আর কয়েকদিন পরেই খুশির দিন আসছে। বন্ধুদের বলব, ঈদ মোবারক। একটা খোশ মেজাজ ছিল, ভেবেছিলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকের জন্য মজার লেখা লিখব, খুশির দিনে সেই লেখা পড়ে ভালো লাগবে সবার। কিন্তু ভাই, শুক্রবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় যখন খবরটা জানতে পারলাম তখন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। শুক্রবার রাতের নামাজ পড়ার সময়, যখন মসজিদ থেকে আজান দেওয়া হচ্ছিল সেই সময় যারা একের পর এক খুন করতে পারে তারা কি মানুষ? ঘুম চলে গিয়েছিল। বারবার ঢাকায় ফোন করেছি। অবাক হয়ে জানলাম, আমার যে বন্ধু গেণ্ডারিয়া বা বাংলাবাজার থাকেন; এ ঘটনার কথা তিনিও টিভি দেখে জেনেছেন। দোতলার বারান্দায় গিয়ে দেখেছেন রাস্তাঘাট স্বাভাবিক। একটু পরে তার ফোন এলো মানুষজন রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে, গুলশানে ভয়ঙ্কর হত্যালীলা যারা চালিয়েছে তাদের ধিক্কার দিচ্ছে। তারপরই তিনি মহামূল্যবান প্রশ্নটি করলেন, ধিক্কার জানানো ছাড়া আমরা আর কী করতে পারি? কিছুই না। উত্তরে বলেছিলাম, চুপ করে ঘরে বসে না থেকে ধিক্কার জানানোটা যে অত্যন্ত জরুরি কাজ। এ মুহূর্তে আপনি যেমন গুলশানে নেই, আমিও না। কিন্তু ঢাকার বাংলাবাজার আর কলকাতার শ্যামবাজারে থেকেও আমাদের হৃদয় যে রক্তাক্ত হচ্ছে এটা না হলে আমরা কেঁচো বা পিঁপড়া হয়ে যেতাম। ধীরে ধীরে দেখলাম সেই মজার লেখাটা এ মুহূর্তে আমি লিখতেও পারছি না। চোখ বন্ধ করেও কয়েকশ’ মাইল দূরে বসেও গুলশানের রেস্তোরাঁতে নিহত মানুষের মুখগুলো দেখতে পাচ্ছি। যে পুলিশ কর্তারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হলেন তাদের সম্মান জানাতে মাথানত করে আছি। এ অবস্থায় মজার গল্প লেখা কি সম্ভব। যত বেলা গড়াচ্ছে তত নানা চিন্তা মাথায় আসছে, এই যে নির্মম হত্যাকাণ্ড হলো, তাতে কার কী লাভ হলো? যারা ওই রেস্তোরাঁকে বেছে নিয়েছিল তারা নিশ্চয়ই জানত চারপাশে চৌত্রিশটি বিদেশি দূতাবাস থাকায় তাদের কর্মীরা ওখানে খেতে আসবেন। হত্যাকাণ্ড চালালে সারা পৃথিবীতে খবরটা প্রচারিত হবে। মনে প্রশ্ন আসছে, সেই খবর প্রচার করে ওদের কী লাভ হলো? ধরা যাক ওখানে যারা খেতে এসেছিল তাদের বন্দী করে সরকারকে বাধ্য করাতে চেয়েছিল ইচ্ছা পূর্ণ করতে। হয়তো দলের কাউকে জেলমুক্ত করতে চেয়েছিল, কিন্তু ওরা নিশ্চয়ই জানত সরকার যদি তেমন প্রস্তাবে রাজি হতো তাহলেও গুলশানের ওই রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে গোপন জায়গায় যেতে পারত না। তার আগেই শাস্তি পেতে হতো। তাহলে এই পরিকল্পনা করে ওদের কী লাভ হতো? আমরা জেনেছি ওরা বাংলাদেশের মানুষ। বিশ্বাস করতে না চাইলেও এটা মিথ্যা নয়। এদের বাড়ি কোথায়? প্রচুর অস্ত্র নিয়ে এরা গণহত্যা করবে বলে এসেছিল? অস্ত্রগুলো কোথায় পেল, এই প্রশ্ন করছি না। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে চোরাকারবারিরা যে অস্ত্র ব্যবসায় খুব সফল তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। কিন্তু সেই অস্ত্র ব্যবহার করতে শিক্ষা নিতে হয়। আপনি আমি তো একটা এ কে ফোর্টি সেভেন দেখামাত্র চালাতে পারব না। এরা যখন অস্ত্র চালনা শিখছিল তখন কেউ টের পেল না কেন? সেই সন্ধ্যেবেলায় ওরা অস্ত্রসমেত গুলশানের রেস্তোরাঁতে কীভাবে এসেছিল। মনে রাখতে হবে, এটা দূতাবাসের এলাকা। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ জোরদার। সেই নিরাপত্তা প্রহরীদের দেখার অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে। কিন্তু ঘটনার দিন যদি তারা সজাগ থাকতেন তাহলে হত্যাকারীরা রেস্তোরাঁতে পৌঁছাতেই পারত না। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে, তাই এখন এসব ভাবছি। কিন্তু প্রশ্নটা রয়েই গেল, ঘটনা ঘটিয়ে কার কী লাভ হলো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, নামাজের সময় যারা খুন করতে পারে তারা কীরকম মুসলমান? অন্ধ জঙ্গিদের কোনো ধর্ম থাকে না। তারা যে কাজ করে তার পেছনে নিজেদের ইচ্ছা থাকে না, মতলববাজ নির্দেশকের নির্দেশ অনুযায়ী করে থাকে, কাউকে স্বর্গ, অথবা হেভেন বা বেহেশত যাওয়ার লোভ দেখিয়ে হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু এতে কার কী লাভ হয়? নিরীহ যেসব মানুষ নিহত হলেন, তাদের পরিবারে এখন শোকের ঘন ছায়া। যারা হত্যাকারী তাদের পরিবারের মানুষরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যারা হত্যা করতে এসে নিহত হয়েছেন তারা যদি পরে দৃশ্যগুলো দেখতে পেত তাহলে নিজেদের উন্মাদ ছাড়া অন্য কিছু ভাবত না। দেখতে দেখতে দিনের পরে দিন চলে যাবে। পদ্মা মেঘনায় প্রচুর জল বয়ে যাবে। ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার পর যে দাগ থেকে যায় ঠিক তেমনি গুলশান হত্যাকাণ্ডের দুঃসহ স্মৃতিও থেকে যাবে। কিন্তু কে উত্তর দেবে, যারা হত্যা করল তাদের কী লাভ হলো? কারও কোনো লাভ হলো না কিন্তু ক্ষতি হলো বাংলাদেশের। আতঙ্কিত হলো ভারতবর্ষ আর লজ্জায় অপমানে কেঁপে উঠল ভালোবাসা।
শিরোনাম
- সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে খালেদা জিয়া
- সাদিয়া আয়মানের অভিনয়ে মুগ্ধ অনিরুদ্ধ রায়
- গাইবান্ধা কারাগারে অসুস্থ হয়ে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
- আদাবরের শীর্ষ ছিনতাইকারী ‘চোরা রুবেল’ গ্রেপ্তার
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
- শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে বিভাগীয় শহরে বাস দিল জবি
- ভূমিকম্প অনিশ্চিত তাই বিদ্যালয় বন্ধের সুযোগ নেই: প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা
- ঢাকা মেডিকেলে একাডেমিক কার্যক্রম আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ
- বাগেরহাটে ৩ বান্ধবীকে শ্লীলতাহানি ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
- হাসিনা-কামালকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ কার্নিভাল-৩ অনুষ্ঠিত
- নভেম্বরের ২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২১৩ কোটি ডলার
- ফ্যাসিজম সহ্য করা হবে না, নিজেরাও ফ্যাসিষ্ট হবো না: তানিয়া রব
- বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
- ৮১ দেশি পর্যবেক্ষকের সঙ্গে ইসির সংলাপ ২৫ নভেম্বর
- ‘ফ্যামিলি ম্যান থ্রি’: মনোজ নয়, জয়দীপের সিজন?
- টিকটক ইউজারদের জন্য চালু হলো টাইম অ্যান্ড ওয়েল-বিয়িং ফিচার
- পটুয়াখালীতে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন
- বাংলাদেশের কাল ব্রুনাই চ্যালেঞ্জ
লেখকের অন্য চোখ
গুলশানে কার কী লাভ হলো?
সমরেশ মজুমদার
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর