বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভোট হবে শেখ হাসিনার অধীনেই

নির্বাচনকালীন সরকারে রাখা হবে না অন্য দলকে, জনপ্রশাসন স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো থাকবে প্রধানমন্ত্রী ও নেতাদের অধীনে, দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে

রফিকুল ইসলাম রনি

ভোট হবে শেখ হাসিনার অধীনেই

সংবিধান অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা। এই সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্য দলকে রাখা হবে না। জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো থাকবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতেই। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, এবার দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও আনা হবে ব্যাপক পরিবর্তন। এই কমিটিতে দলীয় পদপদবিতে না থাকা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকতে পারেন। তাদের অনেকেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দলের দুঃসময়ে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত দেখভালের জন্য থাকবে পৃথক শক্তিশালী কমিটি। বিএনপিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান মেনেই নির্বাচনে আসতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনকালে শেখ হাসিনার সরকারই সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে। এটাই আমাদের সংবিধানের নিয়ম। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া টেমস  নদীর তীরে বসে সহায়ক সরকারের রূপরেখা ও পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় বছর বাকি থাকলেও ইতিমধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ইস্যুতে রাজনীতি জমে উঠেছে। এবারও এটি নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুই দলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। গত কয়েক বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলা বিএনপি এবার চাইছে ‘সহায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ বলছে, বিষয়টি সংবিধান অনুযায়ী মীমাংসিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সরকার প্রধান থাকবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন অনুযায়ী নিবন্ধন হারাতে পারে দলটি। সে কারণে এবার আর ঝুঁকি নেবে না তারা। নিবন্ধন বাঁচাতেই তাদের নির্বাচনে আসতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। বাংলাদেশেও তাই হবে। ব্রিটেনে হয়েছে, আমেরিকায় বারাক ওবামার নেতৃত্বে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে এবং সহায়তা করবে সরকার। সেই সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন শেখ হাসিনা। অন্য কারও এখানে আসার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। নির্বাচনে আসা ছাড়া খালেদা জিয়ার আর কোনো পথ খোলা নেই। ইতিমধ্যে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার জন্য আলাদা অফিস নেওয়া হয়েছে। নেতারাও জেলা সফর, জনসভা, কর্মিসভা, বর্ধিত সভার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরছেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশসংবলিত সহায়ক সরকার প্রস্তাব দিতে চায় বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, ওই সময় নির্বাচন হলে সংসদ ও মন্ত্রিসভা থাকবে না। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভোটের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তাবও দিতে চায় দলটি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর ছুটি নেওয়ার ব্যাপারে সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই। তবে ইচ্ছা করলে তিনি ছুটিতে যেতে পারেন বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা। কিন্তু তা আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই মানবে না। বর্তমান সংবিধান মোতাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকার প্রধান রেখেই নির্বাচনে যাবে ক্ষমতাসীন দলটি। সহায়ক সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ছুটি কিছুই মানবে না তারা।

সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী এবং তার দল থেকে পাঁচজন মন্ত্রী এবং খালেদা জিয়াকে তার দল থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পাঁচজনকে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এবার সহায়ক সরকার চায় দলটি।

জানা যায়, বর্তমান ঐকমত্যের সরকারের সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় রাখা হচ্ছে না। সে কারণে ওই নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়তে পারেন ১৪-দলীয় জোটের দুই মন্ত্রীও। একই সঙ্গে নির্বাচনী কাজে সহায়তা করতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি গঠনের কথা ভাবছে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, দশম সংসদ নির্বাচনের সময় যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক চাপ ছিল আগামী নির্বাচনে সে চাপ আসবে না। এ ছাড়াও বিএনপিও আন্তর্জাতিকভাবে তেমন চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না। কারণ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে পরিবেশ স্থিতিশীল হয়েছে। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো চায় বাংলাদেশের স্থিতিশীল পরিবেশ। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসমুক্ত দেশ। আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গঠনে শেখ হাসিনাকেই নিরাপদ বলে মনে করেন বিশ্ববাসী। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে সে প্রমাণ দিয়েছেন। কাজেই নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান কে থাকবেন—তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিশ্ব সম্প্রদায় এসব নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।

দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে একাধিক জরিপ পরিচালনা করছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। সংস্থাটি এখনো জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকেও ক্ষমতাসীনেরা প্রার্থীদের সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করছে। প্রার্থী পছন্দের ব্যাপারে ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগাম নির্বাচনী প্রচার শুরু করবে আওয়ামী লীগ। জনগণের দৃষ্টিতে সরকারের সাফল্যগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। দেশে বড় দুই শহরে বড় বড় ফ্লাইওভার নির্মাণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বাংলাদেশের সাব-মেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী জোটে অংশগ্রহণ, দেশি উগ্রবাদ দমনসহ সরকারের বিভিন্ন সফলতার চিত্র জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের ফিরিস্তি দেওয়া হবে। এ জন্য আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দলের প্রচার সেলের উদ্যোগে সরকারের উন্নয়ন-সফলতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন-সংগ্রামের ওপর সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ১০টি ধারাবাহিক সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে দলের প্রচার-প্রকাশনা কমিটির বৈঠকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের সরকারের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এসব অপপ্রচারের জবাব ও সরকারের উন্নয়ন-সফলতা প্রচারে ছয় সদস্যের একটি উপকমিটিও গঠন করা হয়।

সর্বশেষ খবর