দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদ গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে এই আহ্বান জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের অর্থনীতি বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, এ ছাড়াও ভ্যাট এবং ট্যাক্স হার বাড়নোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ অবস্থাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ব্যয় ক্রমাগত বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখার ওপর জোরারোপ করে বলেন, এর ফলে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও হ্রাস পেতে পারে। সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুবিধা পেতে প্রায় ৩১টি ডকুমেন্ট প্রদান করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে তাঁরা অনেক সময় ঋণ সুবিধা প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হন, বিষয়টি সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি জোর দাবি জানান। দেশের অর্থনীতির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকঋণের শ্রেণিকরণের সময়সীমা তিন মাস থেকে কমপক্ষে আরও তিন-ছয় মাস বাড়ানোর দাবি জানান ঢাকা চেম্বার সভাপতি। এ ছাড়াও দেশের বাইরে ব্যবসায়িক অফিস স্থাপনের বিদ্যমান কঠোর নীতিমালা কিছুটা হলেও শিথিল করা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন, যার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়বে, সেই সঙ্গে বেগবান হবে অর্থনীতি। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং আশা প্রকাশ করেন শিগগিরই বাজারে ইতিবাচক প্রভাব প্রতিফলিত হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন রমজান মাসে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের মার্জিন ছাড়াই এলসি খুলতে ব্যাংকগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ মুহূর্তে বাজারে ডলারের তেমন কোনো সংকট নেই এবং ডলারের মূল্য বেশ স্থিতিশীল, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য নির্ধারণ করবে না, এটা নির্ধারিত হবে ডলারের আমদানি ও চাহিদার ভিত্তিতে। আগামী জুন-জুলাইতে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় সুদের হার বাজার পর্যালোচনার ভিত্তিতে আরও হ্রাস করা সম্ভব হবে। ব্যাংকঋণের শেণিকরণের সময়সীমা বর্তমানে তিন মাস থেকে বাড়ানো যায় কি না, তা বিবেচনা করা হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। তা ছাড়াও দেশের বাইরে ব্যবসায়িক অফিস খোলার বিদ্যমান শর্তাবলি আরও শিথিল করার বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হবে বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
তিনি জানান, বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ ইতিবাচক, রপ্তানি আয় ঊর্ধ্বমুখী এবং রিজার্ভ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই এর সুফল শিগগিরই আমরা ভোগ করতে পারব। তবে ব্যবসাবাণিজ্যের সব ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স অনুসরণের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।