বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভিতরে-বাইরে এক ধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সরকার জনগণের ভাষা, আশা-আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। গতকাল রাতে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোয় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমান বলেন, বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছে। সবকিছু বিবেচনা করলে আমরা দেখছি সরকার কিন্তু সেই আহ্বানে সেভাবে সাড়া দেয়নি। সরকার বরং জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করে সুকৌশলে অল্প সংস্কার, বেশি সংস্কার- এ ধরনের একটি অভিনব শর্তের বেড়াজালে আটকে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তা এবং কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় কিন্তু দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে হয়তোবা অস্থিরতা বাড়ছে। প্রায় বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা দেখছি প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে জড়ো হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, দেশে এভাবে অস্থিরতা বাড়লে এ সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই।
তারেক রহমান আরও বলেন, আগামী দিনে যাতে আর কোনো ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেজন্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া, পদ্ধতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের এখনই সঠিক সময়, উপযুক্ত সময়। যদিও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা কিংবা সামর্থ্য নিয়ে এরই মধ্যে হয়তো জনমনে কিছুটা হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
তবুও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভোটে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন এখনো অব্যাহত রেখেছে।
পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে পতিত পলাতক স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা কিন্তু সহজ হবে না। লোভ-লাভের প্রলোভন থেকে মুক্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকার অচিরেই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, জুলাই হতাহতদের তালিকার চেয়ে করিডর দেওয়া বা বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়াকে বেশি প্রধান্য দিচ্ছে সরকার। করিডর বা বন্দর দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ। এ সরকারের আইনগত দিক নিয়ে প্রশ্ন নেই, তবে তারা কখনোই জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার নয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর সংস্কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, এনবিআর সংস্কার নিয়ে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা না করে তড়িঘড়ি করে সংস্কার শুরু করায় হিতে বিপরীত হয়েছে। নিয়মিত রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে চলতি বছরের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্বঘাটতি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, সরকার কোনো এলিট ক্লাব বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়। সরকার অবশ্যই একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশের নাগরিকদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক শক্তিকে উপেক্ষা করে বিরাজনীতিকরণ উৎসাহিত করলে ব্যক্তিবিশেষ লাভবান হতে পারেন; কিন্তু জনগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিরাজনীতিকরণ নয়, বরং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি।