শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
র‌্যাবের ভয়ানক তথ্য

অপহরণের পর বিজ্ঞাপন দিয়ে শিশু বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপহরণের পর অনলাইনে শিশু বিক্রি করত ওরা। সবশেষ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে অপহরণ করা তিন বছরের একটি শিশুকে বিক্রি করে ওরা হজম করতে পারেনি। অপহরণের ২২ দিন পর গোপালগঞ্জ থেকে অক্ষত অবস্থায় মো. সিদ্দিক (৩) নামে সেই শিশুটিকে উদ্ধার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব-২-এর একটি দল। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে মূল হোতা পীযূষ দম্পতিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলেন অপহরণকারী পীযূষকান্তি পাল (২৯), সহযোগী ও স্ত্রী ঋদ্ধিতা পাল (২৫), শিশু বিক্রির মধ্যস্থতাকারী সুজন সুতার (৩২), শিশুর ক্রেতা পল্লবকান্তি বিশ্বাস (৫২) ও তার স্ত্রী বেবী সরকার (৪৬)। র‌্যাব জানিয়েছে, শিশু সিদ্দিককে অপহরণের পর অনলাইনে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পরে শিশুর নাম পাল্টে ২ লাখ টাকায় স্ট্যাম্প করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র?্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র?্যাব-২ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান। তিনি বলেন, ২৬ এপ্রিল দুপুরে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় বাসার সামনে বড় বোন হুমায়রার (৮) সঙ্গে খেলছিল সিদ্দিকসহ আরও সাত-আটটি শিশু-কিশোর। এ সময় এক অজ্ঞাত ব্যক্তি সবাইকে চকোলেট খাওয়ায়। একটু পর হুমায়রাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে ছোট ভাই সিদ্দিককে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। দিন শেষে তাদের মা বাসায় এলে হুমায়রা বিষয়টি তাকে জানায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে তিনি মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তী সময়ে অপহৃত শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। জিডির পরই ওই এলাকা থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। শিশুটির বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-২। তারা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে, অপহরণকারী সাভারের বাসিন্দা পীযূষকান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী ঋদ্ধিতা পাল। এ দম্পতি শিশুটিকে বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেন। অবশ্য সেখানে তারা নিজের বাচ্চার ছবি পোস্ট করেন। এরপর তারা সুজন সুতারের (৩২) মাধ্যমে পল্লবকান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকারের কাছে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন শিশুটিকে। পরে শিশু কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত সুজন সুতারকে ঢাকার শাহবাগ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার অপহৃত শিশুটিকে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াসি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব-২ অধিনায়ক আরও জানান, অপহরণকারী চক্রটির মূল হোতা পীযূষকান্তি পাল পঞ্চগড় সদর উপজেলার রমেন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াকালে পার্টটাইম বিউটি পারলার বা স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় ঋদ্ধিতা পালের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে ২০২০ সালে বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় তিনি মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েন। ২০২২ সালের মে মাসে মানব পাচারের অভিযোগে বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হন।

যেভাবে শিশুটি বিক্রি হয় : সাভার থেকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় এসে শিশু সিদ্দিককে অপহরণ করে নিয়ে যান তারা। এরপর নিজেদের সন্তানের ছবি ব্যবহার করে একটি অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেন পীযূষের স্ত্রী ঋদ্ধিতা পাল। তিনি লেখেন, তার বাসার স্বামীপরিত্যক্তা গৃহপরিচারিকার একটি বাচ্চাকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে দত্তক দেওয়া হবে। এরপর সুজন সুতার তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২১ এপ্রিল যোগাযোগ করেন। এ সময় ঋদ্ধিতা পাল নিজের ছেলের ছবি সুজন সুতারের কাছে পাঠিয়ে বঋেণ, ‘এই ছেলেকে দত্তক দেওয়া হবে, আপনাদের পছন্দ হয় কি না বলেন।’ ছবি দেখে সুজন সুতার শিশুটিকে পছন্দ করেন এবং তাকে টাকার বিনিময়ে দত্তক নেবেন বলে জানান। পরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঋদ্ধিতা পাল নিজেকে অপর্ণা দাস ও পীযূষ নিজেকে বিজন বিহারি পাল পরিচয় দিয়ে তার বাসার গৃহপরিচারিকার সন্তান হিসেবে অপহৃত সিদ্দিককে একটি স্ট্যাম্প তৈরি করে হাতবদল করেন। এ সময় প্রমাণ হিসেবে তারা নিজের সন্তানের টিকা কার্ড, ঋদ্ধিতা পালের জন্মসনদ এবং বিজন বিহারি পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি দেওয়া দেয়। অপহৃত শিশু বিক্রিতে সহায়তাকারী সুজন সুতার র?্যাবকে জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর বড় বোন বেবী সরকার ও ভায়রা পল্লবকান্তি বিশ্বাস নিঃসন্তান। তাই এই শিশুর খোঁজ পেয়ে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে সিদ্দিককে কিনে নেন। এরপর ২৬ এপ্রিল রাতে পল্লবকান্তি বিশ্বাস ও বেবী সরকারের কাছে গোপালগঞ্জের নিজ বাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে দিয়ে আসেন।

 

 

সর্বশেষ খবর