রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপস্থিত না হলেও তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতি নিয়ে গভীর হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তিনি শান্তি আলোচনা সফল করতে পুতিনের সরাসরি উপস্থিতি কামনা করেন। এই সঙ্গে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিও চান। সূত্র : রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি, আলজাজিরা
খবরে বলা হয়, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার পর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন উচ্চ পর্যায়ে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছে। এতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছেন পুতিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কি। ইউক্রেনের পক্ষে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ ও ডজনখানেক উপমন্ত্রী নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছেন। আলোচনার শুরুতেই ইউক্রেন দলের পক্ষ থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনুপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা ও গভীর হতাশা প্রকাশ করা হয়। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, আলোচনা সফল করতে হলে তাঁর উপস্থিতি অনিবার্য। ‘ডামি’ কারও সঙ্গে আলোচনা করে কোনো ফল আসবে না। ইউক্রেন প্রতিনিধিদল আগের দাবির মতোই আকাশ, স্থল ও জলপথে তাৎক্ষণিক, পূর্ণ এবং শর্তহীন অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব তোলে।
প্রসঙ্গত, আলোচনা নিয়ে এর আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘ক্রেমলিনের নেতাকে (পুতিন) তাঁর নেতৃত্বের প্রমাণ দিতে হবে। যদি তিনি আলোচনায় রাজি থাকেন, তাহলে আমাদের সরাসরি দেখা হতেই হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে জরুরি হলো যুদ্ধবিরতি, যদিও আমি মনে করি রাশিয়া এখনো আলোচনা নিয়ে আন্তরিক নয়।’
আরেক খবরে বলা হয়েছে, গতকালের বৈঠকটি আগের দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকের সব আয়োজন এবং প্রতিনিধিদের অনেকের উপস্থিতি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। ক্রেমলিনের প্রতিনিধিদল বৈঠকস্থলে সারা দিন ধরে কিয়েভের প্রতিনিধিদের আগমনের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কি সন্ধ্যায় তাঁর প্রতিনিধিদলের নাম ঘোষণা করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের নেতৃত্বে ১২ জনের প্রতিনিধিদলটি গঠন হওয়ার পর এক দিন বিরতি দিয়ে সে বৈঠক গতকাল শুরু করতে হয়েছে।
এদিকে ইস্তাম্বুলে আয়োজিত আলোচনার ফলাফল নিয়ে এক দিন আগেই মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি উল্লেখ করেন, ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা থেকে বড় কোনো অগ্রগতির আশা করা যাচ্ছে না। আলোচনার আগে দুই পক্ষের মাঝে বাগবিতন্ডা এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে নিম্নপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠানো এ প্রত্যাশায় পানি ঢেলে দিয়েছে। তুরস্কের আনতালিয়ায় ন্যাটোর বৈঠক শেষে রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই... আমরা আলোচনার ফলাফল নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নই।’ তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘যতক্ষণ না ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মুখোমুখি হচ্ছেন, ততক্ষণ শান্তি আলোচনা গতি পাবে না।’ ট্রাম্পও একমত ‘আলোচনায় অর্থবহ অগ্রগতি হবে না যতক্ষণ তিনি নিজে পুতিনের সঙ্গে দেখা করছেন।’ এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আপনারা পছন্দ করুন বা না করুন, যতক্ষণ না আমি ও তিনি (পুতিন) মুখোমুখি হই, কিছুই ঘটবে না।’