সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মামুনুল ঘটনার তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে এক নারীসহ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের অবস্থান এবং পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। এ জন্য রিসোর্টে মাওলানা মামুনুলের অবস্থানের ভিডিও এবং হেফাজত কর্মীরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সম্ভাব্য সবগুলো দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া নানা কথোপকথনও প্রকৃতপক্ষে মাওলানা মামুনুল হকের কিনা তাও যাচাই করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পুলিশের ওপর হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া, সস্ত্রীক মামুনুল হককে হেনস্তা করার ঘটনায় তার পক্ষে হেফাজত নেতা ফয়সাল মাহামুদ হাবিবি সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভয়ংকর তান্ডবের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুলিশের ওপর হামলা, আইন প্রয়োগে বাধাদান, রাস্তায় আগুন, স্থাপনা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বেরা করা হবে।

সোনারগাঁ থানায় হেফাজতের দেওয়া অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষেই এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রয়েল রিসোর্টে অবস্থানের সময় মাওলানা মামুনুলের সঙ্গে থাকা নারী প্রকৃতপক্ষেই তার স্ত্রী কিনা এখনো বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে কাজ করছে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার একাধিক টিম। রিসোর্টের রেজিস্ট্রেশন ফরমে মাওলানা মামুনুল হকের স্ত্রীর নাম আমিনা তৈয়ব উল্লেখ করা হলেও তার প্রকৃত নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওলিয়ার রহমান। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার কামারগ্রামে। তবে গ্রামবাসীদের কেউই ঝর্ণার দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে অবহিত নন। খোদ তার বাবাই বলেছেন, নয় বছর বয়সে হাফেজ শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শহীদের বাড়ি বাগের হাটের চিতলমারী। ওই সংসারে তার দুই সন্তান রয়েছে। আড়াই বছর আাগে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।

সূত্র আরও বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কয়েকটি কথোপকথনে বিশ্লেষণ করে বোঝা গেছে, মাওলানা মামুনুলের বোন এবং প্রথম স্ত্রী তার দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। তবে কথোপকথনগুলো প্রকৃতপক্ষেই মাওলানা মামুনুলের কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

থানায় হেফাজতের অভিযোগ : মাওলানা মামুনুল হককে সস্ত্রীক হেনস্তা করার অভিযোগ তুলে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ করেছেন তার দলের নেতা ফয়সাল মাহামুদ হাবিবী। গতকাল বেলা ২টার দিকে থানায় অভিযোগ জমা দেন তিনি। এ সময় স্থানীয় হেফাজত নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ নিয়মকানুন মেনে মাওলানা মামুনুল সস্ত্রীক রিসোর্টে অবস্থান করলেও হোটেল মালিক সাইদুর রহমান এর ম্যানেজার ও কর্মচারীরা আল্লামা মামুনুল হকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন। সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম নান্নু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হাজী শাহ মো. সোহাগ রনির নেতৃত্বে কতিপয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা মাওলানা মামুনুল হকের ওপর হামলা চালায়। তার জামার কলার ছিঁড়ে ফেলে, দাড়ি মুবারক ধরে টান দেয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তার গাড়ির চাবি ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর অদূরে সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে গত শনিবার বিকালে মাওলানা মামুনুল হককে ঘেরাও করে রাখে স্থানীয় জনতা। পরবর্তীতে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা।

সর্বশেষ খবর