মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
আশ্বাস মানেনি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুলছে তালা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুলছে তালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাস মানেনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, একাডেমিক সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল না করলে এই অচলাবস্থা বজায় রাখা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ডাকসু। জানা যায়, রবিবার সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। অচলাবস্থা নিরসনে বিকালে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। তবে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের এখতিয়ার আমাদের কাছে নেই। উপাচার্য (চীন থেকে) আসার পর আমরা সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব এবং একটি সুষ্ঠু সমাধানের দিকে যাব।’ এ সময় তিনি সাত কলেজকে আলাদা করে পরিচালনার কথাও বলেন। তবে তার এমন আশ্বাসে কান দেয়নি শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. শাকিল মিয়া বলেন, ‘আমাদের দাবি তো এটা ছিল না। আমরা সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের কথা বলছি। আর এটা ভিসি স্যারের কাছ থেকে শুনতে চাই। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’ এদিকে গতকালও সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। রবিবার যেসব ভবন তালাবদ্ধ ছিল না, গতকাল সেসব ভবনেও তালা ঝোলানো হয়। বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম। ভোর ৬টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন, প্রক্টর অফিস, কলা ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ (এফবিএস), সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কার্জন হল, মোকাররম ভবন ও গণিত ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনই ছিল তালাবদ্ধ। এসব ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান করতেও দেখা যায়। এদিকে রবিবারের মতো গতকালও সামাজিক বিজ্ঞান ভবন তালাবদ্ধ করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্্বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন ভবনটিতে লাগানো তালা ভাঙতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে বাধা দেয়। দীর্ঘক্ষণ ওই শিক্ষকের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ায় তারা। এ সময় অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাবি শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও তার কয়েকজন অনুসারী ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিলটি অপরাজেয় বাংলা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার টিএসসি হয়ে কার্জন হল ও শহীদ মিনারসহ পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে অবস্থান নেয়। বেলা ১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তারা।

এ সময় ‘রাখতে ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’, ‘প্রশাসন করে কী, খায় দায় ঘুমায় নাকি’, ‘সাত কলেজ বাতিল চাই’, ‘ঢাবির সম্মান, নষ্ট হতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে আন্দোলনকারীরা। বেলা ১টার পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মো. শাকিল মিয়া। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের এক দফা দাবি, তা হলো সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল। এই দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না।’

আন্দোলনে ডাকসুর সমর্থন : সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। গতকাল বিকালে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর এবং জিএস গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়। এতে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সবাইকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ডাকসু পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশের বাইরে থাকায় এ মুহূর্তে সাত কলেজ নিয়ে কোনো কার্যকর ও ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি চীন সফরে রয়েছেন। উপাচার্য মঙ্গলবার (আজ) দেশে ফিরে এলে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

সর্বশেষ খবর