উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার অভিজাত বুজিগা হিল এলাকা গত সপ্তাহে ছিল এক অদ্ভুত ঔৎসুক্যের কেন্দ্র। বিলাসবহুল একটি বাড়িতে তিন দিন ধরে চলছিল এক জমকালো বিয়ের আয়োজন। অতিথি আগমন, পানাহার, আর গভীর রাত পর্যন্ত আনন্দ-উল্লাসে মেতে ছিল পুরো এলাকা। কিন্তু কে এই ভাগ্যবান বর? তিনি আর কেউ নন, নিউইয়র্কের আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি।
৩৩ বছর বয়সী মামদানি ডেটিং অ্যাপে পরিচিত হয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী রামা দুয়াজির সঙ্গে। তাঁদের প্রেম পর্বের শুরুটা হয় সেখানেই, এরপর গত ডিসেম্বরে দুবাইয়ে বাগদান এবং ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কে ছোট পরিসরে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এবার কাম্পালায় সেই বিয়েরই বিশাল আয়োজন। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এর ঠিক আগে রোববারই উগান্ডা পৌঁছান মামদানি।
কিন্তু এত জায়গা থাকতে কেন উগান্ডায় এই বিয়ের আয়োজন? আসলে মামদানির জন্ম এই আফ্রিকান দেশটিতেই। মাত্র সাত বছর বয়সে জন্মভূমি ছেড়ে তিনি পাড়ি জমান নিউইয়র্কে, ২০১৮ সালে অর্জন করেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব। কাম্পালার বুজিগা হিলের যে বাড়িতে এই রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠান হলো, সেটি তাঁর ৭৮ বছর বয়সী বাবা অধ্যাপক মাহমুদ মামদানির। আর মামদানির মা ৬৭ বছর বয়সী মীরা নায়ার একজন খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা।
বুজিগা হিল উগান্ডার ধনী ব্যক্তিদের আবাসস্থল। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মামদানিদের বাড়িটিকে সাজানো হয়েছিল এক চোখ ধাঁধানো রূপে। বাগানের গাছগুলো ঝলমল করছিল রঙিন আলোয়, আর ভেসে আসছিল সুরের মূর্ছনা। মঙ্গলবার, অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে মার্সিডিজ ও রেঞ্জ রোভারের মতো নামীদামি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো সারি বেঁধে হাজির হতে শুরু করে।
তবে এই জমকালো আয়োজনের পাশাপাশি চোখে পড়ার মতো ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এমন তৎপরতা সচরাচর দেখা যায় না বুজিগা হিলে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাড়ির বাইরে ২০ জনের বেশি বিশেষ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাঁদের অনেকের মুখে ছিল মুখোশ। এমনকি মুঠোফোন জ্যাম করারও ব্যবস্থা ছিল। এ সবকিছুই করা হয়েছিল মামদানির বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য। বাড়ির একটি ফটকেই ছিলেন নয়জন নিরাপত্তারক্ষী। এই মুখোশধারী নিরাপত্তারক্ষীরা রহস্যের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল পুরো আয়োজনে।
বৃহস্পতিবারের আয়োজন ছিল আরও জমকালো। ভারতীয় ধাঁচের এই অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয় বিভিন্ন ফলের জুস। নাচ-গান মিলিয়ে অনুষ্ঠান গড়ায় মধ্যরাত পর্যন্ত। এর আগে অতিথিদের উদ্দেশে মাইক্রোফোনে কথা বলেন মামদানি নিজেও। তিন দিনের বর্ণাঢ্য উৎসব শেষে শুক্রবার মামদানিদের বাড়ি থেকে অনুষ্ঠানের তাঁবুগুলো খুলে নেওয়া হয় এবং ফটকের বাইরে স্তূপ করে রাখা হয় অনুষ্ঠানের ফুলগুলো।
মামদানির বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে এমন জোরদার নিরাপত্তা ছিল যে, খোদ রাজধানীর অনেকেই বাড়ির ভেতরে কী ঘটছে, তা জানতেও পারেননি। কাম্পালার এক বাসিন্দা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুনেছি মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র হতে যাচ্ছেন। জানতে চাই – এখন কি আমরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ভিসা পাব? মামদানি যেভাবে নিউইয়র্কে গেছেন, সেভাবে কি আমরাও যেতে পারব?
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল