রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

এমপি-কেন্দ্রীয় নেতাদের মদদে বিদ্রোহীরা

রফিকুল ইসলাম রনি

এমপি-কেন্দ্রীয় নেতাদের মদদে বিদ্রোহীরা

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ঢাকা-৭ আসনের সরকারদলীয় এমপি হাজী সেলিমের ভাগ্নে মো. হাসান পিল্লু। ভাগ্নে দলীয় প্রার্থী হলেও ছেলে ইরফান সেলিমকে কাউন্সিলর পদে দাঁড় করিয়েছেন আওয়ামী লীগের এই এমপি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন দেওয়ান আবদুল মান্নান। দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করছেন ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামুল হক আসলামের শ্যালক মনসুর আহমেদ। শুধু দলের এমপিই নয়, দক্ষিণের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম মিয়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। সানজিদা খানমের লোক হিসেবে পরিচিত এ ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রুহুল আমিন। ঢাকা-৪ আসনের সাবেক এই এমপি এলাকার কর্তৃত্ব নিজ কব্জায় রাখতেই বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাসিমের।

সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী মাঠে রাখতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও মহানগরের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কারণে শতাধিক বিদ্রোহী মাঠে রয়েছেন। অনেকেই বহিরাগত এলাকা থেকে লোক ভাড়া করে এনে নির্বাচনী এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন। এ নিয়ে দলের স্থানীয় পর্যায়ে অনেক নেতাই বিরক্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আশঙ্কা এর ফলে সহিংসতা বাড়তে পারে। অন্যদিকে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মাঠে থাকায় নৌকার প্রচারণায় ভাটা পড়ছে বলে জানা গেছে। যারা নৌকাবিরোধী তারা কেউই নৌকার পক্ষে মাঠে নেই বলে জানা গেছে। বিদ্রোহীদের বসাতে না পারলে আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করছেন দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা-৪ আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী সানজিদা খানম আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। মূলত তিনি এ এলাকার কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চান।’ এ ব্যাপারে গতকাল রাত ৯টায় সানজিদা খানমের নম্বরে ফোন করা হলে শাকিল নামের একজন ফোন রিসিভ করেন। তিনি ‘আপা ব্যস্ত আছেন’ বলে ফোন কেটে দেন। দক্ষিণের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক। তাকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন খোরশেদ আলম বাবু মাস্টার ও আওলাদ হোসেন। তারা দুজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। আর দুজনই সানজিদা খানমের লোক হিসেবে পরিচিত।

ঢাকা দক্ষিণের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাসিব উদ্দিন রসি। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন স্থানীয় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম। রসির পক্ষে ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন হাজী সেলিমের ছেলে সোলায়মান সেলিম, লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান জামাল। ঢাকা দক্ষিণের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ড. ওমর বিন আজিজ তামিম। তবে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ছাত্রলীগের বৃহত্তর লালবাগ থানার সাবেক সভাপতি সাগর আহম্মেদ শাহিন। তিনি স্থানীয় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এখানেও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষ হচ্ছে। শুক্রবারও দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন। এর আগেও তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সংঘর্ষ বাধে তাদের মধ্যে। ঢাকা উত্তরের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। তবে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম। এ ওয়ার্ডটিতেও বিদ্রোহী প্রার্থীর বাধার কারণে প্রচারণা চালাতে পারছেন না আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। নাঈমের পক্ষে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার। এ ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক মামুনুর রশিদ শুভ্র। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি তাকে মাঠে থাকতে বলেছেন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম আশরাফ অভিযোগ করেন, ‘এখানে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।’ ঢাকা দক্ষিণের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামান কাজল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার নির্দেশেই কাজল বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মাহবুবুল আলম। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ক্যাসিনো খালিদের সহযোগী সাধু। ঢাকা উত্তরে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী সালাহউদ্দিন রবিন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী ওরফে বাপ্পী চৌধুরী। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর বাধার কারণে প্রচারণা চালাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন সালাহউদ্দিন রবিন। স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লা তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সালাহউদ্দিন রবিন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের মারধর-হুমকির পাশাপাশি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে রয়েছেন। তবে এমপি বিরোধিতা করছেন। নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।’   

সর্বশেষ খবর