ঈদুল আজহার প্রধান আমল পশু কোরবানি করা। তবে পশু কোরবানিতে রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো—
যেসব পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ : ছয় প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ বা বৈধ। এসব পশু ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয়। তা হলো উট, গরু, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া ও মহিষ। (হেদায়া : ৪/৪৪৮)
পশুর বয়স : দুম্বা, ছাগল ও ভেড়ার বয়স এক বছর হলে এদের দ্বারা কোরবানি করা বৈধ। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া ও দুম্বা মোটাতাজা হলে এবং এক বছর বয়সের মতো দেখা গেলে তা দিয়েও কোরবানি করা জায়েজ। গরু ও মহিষ পূর্ণ দুই বছর বয়সী হতে হবে।
দুই বছরের কম হলে কোরবানি জায়েজ হবে না। উট পাঁচ বছর বয়সের হতে হবে। এর কম হলে কোরবানি জায়েজ হবে না। (হেদায়া : ৪/৪৪৯)
কোরবানির পশু যেমন হওয়া উত্তম : ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, কোরবানির পশু নিখুঁত, দৃষ্টিনন্দন, সুস্বাস্থ্যের অধিকার ও মধ্যবয়সী হওয়া উত্তম।
দৃষ্টিনন্দন যেকোনো রঙের পশু যেমন কোরবানি করা যাবে, তেমনি চাষাবাদে ব্যবহৃত হওয়ার পরও যদি তা ত্রুটিমুক্ত থাকে, তবে তা দ্বারা কোরবানি করা যাবে।
যেসব ত্রুটির কারণে কোরবানি জায়েজ হয় না : ফকিহ আলেমরা বলেন, কোরবানি জায়েজ হওয়ার জন্য মৌলিকভাবে পশু চারটি মারাত্মক ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে। তা হলো—ক. গুরুতর অন্ধত্ব, খ. গুরুতর অসুস্থতা, গ. খোঁড়া হওয়া, ঘ. গুরুতর স্বাস্থ্যহানি ও অঙ্গহানি ঘটা। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, কোরবানি অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
উল্লিখিত মূলনীতির আলোকে আলেমরা বলেন, কোনো পশুর দুই চোখ বা এক চোখ অথবা এক চোখের এক-তৃতীয়াংশের বেশি নষ্ট হয়ে গেলে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। অনুরূপ যে পশুর একটি কান বা লেজের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কেটে গেছে তা দ্বারাও কোরবানি করা বৈধ নয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৮)
যে পশু এমন খোঁড়া, যেটি মাত্র তিন পায়ের ওপর ভর করে চলে, চতুর্থ পা মাটিতে লাগেই না, কিংবা মাটিতে লাগে বটে, কিন্তু তার ওপর ভর করে চলতে পারে না—এমন পশু দ্বারা কোরবানি করা বৈধ নয়। তবে যদি খোঁড়া পায়ের ওপর ভর করে চলতে পারে, তবে তা দ্বারা কোরবানি করা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৮)
কোনো পশুর হাড়ের মগজ বা মজ্জা শুকিয়ে গেলে তা দ্বারা কোরবানি করা বৈধ নয়। দাঁত ওঠেনি এমন পশু দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ নয়। তবে যদি বেশির ভাগ দাঁত অবশিষ্ট থাকে, তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। শিং ওঠেনি এমন পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। অনুরূপ শিঙের অগ্রভাগ ভেঙে গেলেও তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু শিং মূল থেকে ভেঙে গিয়ে থাকলে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নেই। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৭-৮, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭)
যে পশুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু ঘা যদি গোশত পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তার কারণে পশুর স্বাস্থ্যহানি ঘটে, তবে এরূপ পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নেই। (হেদায়া : ৪/৪৩২)
আল্লাহ সবাইকে কোরবানির জন্য উত্তম পশু নির্বাচনের তাওফিক দিন। আমিন।
বিডি প্রতিদিন/কেএ