আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে সংলাপের আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। আগামী রবিবার ধারাবাহিক এ সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি সপ্তাহে এ সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ১৩ মার্চের প্রথম দফার সংলাপে আমন্ত্রণ পেয়েছেন দেশের ৩০ জন শিক্ষাবিদ। ২২ মার্চ দ্বিতীয় দফার সংলাপে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। ইতোমধ্যে প্রথম দিনের সংলাপের চিঠি পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের সংলাপের জন্য চিঠি পাঠানোর কাজ চলছে। সবার সঙ্গে টেলিফোনেও যোগাযোগ করছেন ইসির কর্মকর্তারা। প্রথম দিনের সংলাপে আমন্ত্রণপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন- কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষাবিদ, নাগরিকসমাজের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সংলাপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরপর নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাসহ অন্যদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। তবে সবার শেষে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংলাপে বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংলাপের প্রস্তুতি চলছে। রবিবার সংলাপ শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাবিদ, নাগরিকসমাজ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নারী নেত্রী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আমরা সংলাপ করব। নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে সবার কথা শুনব। এরপর আমরা আমাদের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করব।’ এ বিষয়ে ইসির যুগ্মসচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘১৩ মার্চ প্রথম সংলাপে ৩০ জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এরপর ২২ মার্চ নাগরিকসমাজের সঙ্গে সংলাপ হবে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে সংলাপ অনুষ্ঠানের। সংলাপের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সবার কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। প্রথম দফার সংলাপের চিঠি সবার কাছে পৌঁছে গেছে।’
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে তাদের পরামর্শের আলোকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রস্তুত করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেড় বছর হাতে রেখে আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সব দলের অংশগ্রহনে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনের জন্য নতুন নির্বাচন কমিশনের কী কী করণীয় এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায় সে পথনির্দেশনাও চাওয়া হবে সংলাপে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্টজনদের কাছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। এ ক্ষেত্রে চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির হাতে প্রায় দেড় বছর সময় থাকবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা কমিশনের বিদায়ের পর ২৭ ফেব্রুয়ারি হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন শপথ নেয়। নতুন কমিশন দায়িত্ব দেওয়ার পর দেশের বিশিষ্টজন ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা নতুন কমিশনের কাছে নানা প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে গত দুটি কমিশন দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। জনগণ কেন্দ্রমুখী হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তারা বলছেন, আস্থার সংকট নিরসন করা নতুন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ সংলাপ আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।