রাতভর অভিযান শেষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল ভোরে নগরের দেওভোগ এলাকার চুনকা কুটির থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সকালে আদালতে ওঠানো হয় আইভীকে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনউদ্দিন কাদিরের আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. কাইউম খান জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিনারুল ইসলাম নামে একজন নিহতের ঘটনায় আসামি হিসেবে আইভীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আদালত ২৬ মে পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। আইভীকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর নিহতের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। ওই মামলায় আইভী এজাহারভুক্ত ১০ নম্বর আসামি।
গ্রেপ্তারে রাতভর অভিযান : ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করার জন্য বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশের একটি দল শহরের দেওভোগ এলাকার আইভীর বাড়ি চুনকা কুটিরে যায়। আইভীর গ্রেপ্তারের খবরে তাঁর বিপুলসংখ্যক সমর্থক ও দলীয় নেতা-কর্মী রাস্তায় নেমে এলে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আইভীর বাড়ির দিকে যাওয়ার চারটি রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি রেখে সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও আইভীর সমর্থকরা। সেই সঙ্গে আশপাশ এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে আইভীর বাড়ির দিকে রওনা দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা। সবাই বাড়ির সামনে এসে ভিড় করেন। এভাবে রাতভর উত্তেজনা চলে। পুলিশ সদস্যরা আইভীর বাড়িতে অবস্থান নেন। এ সময় আইভী বলেন, ‘আমি দিনের আলোতে যাব, রাতে যাব না।’ পরে ভোরে আইভীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ সদস্যরা নিয়ে আসেন। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আইভীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চারটি ও ফতুল্লা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইভী যা বললেন : ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলায় যদি আমার শাস্তি হয় তাহলে আমি তা মাথা পেতে নেব। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, চাঁদাবাজি করিনি, হত্যা করিনি। যখন নারায়ণগঞ্জের একটা মানুষও কথা বলত না, প্রতিবাদ করত না তখন ত্বকী হত্যার প্রতিবাদসহ সব প্রতিবাদ আমি করেছি। আমি আপনাদের সেবা দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, নতুন সরকার এসেছে। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি তাহলে কেন আমাকে গ্রেপ্তার, জানতে চাই সরকারের কাছে। আমার ভাইকে আমরা হারিয়েছি এক মাস হয়নি, তার তিনটা ছেলেমেয়ে। এমন অবস্থায় আমি তো বাড়িতেই ছিলাম।’
পুলিশের ওপর সমর্থকদের হামলা : সাড়ে ছয় ঘণ্টা অভিযান শেষে আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে বহনকারী গাড়ির ওপর হামলা হয়। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিবি রোডের কালীর বাজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় র্যাব ও পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সেলিনা হায়াৎকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার সময় পুলিশের গাড়িবহরে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিস্ফোরণের শব্দও শুনেছি।’
বিশিষ্টজনের ভিন্নমত : নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বী বলেন, ‘আমরা এ গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাই। নারায়ণগঞ্জকে নরক বানিয়ে রাখা শামীম ওসমানকে সরকারের বাহিনী সসম্মানে দেশ থেকে পালাতে সহায়তা করল, তাঁর পরিবারকে বিএনপি নেতারা পালাতে সহায়তা করল আর আইভীকে করা হলো গ্রেপ্তার!