মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সাত কার্যদিবসে ধর্ষণ মামলার রায়

বাগেরহাটে শিশু ধর্ষণে যাবজ্জীবন একজনের

বাগেরহাট প্রতিনিধি

সাত কার্যদিবসে ধর্ষণ মামলার রায়

রায় ঘোষণার পর কারাগারে নেওয়া হয় ধর্ষককে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাগেরহাটের মোংলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় মা-বাবাহারা সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে আসামি আবদুল মান্নান সরদারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। বাগেরহাটের  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২-এর বিচারক মো. নূরে আলম গতকাল দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় প্রদান করেন। রায় ঘোষণাকালে আদালতে আসামি উপস্থিত ছিলেন। মাত্র সাত কার্যদিবসে রায় ঘোষণা করায় দেশে বিচারাঙ্গনে এক অনন্য নজির স্থাপিত হলো। এত কম সময়ে বিচারকাজ শেষ করার নজির বাংলাদেশে এই প্রথম। রায়ে আসামিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ব্যর্থতায় আরও এক বছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করতে হবে আসামিকে। আসামি আবদুল মান্নান সরদার মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার প্রয়াত আহম্মদ সরদারের ছেলে। এর আগে রবিবার বেলা ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা আদালত এই চাঞ্চল্যকর মামলার বাদী ও বিবাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক শোনে। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী তার মক্কেলের যৌনক্ষমতা নেই বলে দাবি করে আদালতে লিখিত আবেদন করেন। বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম আসামিকে তৎক্ষণাৎ জেলা সিভিল সার্জনের কাছে পাঠিয়ে পরীক্ষার নির্দেশ দেন। বিকালে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করে আসামি আবদুল মান্নান সরদারের যৌন সক্ষমতা রয়েছে বলে লিখিতভাবে আদালতকে জানায়।

এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা এ মামলার বিচারকাজ কম সময়ে শেষ করায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে নারী উন্নয়ন ফোরাম। এ রায়ের মধ্য দিয়ে বিচারকাজের যে দীর্ঘসূত্রতা ছিল বা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার না পাওয়ার যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল, তা অনেকাংশে দূর হবে বলে মত দিয়েছেন আইনজীবী, নারী উন্নয়ন ফোরাম, সুশীল সমাজ।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় মা-বাবাহারা সাত বছর বয়সী শিশুটি মামার আশ্রয়ে ছিল। আসামি পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতিবেশী আবদুল মান্নান সরদারকে শিশুটি নানা বলে ডাকত। ৩ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আবদুল মান্নান সরদার শিশুটিকে বিস্কুট খাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ঘরে ডেকে নেন। এরপর শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে রক্তাক্ত করেন তিনি। পরে শিশুটির ডাকচিৎকারে তার মামা ও এলাকাবাসী ছুটে এলে ধর্ষণকারী আবদুল মান্নান সরদার পালিয়ে অন্য ঘরে আশ্রয় নেন। পুলিশ এসে মান্নানকে আটক করে মোংলা থানায় নিয়ে যায়। এ সময় শিশুটিকে অসুস্থ অবস্থায় মোংলা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিত মুখার্জি ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পান। তিনি ১৬ জনকে সাক্ষী করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে আসামি আবদুল মান্নান সরদারের বিরুদ্ধে ১১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বেঞ্চ সহকারী গোপাল চন্দ্র পাল বলেন, বিচারক ১১ অক্টোবর মামলাটি আমলে নিয়ে পরদিন চার্জ গঠন করেন। ১৩ অক্টোবর মামলার ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ১৪ অক্টোবর আদালত সংশ্লিষ্ট সাক্ষী চিকিৎসক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারী পুলিশ সদস্য এবং তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ১৫ অক্টোবর আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই সাক্ষ্য নেন। মাঝে শুক্র-শনি দুই দিন আদালত সাপ্তাহিক ছুটিতে থাকে। ১৮ অক্টোবর বাদী-বিবাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী তার মক্কেলের যৌনক্ষমতা নেই বলে দাবি করে আদালতে লিখিত আবেদন করেন। বিচারক আসামিকে তৎক্ষণাৎ জেলা সিভিল সার্জনকে বিষয়টি পরীক্ষার নির্দেশ দেন। বিকালে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করে আসামি আবদুল মান্নান সরদারের যৌন সক্ষমতা রয়েছে বলে লিখিতভাবে আদালতকে জানায়। এরপর ১৯ অক্টোবর রায়ের দিন ধার্য করা হয়। ধার্য তারিখে সাত কার্যদিবসের মাথায় আদালত গতকাল রায় ঘোষণা করে। এর আগে এত সংক্ষিপ্ত সময়ে এ ধরনের কোনো মামলায় রায় ঘোষিত হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) রণজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, নারী  ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, ধর্ষণের ঘটনার কোনো মামলার বিচারকাজ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে। এ মামলাটি তারই প্রমাণ। মামলাটি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছে। ঘটনার পরপরই আসামিকে গ্রেফতার, ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা, অভিযোগপত্র দাখিল ও সাক্ষী হাজির যথাসময়ে করেছে পুলিশ। আইন মেনে ধর্ষিতা শিশুটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারা ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতেরও মামলাটির বিচারকাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল। এসব কারণে বিচারকাজ শেষ করতে কালক্ষেপণ হয়নি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর