বিদ্যমান সংবিধানের আলোকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। পাশাপাশি সংবিধানে থাকা জাতীয় চার মূলনীতির কোনো পরিবর্তন চায় না দলটি। এ ছাড়া নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংবিধান সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির পক্ষ থেকে এসব কথা জানানো হয়।
সিপিবি সভাপতি শাহ আলমের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ছাড়াও অংশ নেন মিহির ঘোষ, এ এন রাশেদা, ফজলুর রহমান, রাগিব আহসান মুন্না, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কাজী রুহুল আমিন, সাজেদুল হক রুবেল ও আবিদ হোসেন। অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সংলাপ শেষে বের হয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের মূলভিত্তি হচ্ছে একাত্তর। কিন্তু উনাদের প্রস্তাব দেখে মনে হয়েছে এটা যেন একাত্তরকে চব্বিশ দিয়ে রিপ্লেস করা। আমরা এটা যথাযথ নয় বলে মনে করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেমন থাকবে তেমন অবশ্যই চব্বিশের আকাঙ্ক্ষাও থাকবে।’ সংবিধানের চার মূলনীতি অক্ষুণ্ন রাখার প্রস্তাব দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধানে কতগুলো অসম্পূর্ণতা আছে এটা দূর করতে হবে, এটাকে পুনর্লিখন বা অন্য কিছু করার প্রয়োজন নেই। এ সংবিধানের যে চারটি মূলনীতি আছে এগুলো অক্ষুণ্ন রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’ গণপরিষদের বিরোধিতা করে প্রিন্স বলেন, ‘এগুলো করবেটা কে? নির্বাচিত সরকার। আমরা আলোচনা করতে গিয়ে এ কমিশনকে মনে করিয়ে দিয়েছি, আমাদের পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। আমাদের লক্ষ্য সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। আমরা এমন একটি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, যেখানে সবাই তার যোগ্যতা অনুসারে কাজ পাবে। সমাজের দুর্নীতি প্রতিরোধ হবে।’
সংস্কারকাজ তৈরি করে আগামী সংসদের জন্য রেখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো আপনারা দিয়েছেন, যেগুলোতে একমত হয়েছি বা হচ্ছি না এগুলোর দায়িত্ব কে নেবে? এগুলোর দায়িত্ব নেবে দেশের জনগণ।
দেশের জনগণ মানে ১৮ কোটি মানুষকে তো আর স্টেডিয়ামে নিয়ে এসে মত নিতে পারব না, সেই মত নেওয়ার জন্য সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গুটিকয় লোক একসঙ্গে বসলাম আর সিদ্ধান্ত নিলাম কালকেই নতুন একটা পদ্ধতিতে করে ফেলব, এটা ভুল। এটা মনে করিয়ে দিয়ে বৈঠক শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে, উনারা বলছেন এগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে করব। এমনভাবে সংবিধানে নিশ্চিত করতে চাই। চাকরি গেলে কোর্টে যাবে সরকার তার ব্যবস্থা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এমন কোনো বিতর্কিত বিষয় সামনে আনবেন না, যার কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’