শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
মাথা নিয়ে গণপিটুনিতে যুবক নিহত

‘সজিব হত্যার সঙ্গে পদ্মা সেতুর গুজবের সম্পর্ক নেই’

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনায় শিশুর মাথা নিয়ে গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে জানিয়ে এ জেলার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেছেন, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার যেমন কিছু নেই, তেমনি পদ্মা সেতুতে মাথা দরকার- এমন গুজবের সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পুরনো কোনো জেদ বা বিকৃত মানসিকতা থেকেই এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, শিশু সজিবের গলা কাটার বিষয়টি নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি সজিবের বাবা বাদী হয়ে গণপিটুনিতে নিহত রবিনের বিরুদ্ধে করেছেন। অন্য মামলাটি পুলিশ বাদী হয়ে গণপিটুনিতে রবিনকে হত্যায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। গতকাল দুটি লাশেরই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনার বর্ণনায় পুলিশ জানায়, রবিন হাতে ব্যাগ নিয়ে শহরের বারহাট্টা রোডের হরিজন পল্লীতে মদ খেতে যান। সেখানে এক ঘরে মদ না পেয়ে অন্য ঘরে যাওয়ার সময় ব্যাগ থেকে রক্ত পড়তে দেখেন লোকজন। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সঠিক জবাব দিতে না পারায় ব্যাগ খুলে শিশুর মাথা দেখতে পান স্থানীয়রা। এ সময় মাথার সঙ্গে বরফ ও কিছু ওষুধ ব্যাগে ছিল। এ সময় রবিন মাথাটিসহ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা তার পিছু ধাওয়া করে এবং নিউটাউন এলাকায় অনন্ত পুকুর পাড়ে তাকে ধরে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘রবিন ও শিশুটির বাবা একই এলাকার বাসিন্দা এবং পরস্পর পূর্বপরিচিত। কাটলি এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির টয়লেটে সজিবকে গলা কেটে হত্যা করে রবিন। সজিবকে নির্যাতনের পর রবিন হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।’ রবিনকে চিহ্নিত মাদকবিক্রেতা দাবি করে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এমন গুজবের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’ রবিনের জব্দকৃত মোবাইল ফোনটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। পুলিশ সুপার আরও বলেন, অপরিচিত হলেই সন্দেহ করে কাউকে মারপিট করা যাবে না। এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্তে নিজেও অপরাধী হয়ে যেতে পারেন। এতে যে কাউকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। এলাকা, পাড়া বা মহল্লায় অপরিচিত কাউকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আগে তার সঙ্গে কথা বলুন এবং পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হন। তারপর কোথাও কোনো সমস্যা মনে হলে পুলিশকে সংবাদ দিন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, মাথা ছিন্ন করে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার যেমন কিছু  নেই তেমনি পদ্মা সেতুতে মাথা দরকার এমন গুজবের  কোনো সম্পর্ক নেই।

সর্বশেষ খবর