শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
মাঠের রাজনীতিতে দুই দল

বিএনপি আপাতত কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিএনপি আপাতত কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না

নানা দিক থেকে চাপ থাকলেও এখনই কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে না বিএনপির হাইকমান্ড। তারা বলছেন, মামলায় বিপর্যস্ত দলের নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে রাজধানীতে কর্মসূচি ডাকলে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি রাখে। এ অবস্থায় এখনই কঠোর আন্দোলনে নামলে নির্বাচনের আগে বিশেষ মুহূর্তের আন্দোলনের সময় নেতা-কর্মীদের জেলে থাকতে হবে। তাই বুঝেশুনে চলমান নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ নানা দাবিতে সমমনাদের নিয়ে আন্দোলনের মাত্রা বাড়ানো হবে। তবে, জনস্বার্থ ইস্যুতে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। এভাবে রোজার আগ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সভা-সমাবেশ ও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি ও মিত্রগুলো। রোজা শেষে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলন ঘোষণা করা হবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়েই তারা মাঠে নেমেছেন। তাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। ধাপে ধাপে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হবে। যখন দলের সঙ্গে সাধারণ জনগণ নেমে আসে তখনই গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেবে। সেই লক্ষ্যে সরকারবিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে, তারপর একটি পর্যায়ে গিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে অবস্থান নেবে। তারা বলছেন, রাজধানীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউ তৈরি করতে আরও সময় লাগবে। সেজন্য জনস্বার্থ ইস্যুতে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবির পক্ষে জনগণের সমর্থন আদায়ে নিয়মিত কর্মসূচিও চলবে। তবে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায় ও বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে নতুন কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী সব মহানগর ও উপজেলায় সমাবেশ ও মিছিল হবে। জানা গেছে, চলমান আন্দোলনে কর্মসূচি প্রণয়নে এবার আগের চেয়েও কৌশলী বিএনপি। বিএনপির কর্মসূচি দেখে তাদের মিত্র দল ও জোটগুলোও কর্মসূচি প্রণয়ন করছে। আন্দোলন ধীরগতির কারণ হিসেবে বিএনপি নেতারা বলছেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে সারা দেশে বিএনপির গণসমাবেশগুলোতে যে সাড়া পড়েছে, সেই গতি ঢাকায় এসে কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। বিশেষ করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশি, মির্জা ফখরুল-আব্বাসসহ ব্যাপক হারে গ্রেফতারের কারণে ঢাকার আন্দোলনে কিছুটা প্রভাব পড়ে। বিএনপির যেসব সিনিয়র নেতা ‘মরব নয় বাঁচব’ বলে কঠোর আন্দোলনের আভাস দিতেন, তারাও এখন খানিকটা নীরব।

জানা গেছে, বিএনপিতে আবারও মামলা ও সাজা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নতুন করে মামলা দায়েরের পাশাপাশি পুরান মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা কয়েক শ মামলা এখন রায় ঘোষণার অপেক্ষায়। কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশে দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে কারণে-অকারণে নতুন করে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে গায়েবি মামলা। সারা দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি। এতে আসামি করা হয়েছে ৫০ লাখের কাছাকাছি নেতা-কর্মীকে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক আন্দোলন-কর্মসূচিতে বিএনপির ১৫ জনের বেশি নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই আছে দলটি। কোনো কর্মসূচি ঘিরে যাতে বিশৃঙ্খলা বা সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে অতীতে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া সরকার বা বিভিন্ন শক্তির প্রলোভনে পড়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার নেতিবাচক ফল আমরা পেয়েছি। কিন্তু এবার খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে অনেকটাই ধীরে চলতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। দলের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, একটি পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপিকে এখনই রাজপথে নামানোর কৌশল হতে পারে। তাই তারা এবার সে ফাঁদে পা দেবে না। ১০ দফা কর্মসূচি ও রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার পক্ষে জনমত গঠনে বুকলেট, লিফলেট বিতরণ ও সভা-সেমিনার করা হবে। এরই মধ্যে কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে সেমিনার হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম অফিসে বুকলেট বিতরণ শুরু করেছে বিএনপির মিডিয়া সেল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে কোনো ইস্যুতেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে সরকার মামলা করছে, হামলা চালাচ্ছে। সভা-সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা করছে। এটাই প্রমাণ করছে সরকারের অবস্থান গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য তথা নির্মূল করতেই সরকারের এ উদ্যোগ। এসব মূলত সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা এবং স্বৈরতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, আপাতত যে ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। পরিস্থিতি বুঝে যুগোপযোগী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, এবার কঠোর আন্দোলনের প্রয়োজন হয়তো হবে না। কারণ সরকার চরম বেকায়দায় আছে। নিজেরাই সরে যেতে বাধ্য হবে। জনগণ তাদের সঙ্গে নেই, বিদেশেও বন্ধু নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর