চট্টগ্রামে মুষলধারে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের শঙ্কা তৈরি হয়। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে এখন দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগে নদীর পানি আজ শনিবার এবং আগামীকাল রবিবার সমতল থেকে দ্রুত বেড়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এ কারণে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে নদ-নদীর পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর ২টার পর থেকে আজ শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় বিরতিহীনভাবে হালকা বজ্রপাতসহ মাঝারি থেকে ভারী মানের বৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রামে ২০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এ সময় পাহাড়ি ঢলের সম্ভাবনাও আছে। একই সঙ্গে পাহাড় ধস ও ভূমি ধসের ঝুঁকিও আছে। কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি খুবই শক্তিশালী হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় আছে ২৬টি। এসব পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি পরিবার। পরিবারগুলোতে আছে শিশু, বৃদ্ধসহ প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। বৃষ্টি হলেই শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া ও পাহাড় ধসের শঙ্কার কথাও তারা জানে। তবুও জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে তারা পাহাড়কেই আঁকড়ে আছে। প্রশাসন অন্যত্র সরিয়ে নিলেও পরে তারা আবারও ফিরে আসে। ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা। নগরে বেশি পাহাড় আছে- পাহাড়তলী, আকবর শাহ, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝরনা, ষোলশহর ও ফয়’স লেক এলাকায়। বর্ষণের পর চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিসের আওতাধীন মিয়ার পাহাড় ও টাংকির পাহাড় এলাকা এবং বাটালি হিল ও মতিঝরনা এলাকার পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনকে পাহাড় ধসের বিষয়ে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় মসজিদ হতেও সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব তানভীর আল নাসীফ বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ চলছে। রেড ক্রিসেন্ট ও জেলা প্রশাসনের কর্মীরা তৎপর আছেন। পাহাড়গুলোতে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ার শঙ্কা থাকে। তাই বৃষ্টির সময় ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হলো বৃষ্টি কমার পর তারা আবারও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ফিরে আসে।
অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী ও গোমতী নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রামে পাহাড়ি ঢল বাড়তে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী দুই দিন উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। ফলে এই সময় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।