প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩’ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় এই বেসামরিক পুরস্কার প্রধানমন্ত্রী তুলে দেন।
স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শামসুল আলম, প্রয়াত লেফটেন্যান্ট এ জি মোহাম্মদ খুরশীদ (মরণোত্তর), শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া (মরণোত্তর) এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। ‘সাহিত্য’ ক্যাটাগরিতে প্রয়াত ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন) (মরণোত্তর) এবং ‘সাংস্কৃতিক’ ও ‘ক্রীড়া’ ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে পুরস্কার পেয়েছেন পবিত্র মোহন দে এবং এ এস এম রকিবুল হাসান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ‘সমাজসেবা/জনসেবা’ বিভাগে এবং ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ ক্যাটাগরিতে বেগম নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) এবং ড. ফেরদৌসী কাদরী পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে ৯ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেকে একটি করে স্বর্ণপদক, একটি সার্টিফিকেট এবং সম্মানী চেক পেয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ড. ফেরদৌসী কাদরী অনুষ্ঠানে তার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই, অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। এটুকু বলতে পারি, ২০০৮ এ নির্বাচিত হয়ে ২০২৩ একটানা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই কিন্তু আজকের উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, মহান অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগ প্রয়োজন। যে কোনো অর্জনের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, সেই ত্যাগ স্বীকার করতে পেরেছি বলেই আমাদের অর্জনগুলো একে একে আমরা জনগণের কল্যাণে আনতে পেরেছি। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পরের সময়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পঁচাত্তর থেকে আমরা যদি দেখি, বারবার গণতন্ত্র থমকে দাঁড়িয়েছে, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকতে পারেনি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকতে পারেনি, কাজেই বাংলাদেশও সেভাবে এগোতে পারেনি। ক্ষমতাসীন যারা ছিল তাদের বাংলাদেশ নিয়ে কী চিন্তা-ভাবনা ছিল সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল কিন্তু করোনাভাইরাসের অতিমারি সে অগ্রযাত্রা কিছুটা স্তিমিত করে দেয়। এরপর এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। উন্নত দেশগুলোও এখন হিমশিম খাচ্ছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। বিগত বছরগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে দারিদ্র্য কমে আসার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্যের হার যেখানে ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল সেখানে আমরা কমিয়ে এনেছি ২০ শতাংশে। আরও একটি সুখবর দিতে পারব, আমাদের দারিদ্র্যের হার আরও হ্রাস পেয়েছে। যেটা সঠিকভাবে এখন তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছি, এটাকে ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও আমরা নিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের পর তাঁর সরকার এখন ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়াও তাঁর সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অন্যের ওপর নির্ভর না করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে উন্নত ও সম্মানজনক জীবন কাটাতে পারে। আমরা খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি এবং অন্যান্য প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে এবং প্রত্যেক গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি দিচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে এবং প্রতিটি খাতে অগ্রগতির লক্ষ্যে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে- যার মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দরিদ্রদের জন্য খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে ১ কোটি মানুষকে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় ভর্তুকি দিয়ে চাল দিচ্ছে ও অন্য ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রমজান মাসে আরও ৫০ লাখ মানুষকে (প্রতি কেজি ১৫ টাকায়) চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে মানুষ কষ্ট না পায়। তিনি আরও বলেন, চাল দেওয়ার পাশাপাশি রমজান মাসে (দরিদ্রদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে) ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলাসহ আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। আমরা সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে রমজানে কাউকে খাবারের জন্য কষ্ট করতে না হয়। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা, বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত একটি দেশ বিনির্মাণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সবকিছুই করেছে। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুস্থ মানুষকে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও সুন্দর জীবন দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি’- মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি এমন অনেক দেশের এমন ধারণাকে জাতির পিতা মিথ্যা প্রমাণ করেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, যখন দেশি-বিদেশি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বুঝতে পারল যে, বাংলাদেশকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না, তখন তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের জাতির পিতাকে হত্যা করল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস ও ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়।