শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

মুহিবুল্লাহকে হত্যায় কারা থমথমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গাদের বিপথগামী একটি গ্রুপ নেতৃত্ব সহ্য করতে না পেরে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন তাঁর ভাই হাবিবুল্লাহ। এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহর মৃতদেহ গতকাল বিকালে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পুলিশি প্রহরায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে গেলে সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বজনরা। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মুহিবুল্লাহকে দাফন করা হয়।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ অফিসে উপস্থিত অন্য রোহিঙ্গাদের সামনেই চিহ্নিত অস্ত্রধারীরা রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে। ঘটনার পর থেকেই উখিয়া টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্যাম্পগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেফতারও করা যায়নি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ অ্যান্ড হিউম্যান রাইট নামক ক্যাম্পভিত্তিক সংগঠনটির চেয়ারম্যান এবং রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ছিলেন মুহিবুল্লাহ। তাঁকে হত্যার পর সংগঠনটির অন্য সদস্যদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিহত মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে নানাভাবে আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী একটি গ্রুপ দীর্ঘ দিন ধরে আমার ভাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধীরাই আমার ভাইকে হত্যা করেছে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ২০/২১ জন লোক আমার ভাইয়ের অফিসে আসে। তারা আমেরিকা, বাংলাদেশ-মিয়ানমার এই তিন দেশের বিষয় ও প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মহিবুল্লাহ বলছিলেন তাদের, আমেরিকাসহ বিশ্ব সম্প্রদায় এখন একমত হয়েছে সব রোহিঙ্গাকে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। আমরাও প্রস্তুত রয়েছি স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য। এ কথা বলার পর বন্দুকধারীরা আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। হাবিবুল্লাহ আরও জানান, ঘাতকদের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। আমার ভাইকে পরপর ৫টি গুলি করে। গুলির শব্দ শুনে আমরা সবাই দৌড়ে যাই। এ সময় মাস্টার আবদুর রহিম, মোরশেদ, নাগোসহ ২০/২১ জনকে অস্ত্র হাতে পালিয়ে যেতে দেখেছি।’ নিহত মুহিবুল্লাহর চাচাত ভাই নুরুল আমিন জানান, ঘটনার সময় রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অফিসে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা। কেউ সংবাদ শুনছিলেন, কেউ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। এ সময় বন্দুকধারীরা অফিসে ঢুকে কিছু আলাপ শেষে অন্তত ৫ রাউন্ড গুলি করে মুহিবুল্লাহকে। উপস্থিত অন্য রোহিঙ্গাদেরও মারধর করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মনিরুল গিয়াস জানান, ময়নাতদন্তের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে মুহিবুল্লাহর মৃতদেহ বিকালে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর নামাজে জানাজা শেষে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মুহিবুল্লাহকে দাফন করা হয়। কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর ক্যাম্পগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা রুজু করা হবে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বন্দুকধারীদের গুলিতে মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নিজ দেশ মিয়ানমারের আরাকানে ফিরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া নিয়েই লড়ে আসছিলেন মুহিবুল্লাহ। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট কুতুপালং শিবিরে রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশ করে তিনি আলোচনায় আসেন। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও দেখা করেন। তখন থেকে মুহিবুল্লাহ আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচনায় ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর