গত কয়েক দশকের মধ্যে নজিরবিহীন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বলিউড অভিনয় শিল্পী, কলাকুশলী ও চিত্রনাট্যকাররা। এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন প্রতিবাদে। তারা এই আন্দোলনে যেমন ভালো কর্মপরিবেশ ও মুনাফা ন্যায্যভাবে বণ্টনের দাবি তুলছেন, ঠিক সেভাবেই সিনেমায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার নিয়েও কিছু জায়গায় তুলেছেন আপত্তি। সিনেমায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের পুরোপুরি বিপক্ষে নন তারা, তবে যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ে তাদের আপত্তি আছে। তারা মনে করছেন, সিনেমা একটি মানবিক শিল্প মাধ্যম। এখানে বাছবিচারহীনভাবে মানুষের বদলে এআই’র ব্যবহার সুফল বয়ে আনবে না। কেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা এআই’র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড মনে করছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিদ্যমান সৃজনশীল পেশাটির অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এরইমধ্যে হলিউডের বেশকিছু সিনেমায় অভিনয় শিল্পীর বদলে এআই নির্মিত অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজে লাগানো হচ্ছে।
শিল্পী ইউনিয়নের দাবি, এআই ব্যবহার করে শিল্পীদের ক্লোন করা হচ্ছে। তাদের ভয়েস চেহারার আদল চুরি করেই বানানো হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মিত নানা চরিত্র।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার জাস্টিন ব্যাটম্যান বলেছেন, ‘প্রযুক্তি সমস্যা সমাধানের কাজে ব্যবহার হওয়া উচিত। আর এখানে এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান করতে এআই’র দরকার পড়বে। আমাদের চিত্রনাট্যকারদের কোনো ত্রুটি নেই, অভিনয় শিল্পীদেরও নেই, আমাদের নির্মাতাদের তেমন ত্রুটি নেই। সুতরাং আমাদের এআই’র দরকার নেই।’
এই নির্মাতা মনে করেন, সিনেমায় অর্থলগ্নি করা প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক মুনাফার আশায় মানুষকে ছেটে ফেলে এআই টেনে আনছে। তার মতে এআইর আধিপত্য বাড়লে সিনেমা শিল্প কেবল ব্যবসার কাঠামোতে পরিণত হবে।
অনেকে আবার বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে কোনো মানবিক বিচার-বোধ নেই। এগুলো কোনোভাবেই সিনেমার চিত্রনাট্য দারুণ করে তুলতে পারবে না। তারপরও এরা চিত্রনাট্যকারদের বিদায়ী ঘণ্টা বাজানোর কারণ হতে পারে।
টিভি, সিনেমা, নাটক ও বই লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব ব্রিটেনও এআইর বিষয়ে বেশকিছু উদ্বেগের কথা সামনে এনেছে। তারা বলছে, এআই অনুমতি ছাড়াই লেখকদের লেখা ব্যবহার করছে। কোন ধরনে কন্টেন্ট স্বতন্ত্রভাবে এআই তৈরি করতে পারবে তাও এখনও চিহ্নিত নয় বলেই মনে করে সংস্থাটি। তারা আরো মনে করছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে লেখকদের কাজের পরিধি যেমন কমবে তেমন কমকে পারিশ্রমিকও।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল