দেশব্যাপী আলোচিত মাগুরার আট বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান গতকাল এ রায় দেন। বিচার শুরুর মাত্র ২৫ দিনে বিচারকাজ শেষ করে রায় দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত বিচারের নজির স্থাপন করেছেন বিচারক। রায়ে মামলার অপর তিন আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নিহত শিশুর বোনের স্বামী সজীব শেখ, সজীব শেখের ছোট ভাই রাতুল শেখ ও সজীবের মা জাহেদা বেগম।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আছিয়া ধর্ষণ মামলার এই রায় দ্রুত বিচারের বড় সাফল্য। বিচার শেষে যার যতটুকু শাস্তি ততটুকুই হতে হয়। আবেগ দিয়ে বিচার চলে না। দোষীকে শাস্তি এবং নিরপরাধের খালাসই ন্যায়বিচার। স্বল্পসময় বিচার সম্পন্ন করার যে নজির স্থাপন হলো সেটি যেন ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বিচার বিভাগে সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের ফলে একটি নিষ্পাপ শিশুর ওপর যেভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক, পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে- তার জন্য আসামির সাজা দৃষ্টান্তমূলক অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। আমাদের দাবি এই মামলায় সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক। সে কারণে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে জাজমেন্টের কপি সংগ্রহ করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সারা দেশের মানুষ দ্রুত বিচার চেয়েছিল। সরকারের পক্ষে বলা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৯০ দিনে বিচার শেষ করা হবে। সে হিসাবে মামলার দিন থেকে হিসাব করলে আদালত এ মামলার রায় সম্পন্ন করতে আদালত সময় নিয়েছে মাত্র ৭১ দিন। অন্যদিকে ১৩ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন থেকে হিসাব করলে সময় লেগেছে ৩৫ দিন। আর অভিযোগ গঠন বা বিচারকাজ শুরুর দিন থেকে হিসাব করলে সময় লেগেছে ২৫ দিন। এত কম সময়ে মামলার রায় দেওয়া একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
এদিকে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আছিয়ার মা জায়েদা বেগম। তিনি বলেন, এ রায়ে একদমই সন্তুষ্ট না। অন্য তিনজনকে তো খালাস দেওয়া হয়েছে। তারা সবকিছুই জানত, তাদের কোনো বিচার হলো না। তারা আমার মেয়ের সঙ্গে এই কাজ করেছে। আজ ছাড়া পেয়ে কাল অন্য কারও সঙ্গে একই কাজ করবে। আমি চাই তাদের সবারই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে ৬ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশু আছিয়া। ঘটনার পর শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পরে ফরিদপুর মেডিকেল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ মারা যায় শিশুটি। এ ঘটনার পর মাগুরাসহ সারা দেশে প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৮ মার্চই অভিযুক্ত চারজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা আয়েশা আক্তার। এ ঘটনার পর পুলিশের রিমান্ড চলাকালে মামলার মূল আসামি হিটু শেখ ১৫ মার্চ মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে এ ঘটনায় তিনি একাই জড়িত বলে স্বীকার করেন। ১৩ এপ্রিল চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আলাউদ্দিন সরদার চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মাধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। ৮ মে থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের বক্তব্য ও বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১২ ও ১৩ মে যুক্তিতর্ক শেষে ১৭ মে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।