শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা

নিউজপ্রিন্ট আমদানি শুল্ক ও করপোরেট কর কমানোর সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবাদপত্রশিল্পের সংকট কাটাতে নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছেন প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা। এ ছাড়া ৩৫ শতাংশ করপোরেট কর কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রিন্ট মিডিয়া বিকাশের ক্ষেত্রে নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক অন্যতম বড় বাধা বলে তারা মনে করেন। একইভাবে দেশের কৃষি খাতে ভর্তুকি ও কৃষি গবেষণা খাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল অনলাইন প্ল্যাটফরমে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের প্রাক-বাজেট আলোচনায়        এসব পরামর্শ ও সুপারিশ তুলে ধরেন প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা। সভা শেষে অনলাইমমাধ্যম জুমে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, আমাদের নতুন সময় সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ। আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির প্রমুখ। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, সংবাদপত্রশিল্প গভীর সংকটে রয়েছে। ভ্যাট, ট্যাক্সসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ শিল্প টিকে যাবে। তিনি বলেন, সরকারি প্রকল্পের সময় বাড়ানোর নামে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটে। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজটোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নঈম নিজাম বলেন, নিউজপ্রিন্টের ওপর আরোপিত কর কমানো জরুরি। একইভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশের জন্য করপোরেট কর কমানোরও পরামর্শ দেন তিনি। নঈম নিজাম বলেন, ৩৫ শতাংশ করপোরেট কর সেবা খাতে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা ১০ শতাংশ করতে হবে। নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করতে হবে। বিজ্ঞাপনের আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করতে হবে। উৎসস্থলে কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশের বদলে অগ্রিম কর (এআইটি) শূন্য শতাংশ করতে হবে এবং কর্মীর বাড়ি ভাড়া পুরোটাই করমুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিলও দ্রুত পরিশোধের দাবি করেন নঈম নিজাম। চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান ও কৃষিবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাইখ সিরাজ বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানো, পোলট্রিশিল্পের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের শিক্ষা খাতের জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ছিল। এখন আর আন্তর্জাতিক মান নেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কীভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত করা যায়, গবেষণার মাধ্যমে আরও বেশি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার বিষয়ে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের (সরকারের) বিভিন্ন কাজ সময়মতো সমাপ্ত হয় না বলে অর্থের অপচয় হয়, সে অপচয় বন্ধ করারও পরামর্শ দিয়েছেন সম্পাদকরা। ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, করপোরেট কর ও নিউজপ্রিন্ট আমদানির শুল্ক কমানো, কৃষি খাতে ভর্তুকি ও অর্থের অপচয় রোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। বাজেট প্রণয়নের জন্য আমাদের একটি টিম আছে, সে টিম কাজগুলো করবে। যে পরামর্শগুলো পেয়েছি সেগুলো আমরা বিবেচনা করব। আমরা টিম নিয়ে আবার একসঙ্গে বসব, সেখানে সিদ্ধান্ত নেব এর মধ্যে কোনগুলো বাজেট প্রণয়নে কাজে লাগাব। যতটা আমাদের সাধ্যে কুলায় সেভাবেই গ্রহণযোগ্য পরামর্শ আমরা গ্রহণ করব।’ চালের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন, করোনার কারণে কৃষক ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় চলতি বছর চালের সরবরাহ কম হয়েছে, ফলে বাজারে চালের দাম বেশি। ৮-১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতির পরও বাজারে চালের দাম অনেক বেশি, এর কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ধান, চাল এবং গম প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আমরা দাবি করি আমরা খাদ্যশস্যে স্বাবলম্বী। খাদ্যশস্যে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি সেই বছর যে বছর আমাদের প্রকৃতি স্বাভাবিক থাকে। যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ আসে সেটা আমরা মেইনটেইন করতে পারি না। আমাদের এখানে যে পরিমাণ জমি, দক্ষতা ও সক্ষমতা আছে তা যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে আমরা সফল সেই বছর। তিনি বলেন, ‘গত বছরও আমাদের অনেক বোরো ধান নষ্ট হয়েছে, সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য একটি প্যাকেজ নেওয়া হচ্ছে, সেভাবেই কাজটি করা হচ্ছে। ভারতেও সেভাবে কৃষিতে সফলতা পায়নি। আমাদের পাশের যেসব দেশ যেমন থাইল্যান্ড তাদেরও ঘাটতি আছে। করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বই আমাদের চেয়ে অনেক দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর কারণে কৃষিকাজ কৃষক করতে পারেনি। স্বাভাবিক কাজ যেমন ব্যাহত হয়েছে তেমনি কৃষিও ব্যাহত হয়েছে। এর কারণে সরবরাহ কমে গেছে, ফলে চালের দামটা বেশি। আমি মনে করি আমাদের কৃষি সার্বিকভাবে অনেক ভালো কাজ করছে এবং কৃষিকে আরও গতিশীল, বেগবান ও শক্তিশালী করার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার তা করবে।

সর্বশেষ খবর