যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর অধীর আগ্রহে ৩৪ কোটি আমেরিকানের মতো গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন? কোন দল পাচ্ছে সিনেট ও হাউসের নেতৃত্ব। রবিবার পর্যন্ত ৮ কোটি আমেরিকান আগাম ভোটে অংশ নেওয়ায় ১০ কোটি ভোটার গতকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের পরই শুরু হবে ফলাফল ঘোষণার পালা। আর এজন্য ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে কয়েকদিন। এদিকে সুইং স্টেটগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আভাস মিলেছে। মূলত সুইং স্টেটেই করে দেবে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান। অপরদিকে ডাকযোগে আসা ব্যালট গণনা ব্যতীত অধিকাংশ এলাকার ফলাফল নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য নির্বাচন কর্মকর্তারা নাগরিকদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। এমন আহ্বান উচ্চারিত হতো না যদি জনমত জরিপে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে বিস্তর ব্যবধান পরিলক্ষিত হতো। বিশেষ করে দোদুল্যমান ৭ স্টেটে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস ফুটে ওঠায় ফলাফল ঘোষণা বিলম্বিত হবে বলে নির্বাচনি বিশ্লেষক-পর্যবেক্ষক এবং কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্মরণকালের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনটি আমেরিকানদের ভোট যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি উজ্জীবিত করেছে। আগাম ভোটে রিপাবলিকানদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে তা দৃশ্যমান হয়েছে। উল্লেখ্য, ভোট গ্রহণ শেষ হলে স্টেটসমূহের নির্বাচন কর্মকর্তারা কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন সেই কেন্দ্রে সেটি জানাবেন স্বল্প সময়ের মধ্যে। এরপর তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে ডাকযোগে আসা ব্যালট গণনার অপেক্ষায় থাকবেন। এমন প্রক্রিয়া অবলম্বনের জন্য সর্বশেষ নির্বাচনে জো বাইডেনকে প্রাথমিকভাবে জয়ী ঘোষণায় চার দিন পর্যন্ত সময় লেগেছে। আর এবারের নির্বাচনেও দোদুল্যমান ৭ স্টেটের ফলাফল ঘোষণা করতে সময় লাগবে। কারণ পেনসিলভেনিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, মিশিগান, উইসকনসিন, জর্জিয়া এবং নর্থ ক্যারোলিনায় উভয়ের ভোটের পরিমাণ প্রায় সমান সমান। বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোটারের লাইন দীর্ঘতর হলে সবার ভোট গ্রহণ পর্যন্ত কেন্দ্র খোলা রাখতে হয়। বেশ কটি স্টেটের আবহাওয়া বৈরী থাকার কথা দুপুর পর্যন্ত। সেখানকার ভোটাররা যদি অপরাহ্ণে কেন্দ্রে হাজির হন তাহলে গণনার ব্যাপারটিও বিলম্বিত হবে। এ ছাড়া রয়েছে ডাকযোগে আসা ব্যালটের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন। সর্বশেষ কখন তা নির্বাচন অফিসে এলে তা বৈধ বিবেচিত হবে- এ নিয়ে প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে। রিপাবলিকানরা আগেই জানিয়ে রেখেছেন যে, ভোটের দিন অর্থাৎ ৫ নভেম্বর গন্তব্যে পৌঁছা ব্যালটই গণনার আওতায় আসবে। বিদেশে অবস্থানকারী কূটনীতিকসহ সামরিক বাহিনীর সদস্যগণের ব্যালটের ব্যাপারটিও রয়েছে। কারণ, কোন কোন দেশ থেকে নির্বাচনের পরের দিনও আসতে পারে সে সব ব্যালট। ফলাফল খুব কাছাকাছি হলে এসব ব্যালটকেও গণনার প্রয়োজন হবে। আর এমনি অবস্থায় এবারের নির্বাচন এবং ফলাফল নিয়ে কেউই স্বস্তিতে নেই। মডার্ন পলিটিক্যাল ইতিহাসে এমন অনিশ্চয়তার ব্যাপারটি সবারই ভাবিয়ে তুলেছে। রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটির সাবেক কমিউনিকেশন্স ডাইরেক্টর এবং ভোট-বিশেষজ্ঞ ডোগলাস হেইয়ি গতকাল গণমাধ্যমে বলেছেন, অত্যন্ত সততার সঙ্গে বলতে হলে এটাই সঠিক যে, কিছুই জানি না, বুঝতে পারছি না। কারণ সবকিছুতেই ঘোলাটে ভাব। ট্রাম্প না কমলা-এমন একটি দ্বন্দ্ব সবার মধ্যে বিরাজ করছে। ভোটের গতিবিধি সম্পর্কে কোনো অনুমান করা যাচ্ছে না।
দুজনকেই ভোট দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা : নিউইয়র্ক, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ম্যারিল্যান্ড, নিউজার্সি স্টেটের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তালিকাভুক্ত অসংখ্য ভোটার কমলা হ্যারিসের পরিবর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের মাঝে এ প্রবণতা বেড়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সক্রিয় সংগঠক হয়েও কেন রিপাবলিকান ট্রাম্পকে ভোট দিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে লং আইল্যান্ডের উদীয়মান ব্যবসায়ী এবং বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন বাদল, নিউইয়র্ক সিটির খ্যাতনামা নির্মাণ ব্যবসায়ী ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেতা আব্দুল কাদের মিয়া, ম্যারিল্যান্ডের কমিউনিটি লিডার শেখ সেলিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক শান্তি স্থিতি এবং নিরাপত্তার কথা বিশেষ করে আমেরিকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে ট্রাম্পের বিকল্প নেই।