শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

নিয়ন্ত্রণ নেই দ্রব্যমূল্যের

নিত্যপণ্যের বাজারে অসহায় ক্রেতা । নাগালের বাইরে চাল ডাল মাছ মুরগি কাঁচা মরিচ আদা রসুন । বাজার সামলানোর চেষ্টায় টিসিবি । শুল্ক কমেছে চিনি-পিঁয়াজের । কাঁচা পণ্যের দাম নভেম্বরে কমতে পারে : ক্যাব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন ও মাহমুদ আজহার

নিয়ন্ত্রণ নেই দ্রব্যমূল্যের

রাজধানীর ভাটারায় শহীদ হারিস সড়কের বাসিন্দা রুনা আক্তার। কর্মজীবী এই নারী গতকাল বিকালে এলাকার একটি স্টেশনারি দোকানে যান বাজারসদাই করতে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দামই বেশি। কয়েকদিনের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৩০ টাকা। মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। মাছ-মাংসসহ সব তরকারির দাম বেড়েছে। আমার স্বামী নেই। এখন পরিবারের তিন সদস্যের সংসার চালানো কষ্টসাধ্য। এ কথা কাকে বলব, কে শুনবে। আমরা অসহায়।’

শুধু রুনা আক্তার নন, ঢাকাসহ সারা দেশেই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের একই চিত্র। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস জনজীবন। ক্রেতারা অসহায়। বাজারে চাল, ডাল, পিঁয়াজ, মরিচ, সয়াবিন, আটা, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের বেড়েছে দাম। অতীতে এভাবে একসঙ্গে সব পণ্যের দাম কখনো বাড়েনি। ১৫ দিন আগেও যে পিঁয়াজ ছিল ৪০-৪৫ টাকা, তা এখন ৭০-৭৫ টাকা। প্রতি কেজিতে বেড়েছে অন্তত ২৫ টাকা। মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। এ ছাড়া কেজিপ্রতি চিনির ১৫, আদার ৩০-৪০, রসুনের ৮-১০ আর আটার দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে অন্তত ১৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত অক্টোবরে কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু এবার সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এটা সত্যি যে জনজীবন নাভিশ্বাস হয়ে পড়েছে। আশা করি নভেম্বরের মধ্যেই শাকসবজিসহ কাঁচা পণ্যের দাম কমবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটর করছে। কিন্তু এর সুফল জনগণ পাচ্ছে বলে মনে হয় না। আমি মনে করি সরকারের আরও পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে কিছু কিছু পণ্যে ভর্তুকি দিতে হবে। কিছু পণ্যের শুল্ক হ্রাস করতে হবে।’

পিঁয়াজের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারতে পিঁয়াজের দামের ওঠানামার ওপর বাংলাদেশে তারতম্য হয়। আমি শুনেছি ভারতের কিছু কিছু এলাকায় অতিবৃষ্টিতে পিঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে দাম বেড়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন দুর্গাপূজা ঘিরে কয়েকদিন সীমান্ত বন্ধ থাকায় পিঁয়াজের দাম বাড়তে পারে।’

উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার এলাকায় এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘এখন সবজির মৌসুম। তার পরও কেন দাম বাড়ছে বোধগম্য নয়। তবে পুরো বাজারে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। সরকার তা ভাঙতে না পারলে কোনো পণ্যই সহনীয় দামে পাওয়া যাবে না।’

রাজধানীর রামপুরা, উত্তর বাড্ডা, কোকাকোলা মোড়সহ কয়েকটি খুচরা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব বাজারেই নিত্যপণ্যের দাম চড়া। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১২০-১৩০ টাকা। কারওয়ান বাজারে এর পাইকারি মূল্য ৮০-৯০ টাকা। বরবটির পাইকারি মূল্য কেজি ৬০ টাকা হলেও খুচরা মূল্য ৭০-৮০ টাকা। শিমের কেজি ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যার পাইকারি মূল্য ৯০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজি পাইকারি ৪০ টাকা হলেও খুচরা ৫০-৬০ টাকা। মুলার পাইকারি মূল্য ৪৫ টাকা হলেও খুচরা ৫০-৬০ টাকা। পটোল পাইকারি ৩৫ টাকা হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। সাদা বেগুন পাইকারি ৫০ টাকা হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা।

শসার পাইকারি মূল্য ৩৫ টাকা, খুচরা ৫০-৫৫ টাকা। পেপের পাইকারি মূল্য ১৫ টাকা, খুচরা ২৫ টাকা। লম্বা বেগুন পাইকারি ৪৫ টাকা, খুচরা ৬০-৬৫ টাকা। করলা পাইকারি ৫৫ টাকা, খুচরা ৬০-৭০ টাকা। লাউ ৪৫-৫০, ফুলকপি ৪০-৪৫। আলুর কেজি ২০-২৫ টাকা। আদার পাইকারি মূল্য ১৩৫ টাকা, খুচরা ১৫০-১৬০ টাকা। রসুন (ইন্ডিয়ান) পাইকারি মূল্য ১২০ টাকা, খুচরা ১৪০-১৫০ টাকা। গাজর (দেশি) পাইকারি ৯০ টাকা, খুচরা ১১০ টাকা। বিদেশি গাজর পাইকারি মূল্য ১১৫ টাকা, খুচরা ১৪০ টাকা। টমেটো (বিদেশি) পাইকারি মূল্য ১৩০ টাকা, খুচরা ১৫০ টাকা। মুলা পাইকারি মূল্য ৪৪ টাকা, খুচরা ৫৫-৬০ টাকা। চিচিঙ্গা পাইকারি মূল্য ৪৫ টাকা, খুচরা ৫৫-৬০ টাকা।

কোকাকোলা রোডে ক্রেতা আবদুল বারেক বলেন, ‘আগে ৫০০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার করে নিয়ে যেতাম। এখন ব্যাগের অর্ধেকও হয় না। কোনো সবজির দামই ৫০-৬০ টাকার নিচে নেই। না খেয়েও তো থাকতে পারি না। এ নিয়ে বিক্ষোভ করলে পুলিশে নিয়ে যাবে। কী করব, কার কাছে যাব বুঝতে পারছি না।’

 

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের মাছের দামই বেড়েছে। ১০ দিন আগেও যে তেলাপিয়া বিক্রি হতো কেজি ১৫০ টাকা, এখন তা ১৮০ টাকা। ১ কেজি ওজনের রুই এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ২০০ টাকায়, এখন ২৪০-২৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও পাঙ্গাশ বিক্রি হতো ১২০ টাকায়, এখন ১৬০ টাকা। ১৫ দিন আগেও মাঝারি কই বিক্রি হতো ১৬০-১৮০ টাকায়, এখন ২২০ টাকা। পূর্ব রামপুরা কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা রুবেল মিয়া জানান, বাজারে মাছের সংকট। ইলিশের কারণে নদীতে অন্য কোনো মাছও ধরতে দিচ্ছে না সরকার। তাই সব মাছেরই দাম বেশি।

মুরগির বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা। কিছুদিন আগেও ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৮০-২৯০ টাকা। ডিমের ডজন ১১৫ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ৯৫-১০০ টাকা।

কোকাকোলার ঢালীবাড়ী কাঁচাবাজারের শরীয়তপুর চিকেন হাউসের মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, করোনার কারণে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামারি মুরগি চাষ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন; যে কারণে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে।

ট্রাক সেলে বাজার সামলানোর চেষ্টায় টিসিবি : রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার সামাল দিতে চেষ্টা করছে সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ঢাকাসহ সারা দেশে ৪৫০টি ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে নিজস্ব ডিলারের মাধ্যমে। ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল ও পিঁয়াজ এ চার পণ্য বিক্রি হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকগুলোয়।

জানা গেছে, টিসিবির ট্রাকগুলো থেকে ক্রেতারা প্রতি কেজি চিনি ও মসুর ডাল ৫৫ টাকায় কিনতে পারছেন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি ও ২ কেজি ডাল কিনতে পারেন। এ ছাড়া ১০০ টাকা লিটারে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা ২ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লিটার তেল নিতে পারবেন। আর পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ থাকায় প্রতিদিন প্রচুর ক্রেতা এসব ট্রাকের পেছনে লাইন ধরছেন। স্বল্প আয়ের মানুষের বাইরে এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণিও পণ্য কিনতে টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী শুধু রাজধানী ঢাকা ও পাশের চার জেলায় নিয়োগকৃত ডিলারের মাধ্যমে ৯৫টি ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ পণ্য বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ট্রাকে ১৫০০ থেকে ১৮০০ কেজি পণ্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে সয়াবিন তেল ৪০০ লিটার, চিনি ৩০০ কেজি, মসুর ডাল ৩০০ কেজি আর বাকিটা পিঁয়াজ।

হুমায়ুন কবির জানান, পিঁয়াজ বাদে বাকি তিন পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে তাঁদের। পিঁয়াজ পচনশীল বলে এটি মজুদ করতে পারেন না তারা। বর্তমানে পিঁয়াজের দাম বেশি থাকায় তুরস্ক থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে আমদানি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমদানিকৃত পিঁয়াজের একটি অংশ দেশে এসেছে। বাকিটা পাইপলাইনে আছে।

চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক রেজা মুজাম্মেল জানান, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই পাইকারি বাজারে এক মাস ধরেই সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম উর্ধ্বমুখী। গতকাল প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের পাইকারি মূল্য ছিল ১৪৭ টাকা এবং খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। তা ছাড়া পাইকারিতে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হয় ১৩৫ টাকা। অন্যদিকে পিঁয়াজের বৃহত্তম বিক্রয় কেন্দ্র খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ বাজারে পাইকারি প্রতি কেজি ভারতীয় পিঁয়াজ ৫০-৫৩ আর মিয়ানমারের ভালো মানের পিঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৮, ৪০ ও ৪২ টাকায়। প্রতি কেজি চায়না রসুন ৯৭-৯৮ আর দেশি রসুন ৩০ থেকে ৪৫ টাকা। প্রতি কেজি চায়না আদা ১০০-১০৫, মিয়ানমার আদা ৪০, ভারতীয় ও দেশি আদা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তা ছাড়া দুই সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছিল ৯৬-৯৮ টাকা, গতকাল বিক্রি হয় ১১০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৬৬ টাকা, এখন ৮০ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হয়েছিল ৮০ টাকা, এখন ১০০ টাকা।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়ত ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলাইমান বাদশা বলেন, ‘প্রতি লিটার সয়াবিন তেল পাইকারিতে বিক্রি হয় ১৪৭ টাকা। যা খুচরায় ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে পাম গাছের সংকট দেখা দেওয়ায় সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বাড়ছে। পাম গাছের সংকট কমলে দামও হয়তো কমতে পারে। বিষয়টিতে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি।’

শুল্ক কমেছে চিনি-পিঁয়াজের : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পর পিঁয়াজ ও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত আমদানি শুল্ক পুরোটাই প্রত্যাহার করা হয়েছে। চিনির নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৩০ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

চিনির শুল্ক কমানোর মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গতকাল এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের স্বাক্ষরে এ-সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে ১১ অক্টোবর পিঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পাম তেল ও চিনির শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ওইদিন দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্যপণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় এ অনুরোধ জানানো হয়।

আমদানি বন্ধ থাকায় চালের দাম বেড়েছে : কুষ্টিয়া প্রতিনিধি খন্দকার আল মামুন সাগর জানান, কেজিতে ২-১ টাকা চালের দাম কমার পর কয়েকদিন ধরে আবারও কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পূজার কারণে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ থাকায় চালের বাজার বেড়ে গেছে। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির পর প্রায় দুই সপ্তাহ কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম ছিল কমতির দিকে। ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে কুষ্টিয়ার খুচরা ও পাইকারী বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ১-২ টাকা কম। বেশ কয়েক মাস ধরে অব্যাহতভাবে চালের দাম বৃদ্ধির পর সামান্য ২-১ টাকা কমায় ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেখা দিয়েছিল। বিক্রেতারা বলছিলেন, বিগত ছয় মাসের মধ্যে কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম কমার এটিই ছিল প্রথম ঘটনা।

এদিকে পূজার কারণে এক সপ্তাহ ধরে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ থাকায় কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরেজমিনে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চাল কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে মিনিকেট ৫৬ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে বর্তমানে তা ৫৮ টাকা। এ ছাড়া ৫০ টাকার কাজললতা ৫২ টাকা, ৬৬ টাকার বাসমতী ৬৮ টাকা, ৪০ টাকার মোটা চাল ৪২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) সব ধরনের চালের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে চালের দামের পাশাপাশি বাজারে ধানের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে কুষ্টিয়ার বাজারে মিনিকেট (সরু ধান) ছিল ১৩০০ টাকা মণ, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৪০ টাকা।

নওগাঁ প্রতিনিধি বাবুল আখতার রানা জানান, দেশের ধান-চালের সবচেয়ে বড় মোকাম নওগাঁয় চালের দাম কমেছে প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা। তবে ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাসমাগম নেই আর বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় চালের দাম কমেছে। মিলাররা বলছেন, বিদেশ থেকে চাল আমদানি আতঙ্কে বাজারে প্রকারভেদে সব ধরনের চালের দাম কম। এতে স্বস্তিতে খেটে খাওয়া মানুষ।

নওগাঁর খুচরা চাল ব্যবসায়ী অখিল চন্দ্র বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আটাশ চাল ছিল ৫২ টাকা, বর্তমানে ৫০ টাকা, খাটোদশ চাল ছিল ৪৮ টাকা, বর্তমানে ৪৬ টাকা, জিরাশাইল ছিল ৫৮ টাকা, বর্তমানে ৫৫ টাকা, কাটারি ছিল ৬০ টাকা, বর্তমানে ৫৬ টাকা। প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। বস্তায় কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর