয়ে বৈঠকের সময় জোর করে চুমু খেয়েছে। আমি তাকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ সেটি স্বাভাবিক কিছু ছিল না।
১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মুনভিসের এসব যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে সিবিএস। এসব ঘটনা ফাঁস হওয়ায় কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬ ভাগ কমে গেছে।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্কার
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা