আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কার কারণে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের রাখার জন্য কেরানীগঞ্জে আলাদা কারাগার প্রস্তুত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের এ অপতৎপরতা রুখে দিতে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিদিনই গ্রেপ্তার হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। তারা নানাভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকাসহ সারা দেশে হত্যা, গুমসহ অসংখ্য অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, সাবেক-বর্তমান আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎকালীন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাসহ বিতর্কিত ব্যবসায়ীদের আসামি করা হয়েছে। হেভিওয়েটদের পাশাপাশি প্রতিটি মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে মহানগর, জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারা আরও বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ছোট-বড় যে কোনো ইস্যুতেই সড়ক অবরোধসহ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের ওপর একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। একটি সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই আরেকটি এসে ধাক্কা দিচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে, ততই দীর্ঘ হচ্ছে এসব দাবি। কখনো কখনো অবনতি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে খুন, ছিনতাই ও নারীদের শ্লীলতাহানিসহ ভয়ানক সব অপকর্ম। আর এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী। এই দলটি ছাড়াও জড়িত আছেন সাবেক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সারা দেশে ১০ হাজার ৩১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ মে ১ হাজার ৬৭৩ জনকে; ৮ মে ১ হাজার ৫৩৮ জনকে; ৬ মে ১ হাজার ৬৭৬ জনকে; ৫ মে ১ হাজার ৬২৬ জনকে; ৪ মে ১ হাজার ৪০৫ জনকে; ২ মে ১ হাজার ২৫৫ জনকে এবং ১ মে ১ হাজার ১৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। এদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী। এর বাইরে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য ঘটনারও আসামি রয়েছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশে নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের অপতৎপরতা থেমে নেই। তারা দেশের পরিস্থিতি অস্থির করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। গোপন বৈঠকের পাশাপাশি তারা অনলাইনে বেশি তৎপর। দেশের বাইরে থেকে পলাতক নেতারা অনলাইনে নির্দেশ দিচ্ছেন। ঢাকাসহ সারা দেশে তারা ঝটিকা মিছিল বের করছেন। যারা বিদেশে পালিয়ে থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আর যারা দেশে অবস্থান করে পলাতক শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও যদি কেউ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে, অবশ্যই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আইনশৃঙ্খলাবিরোধী অপতৎপরতা রোধে নিয়মিতভাবে নজরদারি এবং গ্রেপ্তার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অপতৎপরতা রোধে সাইবার প্যাট্রলিং করা হচ্ছে।