সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

শুদ্ধি অভিযানে খালেদা

* দলে এক নেতার এক পদ রাখার চিন্তা * পুনর্গঠন শুরু যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল দিয়ে

শুদ্ধি অভিযানে খালেদা

বিপর্যস্ত দলকে টেনে তুলতে এবার কেন্দ্র থেকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে ‘এক নেতার এক পদ’ রাখারও চিন্তাভাবনা করছেন তিনি। সর্বশেষ দলের জাতীয় কাউন্সিলে এ উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত কিছু প্রভাবশালী নেতার আপত্তিতে হাইকমান্ড এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে এবার বেগম জিয়া একাধিক পদধারী নেতাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তিনি দলে ‘এক নেতার এক পদ’-এই ধারা বাস্তবায়নের ব্যাপারে অনড়। আগামী কয়েক মাসে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী বছরের শুরুতে ফের সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।  ঈদের পরই ঘোষণা করা হবে যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি। দলীয় একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা যায়, ‘যারা কেন্দ্রে থাকবেন তারা জেলা নেতৃত্বে কোনো খবরদারি করতে পারবেন না’-এমন সিদ্ধান্তই নিতে যাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বেগম জিয়া। পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগরসহ জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন তিনি। তবে দলের সব কমিটিতেই অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।  

সূত্র মতে, তিন সিটি নির্বাচনের পর বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার পাশাপাশি  পেশাজীবী সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বেগম জিয়া। সেখানে দলীয় নেতারা ছাড়াও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে বিএনপি প্রধানকে অনুরোধ করেন। বিগত আন্দোলনে মাঠে সক্রিয়, ত্যাগী ও যোগ্যদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার কথাও বলেন তারা। বিএনপি চেয়ারপারসনও তাদের বক্তব্যে একমত পোষণ করে বলেন, শিগগিরই তিনি দল পুনর্গঠন করবেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কারামুক্তির অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে এবার ঢাকা মহানগর থেকেই এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে দলের নির্বাহী কমিটির সভা ও জাতীয় কাউন্সিল করার কথাও জানান তিনি। এবার কাউন্সিলে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হবে বলেও দলীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে। দল পুনর্গঠনের কথা জানিয়ে সম্প্রতি কর আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমাদেরকে দলের পুনর্গঠনে যেতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা সেই প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। যারা ত্যাগী-পরীক্ষিত, দলের বিপদের সময়ে কাজ করেছেন, তাদের কমিটিতে আনা হবে। তাদের মূল্যায়ন করা হবে।’ জানা যায়, কেন্দ্র থেকেই এবার শুরু হবে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এর আগে কয়েকদফায় তৃণমূল থেকে শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়। এ নিয়ে আপত্তিও আসে মাঠপর্যায় থেকে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি, ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারপরও শাস্তির খগড় এসেছে তৃণমূলে। কেন্দ্রেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি অনুরোধ জানান তারা। জানা যায়, বিষয়টি আমলে নিয়ে বেগম জিয়া সেই উদ্যোগই নিতে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে প্রথমেই শুদ্ধি অভিযান চালাবেন তিনি। এ জন্য কাজও শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে পোলিং এজেন্টদের তালিকা হাতে পেয়েছেন খালেদা জিয়া। এর বাইরেও আন্দোলনে থাকা মাঠের নেতাদেরও পৃথক তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের দায়ের করা প্রায় ২০ হাজার মামলার মধ্যে ১৫ হাজারের তালিকা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোর তালিকা চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব জেলা ও উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা রয়েছে, সেখানেও কেন্দ্রীয় সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় দায়িত্ব পাওয়া এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশমতে মাঠপর্যায়ের যারা মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে আত্মগোপনে কিংবা জেলে রয়েছেন তাদেরও পৃথক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। মূলত ঢাকার ওয়ার্ড ও থানা কমিটি করার ক্ষেত্রে এসব নেতাদেরই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে।  

জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলেই ‘এক নেতার এক পদ’ রাখার চিন্তা ছিল বিএনপি প্রধানের। দলের একটি অংশের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। দলের গঠনতন্ত্রেও এক নেতার একাধিক পদে থাকাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। একাধিক পদধারী ওইসব নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অনেক অভিযোগও জমা পড়েছে। বিগত আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার কাছে যেসব ভুলত্রুটি ধরা পড়েছে তার মধ্যে রয়েছে, এক নেতা কয়েকটি পদ দখল করে রাখায় মাঠের অনেক ত্যাগী নেতা পদবঞ্চিত হয়। আন্দোলনে তাদের মাঠে নামানোর অনুরোধও করা যায়নি। তারপরও তারাই বিগত আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে বেগম জিয়ার কাছে এমনই রিপোর্ট এসেছে। তাই এবার ওইসব ত্যাগী ও দলের প্রতি অনুগত নেতাদেরও দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পৃক্ত করার চিন্তাভাবনা করছেন বেগম জিয়া। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘এক জনের একাধিক পদে থাকা উচিত নয়। প্রয়োজনে এ জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধন করা উচিত। কারণ, যারা একাধিক পদ দখল করে আছেন, তারা পদ ছাড়তে চান না। এতে দল নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। আন্দোলনেও এর প্রভাব পড়ে। যোগ্যরাও দল থেকে ছিটকে পড়ে। এ কারণেই বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোতে এখন নেতৃত্বের জট সৃষ্টি হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে রংপুর বিভাগীয় এক নেতা জানান, এক নেতা একাধিক পদে থাকলে দলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া তারাও বিভিন্ন ধরনের বাড়তি সুযোগ সুবিধা পান। ক্ষমতাকে নিজের পকেটে বন্ধ করে রাখেন। আর এ কারণেই কেউ পদ ছাড়তে চান না। হাইকমান্ড নির্দেশ দিলেও একাধিক পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অজুহাতে থেকে যান। এভাবেই তারা বছরের পর বছর দলের বিভিন্ন স্তরে একাধিক পদ আঁকড়ে রাখছেন। সামনে দলের কাউন্সিলে এ ধরনের পদকে গঠনতান্ত্রিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর