শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
কফিন কাঁধে আবেগে আপ্লুত পাইলটরা

মায়ের কবরের পাশে দাফন ক্যাপ্টেন নওশাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

মায়ের কবরের পাশে দাফন ক্যাপ্টেন নওশাদের

বিমানবন্দরে ক্যাপ্টেন নওশাদের কফিন কাঁধে পাইলটরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রতিটি সফল যাত্রা শেষে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের ককপিট থেকে বেরিয়ে আসতেন পাইলট নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। গতকাল তিনি শেষবার সেই উড়োজাহাজ থেকেই শাহজালালে নামলেন কফিনবন্দী হয়ে। এ দিন তাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর সহকর্মীরা। টুপি খুলে স্যালুট দিয়ে কাঁধে তুলে নেন সেই কফিন। ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যান কফিন। চোখের জলে তারা শেষ বিদায় জানান  ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুমকে। একটি মঞ্চে কফিন রাখা হলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমানের এমডি ও সিইও আবু সালেহ মোস্তফা কামাল শ্রদ্ধা জানান। বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ অন্যদের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মা ও বোনের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট নওশাদকে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এ সময় তাঁর স্বজনরা, সহকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেলা ২টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বলাকা ভবনে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পাইলট নওশাদকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ভারতীয় হাইকমিশন, বিমানশ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বেলা ৩টার দিকে পাইলট নওশাদকে বহনকারী একটি ফ্রিজিং ভ্যান বনানী কবরস্থানে এসে পৌঁছায়। পাইলট নওশাদকে দাফনের আগে সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুমের মরদেহ সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে ভারত থেকে দেশে আনা হয়। তাঁকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইটটি সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিমান জানিয়েছে, বিমানের দোহাগামী বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ময়ূরপঙ্খি উড়োজাহাজ দেশে ফেরার পথে ভারতের নাগপুরে থামে। সেখান থেকে ফ্লাইটটি ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ নিয়ে দেশে আসে। উড়োজাহাজটি অবতরণের আগেই নওশাদের সহকর্মীরা বিমানবন্দরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। বিমানবন্দরের শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে পাইলট নওশাদকে উত্তরার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে পাইলট নওশাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষী ও সহকর্মীরা তাঁকে এক পলক দেখতে পান। তাঁর মরদেহ গোসল শেষে জানাজার জন্য প্রস্তুত করা হয়। ভারতের নাগপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টার দিকে নওশাদের মৃত্যু হয়। নওশাদ সবশেষ নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত শুক্রবার সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটে ওমানের মাস্কাট থেকে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন নওশাদ। ভারতের আকাশসীমায় থাকা অবস্থায় ৪৪ বছর বয়সী এই পাইলট হৃদ রোগে (হার্ট অ্যাটাক) আক্রান্ত হন। এ সময় বিমানটিকে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করানো হয়। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্যাপ্টেন নওশাদ ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বিমানের আরেকটি ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করিয়ে ১৪৯ জন যাত্রীর জীবন বাঁচিয়েছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর