শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবায় টিআইবির ১০ দফা সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবা পেতে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এতে ব্যাপকভাবে অধিকারবঞ্চিত হচ্ছে দলিত, আদিবাসী, হিজড়া, অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার ও চা-বাগান শ্রমিকরা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতে ১০টি সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টিআইবি। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দলিত শ্রেণি সরকারি হাসপাতালে সেবা পায় না। তারা নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হন। ফলে বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনসহ অন্যান্য চিকিৎসা নিতে হয়। আইনগতভাবে সব আদিবাসীর পরিচয় ও তাদের ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন থাকলেও সমতলে বসবাসরত বৃহৎ আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে ভূমি কমিশন নেই। সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং নীতিমালা, ২০১৫-এ অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগীদের চিহ্নিত করে সরাসরি নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। কভিড-১৯ মহামারীর সময় হিজড়াদের সরকারি ত্রাণ সহায়তার লাইনে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয় মূলধারার সহপাঠী ও শিক্ষকদের বর্ণবাদমূলক আচরণের শিকার হন অনেকে।

প্রান্তিক মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে করা ১০ দফা সুপারিশ হচ্ছে-  ১. বিভিন্ন সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিতে বাধা দূর করতে এবং বৈষম্যহীন ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করতে বৈষম্য বিলোপে দ্রুত আইন প্রণয়ন করতে হবে।  ২. সব প্রান্তিক গোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং তা নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। ৩. সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা সম্পর্কে মাঠ পর্যায় এবং সব গণমাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষায় যথাযথ এবং নিয়মিত প্রচার করতে হবে। প্রচার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি অংশীজনদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ৪. সেবা-সংক্রান্ত অভিযোগ কাঠামো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীবান্ধব করতে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী থেকে মৌখিক অভিযোগ গ্রহণ ও তা লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। ৫. সরকারি প্রতিষ্ঠানের গণশুনানিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়ে আলাদা সময় বরাদ্দ করতে হবে এবং তাদের সমস্যা প্রকাশে উৎসাহিত করতে হবে। ৬. সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা দূর করতে হবে। ৭. সেবা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারীদের সেবাদানকারী হিসেবে নিয়োগে প্রাধান্য দিতে হবে। ৮. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব ও অংশ গ্রহণ নিশ্চিতে সংরক্ষিত প্রতিনিধিত্ব সদস্যপদ তৈরি করতে হবে। ৯. সংবিধান প্রতিশ্রুত অন্তর্ভুক্তি, বৈষম্যহীন ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে সেবাদানকারীদের মানসিকতা এবং চর্চায় পরিবর্তন আনতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ১০. চলমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশ গ্রহণ বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর