রবিবার, ৩০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

হুইপ শামসুল হক ও তার পুত্র শারুনকে গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

নিজস্ব প্রতিবেদক

হুইপ শামসুল হক ও তার পুত্র শারুনকে গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী এমপি ও তার ছেলে শারুন হক চৌধুরীকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পটিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন আহম্মদকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী এমপি ও তার ছেলে শারুন হক চৌধুরীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে সংগঠনটি। গতকাল বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে ২৪ ঘণ্টার এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন আহম্মদকে হত্যার হুমকিদাতা হুইপ শামসুল হক চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার এবং এমপি পদ শূন্য ঘোষণা করতে হবে। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ভাস্কর রাশা। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনেট মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় ও অন্যান্য ইউনিটের নেতা-কর্মীরা।

সমাবেশে ভাস্কর রাশা বলেন, ‘একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নগ্ন করে পেটাবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন একজন এমপি ও হুইপ, এটা খুবই দুঃখজনক। হুইপ শামসুল হক চৌধুরী বারবার এমন কাজ করছেন। গতকালকেও (শুক্রবার) পটিয়ায় এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। পটিয়ায় কী হচ্ছে, এসব এখন দেশের চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রশাসনের স্তব্ধতা, নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে সচেতন মানুষকে। আসুন আমরা পটিয়ার উদ্দেশে লং মার্চ করি। আমরা পটিয়ায় দেখাতে চাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। এই হুইপ একসময় জাতীয় পার্টি করতেন, একসময় বিএনপি করতেন। এই বর্ণচোরা গোষ্ঠী বারবার সুবিধাভোগী।’

তিনি বলেন, এই এমপি গোপনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জড়িত আছেন কি না সন্দেহ হয়। কেন মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর বারবার আক্রমণ করবেন।

হুইপ শামসুল হকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আপনি অপমান করছেন, আর আপনার ছেলে শারুন হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং একে-৪৭ বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এটা কি নব্য সামন্তবাদ? ক্ষমতায় গেলে এলাকাটি কি কারও বাপ-দাদার সম্পত্তি হয়ে যায়? শাসক হওয়ার জন্য নয়, ক্ষমতায় গিয়েছেন জনগণের সেবা করতে। সেবক হোন। মনে রাখা দরকার, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আবর্জনা-উচ্ছিষ্টকে উপড়ে ফেলতে।’

এর আগে সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে পটিয়া বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপ। পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে দ্বীপটি। মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানির অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে পটিয়া। এর নেপথ্যে একটি লোককে আমরা দেখতে পাই। সেই লোকটি হচ্ছেন গিরগিটির মতো বিভিন্ন সময়ে রং পাল্টানো রাজনৈতিক নেতা শামসুল হক। যিনি এমন কোনো দল নেই যে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। তিনি সর্বদা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি আজকে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছেন তার পেছনে জড়িত শারুন হক চৌধুরী এই শামসুল হকেরই ছেলে। একজন মানুষ তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে আত্মহত্যাকেই পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।’ বুলবুল বলেন, ‘হুইপপুত্র শারুন হক একে-৪৭ নিয়ে গুলি করছেন, সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসন কেউই সেদিকে লক্ষ্য করেনি। শারুন হকেরা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তাদের কারণে পটিয়া মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।’ তিনি ঘোষণা করেন, বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা এসব হুইপকে প্রতিহত করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করেছেন শামসুল। তাই তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে এমন শাস্তি দিতে হবে যেন আর কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার সাহস না পায়। বারবার দাবি করা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান বিরোধী বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছিলেন। তিনি এমপি পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। সরকার ও দেশপ্রেমিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকে বিতর্কিত করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন। ক্যাসিনো অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা দিদারুল আলমকে হুইপপুত্র শারুন হক চৌধুরী ফোন করে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে ঘটনায় শারুন হকের বিচার হয়নি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর