শিরোনাম
শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
নতুন ওয়াকওয়ে

দখল দূষণের সেই তুরাগ ফিরছে দৃষ্টিনন্দন রূপে

হাসান ইমন

দখল দূষণের সেই তুরাগ ফিরছে দৃষ্টিনন্দন রূপে

তুরাগের তীরে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। বিকাল হলেই ভিড় জমে বিনোদনপ্রেমীর - জয়ীতা রায়

ওয়াকওয়ে নির্মাণ হওয়ায় নান্দনিকরূপে ফিরেছে তুরাগ নদ। ইতোমধ্যেই তুরাগ নদের কূল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে আট ফুট চওড়া ওয়াকওয়ে। এর ফলে বদলে গেছে নদের দুই পাড়ের মানুষের জীবনচিত্র। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাঁটতে দেখা যায় শত শত মানুষকে। নদ পাড়ের আশপাশের মানুষ সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি বন্ধের দিন ভিড় করছেন। সীমানা পিলার ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের ফলে নদ দখল ও দূষণ কমে গেছে বলে স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

বিআইডব্লিটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মতিউল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো দখল রোধে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের ভিতর ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ২৮ কিলোমিটার অংশের ৪০ শতাংশের কাজ শেষ, বাকি কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ২৪ কিলোমিটার অংশে ঠিকাদার নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পের অন্য কম্পোনেন্টগুলোর কাজ চলছে। যা ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর অংশে গতকাল বিকালে সরেজমিন দেখা গেছে, তুরাগ নদে নৌকা চলছে। চলছে ইঞ্জিনচালিত বোট। কড়া রোদেও তুরাগ পাড়ে গড়ে তোলা ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটতে দেখা গেল নানা বয়সী মানুষকে। ওয়াকওয়ে বিনোদনপ্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন তুরাগ নদের ওয়াকওয়েতে হাঁটছে শত শত মানুষ। সেখানে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ আনন্দে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। আর প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। ওয়াকওয়েতে কথা হয় রাসেল আর সাঈদ নামের দুই যুবকের সঙ্গে। তারা বলছিলেন, আমরা ঢাকা উদ্যানের ভিতর একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। তীব্র রোদের মধ্যেও ওয়াকওয়ে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই একগাল হেসে বললেন, আগে এখান দিয়ে বাসায় যেতাম না। ভিতর দিয়ে টেম্পো, রিকশা বা হেঁটে যেতাম। ওইসব রাস্তায় তীব্র যানজট থাকে। সে জন্য এ ওয়াকওয়ে দিয়ে হেঁটে যাই। আবদুল হামিদ নামে এক চা দোকানি জানান, প্রতিদিন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে তুরাগের পাড়ে। সুন্দর হাঁটার রাস্তা হয়েছে। নদীর পাড়ে বসে থাকা যায়। কোনো বখাটের উৎপাত নেই। ছিনতাইকারী, নেশাখোর নেই। সন্ধ্যার পর আরও সুন্দর লাগে। কারণ দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই মানুষের যাতায়াত রয়েছে। জেটিতে ইট, বালু, সিমেন্ট আর রড বোঝাই জাহাজ ভিড়ছে যখন তখন। এসব জাহাজের বড় বড় লাইট পুরো এলাকা আলোকিত করে রাখছে। সন্ধ্যা নামলেই দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনেকেই রাত ১০টা-১১টা নাগাদও নদের পাড়ে ঘুরে বেড়ান। সীমানা পিলার ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের কারণে নদ দখল ও দূষণও কমে গেছে। কেউ আর নদে ময়লা ফেলে না। এখানে অনেকে প্রতিদিন গোসলও করছেন।  জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদ-নদীগুলোর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রথম সংশোধনে ব্যয় বেড়েছে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বাস্তবায়নের মেয়াদও বেড়েছে এক বছর। মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পের উদ্দেশে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীগুলোর তীরভূমির অবৈধ দখল রোধ এবং দখলমুক্ত অংশের সৌন্দর্য বর্ধন, নদীর উভয় তীরের পরিবেশগত উন্নয়ন, নদীর দখলমুক্ত তীরভূমিতে অবকাঠামো নির্মাণ, নদীর নাব্য, গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি এবং নদীর পানির দূষণ কমানো সম্ভব হবে। ঢাকার সদরঘাট, উত্তরখান, তুরাগ, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচর, কোতোয়ালি, মিরপুর, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর বন্দর, সোনারগাঁ ও গাজীপুর সদরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ওয়াকওয়ে সংলগ্ন ৩৫.৩৫৮ কিলোমিটার ড্রেন, ২.৬৫ কিলোমিটার বোল্ডার প্রোটেকশন, জেটির জন্য ২১ কিলোমিটার পার্কিং ইয়ার্ড এবং চারটি ঘাট নির্মাণ কার্যক্রম ডিপিপিতে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তি, রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধিসহ কতিপয় অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির ফলে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রয়োজন পড়েছে।

সর্বশেষ খবর